তিনি আমাদের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

bangladesh president abdul hamid
Spread the love

আজকের সকালটা শুরু করি সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠেও সাধারণ থাকা একজন মানুষকে দিয়ে। আমার ভীষণ পছন্দের মানুষ তিনি। বলছি মো. আবদুল হামিদের কথা। দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে গতকাল রাতে তিনি শপথ নিয়েছেন। আবদুল হামিদই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, যিনি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শুরু করলেন। তিনি কিন্তু পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। আমাদের রাষ্ট্রপতি খুব সৌভাগ্যবান। কোনো ধরনের বিতর্ক ছাড়াই সসম্মানে বঙ্গভবনে প্রথম মেয়াদ শেষ করে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিলেন। আরেকটা কথা ১৯৯০ সালে গণতন্ত্র আসার পর আবদুল হামিদ বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি। সেই হিসেবে তিনি আমাদের লাকী সেভেন রাষ্ট্রপতিও।


যারা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সম্পর্কে জানেন না তাদেরকে কয়েকটা তথ্য দেই। সরকারি দপ্তরের তথ্য বলছে, ১৯৪৪ সালের পয়লা জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আমার ধারণা জন্ম তারিখটা ১ জানুয়ারি নাও হতে পারে। হয়তো স্কুলের শিক্ষকরাই মাতবরি করে ওই তারিখটা দিয়েছেন। ফলে আসল তারিখটা হারিয়ে গেছে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ নিকলী জিসি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও বিএ ডিগ্রি এবং ঢাকার সেন্ট্রাল ল’কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর তিনি আইন পেশায় নিয়োজিত হন।
আমাদের রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয় ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৮।
আমাদের রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে জেতার ভাগ্য অসাধারণ। ১৯৬৩ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের কারণে ১৯৬৮ সালে তিনি কারাবরণ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
আমাদের রাষ্ট্রপতি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মার্চের উত্তাল দিনগুলোতে তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কিশোরগঞ্জে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ মার্চ কিশোরগঞ্জ শহরের রথখোলা মাঠে ছাত্র জনসভায় হাজার হাজার লোকের উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ব্যয় নির্বাহের জন্য তিনি বাঙালি সামরিক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এপ্রিলের প্রথম দিকে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তনের কিশোরগঞ্জ, ভৈরব ও বাজিতপুর শাখা থেকে আনুমানিক ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা সংগ্রহ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ন্যাশনাল ব্যাংক শাখায় জমা রাখেন। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতের আগরতলায় চলে যান তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ থেকে আগতদের জন্য তিনি ইয়ুথ রিসিপশন ক্যাম্প চালু করেন এবং এর চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ভারতের মেঘালয়ে রিক্রুটিং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হিসেবে তৎকালীন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (মুজিব বাহিনী) সাবসেক্টর কমাণ্ডার পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতার পর তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করেন।এরপর ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬-৭৮ সালে জিয়া সরকার তাকে আবার গ্রেপ্তার করে।
যেটা বলছিলাম আমাদের রাষ্ট্রপতির নির্বাচনী ভাগ্য দারুণ৤ তিনি ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ সংসদ নির্বাচনী এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন৤ ১৯৭২, ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ প্রতিটি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন তিনি।
দারুণ মজার মানুষ রাষ্ট্রপতি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ছিলেন এবং পরে স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সফলভাবে স্পিকারের দায়িত্বপালন করেন। সংসদে তাঁর বক্তব্য যারা শুনেছেন তারা জানেন তিনি কী সুন্দর করে কথা বলেন।
আমাদের রাষ্ট্রপতি যে একজন শিক্ষানুরাগী অনেকেই আমরা সেটা জানি না। তিনি মিঠামইন তমিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিঠামইন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মিঠামইন কলেজসহ এলাকায় প্রায় ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৪টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ৩টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
শিক্ষানুরাগী হলেও আমাদের রাষ্ট্রপতি যে খুব একটা ভালো ছাত্র ছিলেন না এটা তিনি প্রায়ই নিজের মুখে বলেন।তবে তাঁর নীতি ছিলো দারুন৤ এই তো এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সাথে বৈঠকে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়ে বলতে গিয়ে স্বভাবসুলভ হাস্যরসে বলেন, ছাত্র খারাপ ছিলাম। কিন্তু গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আমার ছাত্রজীবনে নকল করি নাই।কারণ না পারলে ফেল করব; চুরি করে পাস করব, এটা হতে পারে না।
গতবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তনে বলা তার কথাগুলো কী কারও মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, “নিজের কাছেই অবাক লাগে, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। আমি ম্যাট্রিক থার্ড ডিভিশন। আইএ পাশ করছি এক সাবজেক্ট… লজিকে রেফার্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আসলাম ভর্তি হওয়ার জন্য…তখন ভর্তি তো দূরের কথা, ভর্তির ফরমটাও আমাকে দেয় নাই। বন্ধু-বান্ধব অনেকে ভর্তি হইলো, ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে তখন আমি যুক্ত।ভর্তি যখন হইতে পারলাম না, তখন দয়ালগুরুর কৃপায় গুরুদয়াল কলেজে
 (কিশোরগঞ্জে) ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেলাম। কিন্তু আল্লাহর কী লীলা খেলা বুঝলাম না, যেই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হইতে পারলাম না, সেইখানে আমি চ্যান্সেলার হইয়া আসছি ‘
সহজ ভাষায় কী অসাধারণ বক্তব্য। আবার এ বছরের জানুয়ারিতে কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বলা রাষ্ট্রপতির ভাষণ কী কেউ শুনেছেন? তাঁর স্ত্রী কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন এবং রাষ্ট্রপতির ভাসণ শুনে কেঁদেছেন৤রাষ্ট্রপতি সেদিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘কুষ্টিয়ার প্রতি আমার একটা অন্য আকর্ষণও ছিল, যার জন্য আমাকে আসতে হয়েছে। ১৯৭৬ সাল আমি ময়মনসিংহে সাত মাস জেল খাটার পরে আমাকে ট্রান্সফার করল এই কুষ্টিয়াতে। কুষ্টিয়াতে আসলাম। ১৯৭৬ সালের ১৩ জানুয়ারি আমার একটা কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। কন্যাসন্তান জন্ম নেবার দুই মাস ৫–৭ দিন পরেই আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো।অনেক সতর্কতার সঙ্গে জেলখানা থেকে চিঠি লিখতাম। জেলখানা থেকে চিঠি লিখলে সেন্সর করে দেওয়া হয়।আসলে কেটেকুটে সেন্সর করে দিত। কন্যার নাম রাখার জন্য চিঠি লিখলো স্ত্রী।অনেক চিন্তাভাবনা করে কইলাম কী নাম রাখবো, কারও সঙ্গে পরামর্শ করারও সুযোগ 
নাই। শেষ পর্যন্ত চিন্তা করলাম, এই কুষ্টিয়া ব্রিটিশ সময়ে ছিল নদীয়া জেলার। মেয়ের নাম নদীয়া করে দাও। সুতরাং যে জেলাতে বসে মেয়ের নাম রাখছি, সেই ইন্টারেস্টে মেয়েও এখানে আইসা পড়ছে।’
রাষ্ট্রপতির সাধারণ জীবনযাপনের কথা আমরা কতোটা জানি? নির্বাচন কমিশন থেকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনয়ন ফরম তুলে বঙ্গভবনে যখন তা পৌঁছানো হয রাষ্ট্রপতি লুঙ্গি আর তার উপরে একটা চাদর পরেই সেটা গ্রহণ করেন। তার এই সাধারণ জীবন আমার দারুণ লাগে। ২০১৭ সালের মার্চে কিশােরগঞ্জের মিঠামইন সফরে গিয়ে রিকশায় করে রাষ্ট্রপতির বাজার পরিদর্শনের ছবিতে মানুষ চমকিত হয়েছে।
২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর সফরে গিয়ে হোটেলের ভাড়া দিনে সাত হাজার ডলার শুনে কম দামি হোটেলে ৬০০ ডলারের স্যুইটে থেকেছেন রাষ্ট্রপতি। ফলে আগের সফরে গ্র্যান্ড হায়াতে রাষ্ট্রপতির হোটেল স্যুইটের ভাড়া যত ছিল সে সময় ২৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সবার হোটেল ভাড়া মিলেও তত হয়নি।
গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছিলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বঙ্গভবনে গেলে রাষ্ট্রপতি মুজিবকন্যাকে বলেছিলেন- ড. শিরীনকে এখানে রেখে দিন, আমাকে সংসদেই পাঠিয়ে দিন।উত্তরে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে শেখ হাসিনাও বলেছিলেন, তার চেয়ে আমি এখানে থেকে যাই, আপনি আমার জায়গায় চলে যান। শিরীনকে সরিয়ে লাভ কী? নীরব থাকেননি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। চিরচেনা হাসিটুকু দিয়ে বলেছেন, আপনার দায়িত্ব আমার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। আপনি ভোররাতে ওঠেন, নামাজ পড়েন, তিলাওয়াত করেন, পত্রিকা পাঠ করেন, সাতসকালে কার্যালয়ে ছোটেন, নানান কর্মসূচিতে অংশ নেন; সেই সঙ্গে রয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠক। এত সকালে ওঠা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত যে কোনো কাজ করাতে পারবেন। সকালে আমার ঘুমানোর সময়।
বঙ্গভবনের জীবন কেমন এ নিয়ে বিবিসিতে তাঁর একটা সাক্ষাতকার পড়েছিলাম।কয়েক জায়গায়ও দেখেছি পরে৤ তিনি খোলামেলাভাবে বলেছেন, জেল আর বঙ্গভবনের মধ্যে তিনি খুব একটা পার্থক্য দেখেন না। জেলখানায় সরকারি খাবার খেতেন, বঙ্গভবনেও সরকারি খাবার খান। তবে জেলখানার খাবার ছিল নিম্মমানের বঙ্গভবনেরটা উন্নতমানের। জেলখানায়ও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার, বঙ্গভবনেও নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী। জেলখানাটা অনেক বড়, বঙ্গভবনটাও অনেক বড়। জেলখানায়ও দর্শনার্থী গেলে ভালো লাগত, এখানেও দর্শনার্থী এলে ভালো লাগে। জেলখানায় নিরাপত্তারক্ষীরা স্যালুট দিত না, বঙ্গভবনে নিরাপত্তারক্ষীরা স্যালুট দেয়- এই যা পার্থক্য।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার এক বছর পূর্তির পর গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আবদুল হামিদ বলেন, ‘খাঁচার পাখিরে যতই ভালো খাবার দেয়া হোক, সে তো আর বনের পাখি না। আমি একটা দায়িত্ব হিসেবে এখানে এসেছি। সংসদে মনের খোরাক পেতাম, বঙ্গভবনে পাই না। মনটা অনেক কিছু চায়।’
প্রায় পাঁচ যুগ ধরে রাজনীতি করছেন আবদুল হামিদ। জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে। সবসময় মানুষের জন্য ভাবেন। নিজেই স্বীকার করেছেন রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় বের হলেই যে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয় এটা তাকে অস্বস্তি দেয়।করে বলেছেন, তিনি রাস্তায় বের হলে যতক্ষণ রাস্তা বন্ধ থাকে ততক্ষণে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা কোন রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।করে লক্ষ লক্ষ মানুষের যে সমস্যা সৃষ্টি হয় সেটাই তাকে ব্যথিত করে।
সংসদে কয়েকবার যাওয়ার কারণে রাষ্ট্রপতিকে দুই একবার কাছ থেকে দেখেছি। সংসদের সাংবাদিক এবং অন্যদের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে এতো শুনি যে বেশ ভালো লাগে। আমি তাই সুযোগ পেলেই আমাদের রাষ্ট্রপতির কথা শুনি। ভিডিও দেখি। আবার বেশ লাগে।
রাষ্ট্রপতিদের যে খুব বেশি ক্ষমতা নেই সেটাও জানেন রাষ্ট্রপতি।বেগম খালেদা জিয়া জোট নেতাদের নিয়ে একবার বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন দাবিনামা নিয়ে। তখন রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, আপনার আর প্রধানমন্ত্রীর এক জায়গায় দারুণ মিল আছে! রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতটা ছিনিয়ে নেওয়া যায় সে ব্যাপারে আপনারা দুজনই একমত হয়ে তা করেছেন। এমনকি সংসদে রাষ্ট্রপতি যে বক্তব্য দেবেন সেখানে তার একটি ভাষা বা শব্দ ব্যবহারেরও সুযোগ রাখেননি। রাষ্ট্রপতির ভাষণ আপনারাই তৈরি করেন, আপনারাই মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করেন। রাষ্ট্রপতি শুধু নিয়ম রক্ষায় সংসদে দাঁড়িয়ে তা পাঠ করেন। রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেন না। ভাষণ পাঠ করেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেদিন খালেদা জিয়াকে বলেছিলেন, সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতিকে পঙ্গু বানিয়ে রেখেছেন। একজন পঙ্গু মানুষের কাছে কী চাইতে পারেন, আর কীইবা দিতে পারে।
দেশের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে তিনি বলেছিলেন, এই ছাত্র রাজনীতি যারা করে, তাদের রেগুলার ছাত্র হতে হবে। ৫০ বছর বয়সে যদি নেতৃত্ব দেয়, তাহলে যারা পড়ে তাদের সঙ্গে এডজাস্টমেন্ট হবে না। সুতরাং ডাকসু নির্বাচন ইজ অ্যা মাস্ট। নির্বাচন না হলে তাহলে ভবিষ্যত নেতৃত্বে শূন্যতার সৃষ্টি হবে।
দেশে গণহারে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন আমােদর রাষ্ট্রপতি।এই তো গত ৬ মার্চ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, 
প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দেয়া উচিত। এ সময় অভিভাবকদের নীতি নৈতিকতা নিয়েও কতা বলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, সব বাবা-মা’ই চায়, তার সন্তান ফার্স্ট-সেকেন্ড হোক, গোল্ডেন এ প্লাস পাক। কিন্তু যখন শোনা যায় যে বাবা-মা’ই ছেলেকে নকল সরবরাহ করছে- তা কী করে সম্ভব। এর চেয়ে লজ্জাজনক-জঘন্য কাজ আর কি হতে পারে! এই বাপ আর মা তার ছেলে-মেয়েকে কী শিখাইতাছে? তারে কী বানাইতে চাইতাছে? ভবিষ্যতে তারে দিয়া কী হবে? 
দেশের কী হবে?
আমাদের রাষ্ট্রপতি কিন্তু সবসময় সব বার্তা দেয়। কিন্তু আমরা কতোটা নিতে পারি কতোটা করি সেটা আমাদের বিষয়। তবে রাজনীতি যাই হোক একজন সজ্জন মানুষ হিসেবে, সবার আপন মানুষ হিসেবে আমাদের রাষ্ট্রপতি মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন কোন সন্দেহ নেই। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা মহামান্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published.