শরিফুল হাসান
৩ ডিসেম্বর। ক্যালেণ্ডার ঘুরে প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বর আসে আর আমার ভেতরকার হাহাকারটা বাড়ে।আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন এই ৩ ডিসেম্বর। আমার পৃথিবী বদলে যাওয়ার দিন এই ৩ ডিসেম্বর।১৪ বছর আগে ২০০৮ সালের এই দিনে আমি মাকে হারিয়েছি। ব্যক্তিগত সব বিষয়, নিজের দুঃখ কষ্ট সযত্নে আড়াল করে রাখা এই আমি ৩ ডিসেম্বর এলে আর পারি না।
আমি তখন ১৪ বছর ধরে টেনে নেয়া আমার হাহাকারের পুরোনো কষ্টগুলো লিখি আবার। ২০০৮ সালের নভেম্বরের শেষ সপ্তায়, কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে আমরা মাকে স্বাভাবিক চেকআপের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করি। সুস্থ্য একজন মানুষ, উচ্চ রক্তচাপের কারনে হাসপাতালে। আমরা কেউই বুঝতেই পারিনি এভাবে হুট করে মা আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। হাসপাতালে তিনদিন সবই ভালো।
কিন্তু ১ ডিসেম্বর কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ আইসিইউতে নিতে হয়। দুদিন সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউতে থাকার পর আমার মা চলে গেলেন আমাদের চোখের জলে ভাসিয়ে, মাত্র ৪৫ বছর বয়সে। আমার মা। গল্প-উপন্যাস বা সিনেমার চরিত্রকেও হার মানবে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়নি তার বিয়ের কারনে। কিন্তু আমার মনে হয়, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও বোধহয় মায়ের মতো মানুষ হতে পারেনি অামরা। আমার মা ক্লাসের সেকেণ্ড ছিলেন।
প্রথম যে ছিলেন তিনি ডাক্তার। সেই জাহাঙ্গীর মামাসহ অনেকের কাছে শুনেছি ছোটবেলা থেকে মায়ের কথা। তারা বলতেন, তোরা ভাইবোনরা লেখাপড়ায় ভালো, কারণ তোর মা ক্লাসের সেরা ছাত্রী ছিলেন। মায়ের মনটা ছিলো বিশাল। চট্টগ্রামে আমার বাবার সরকারী চাকুরি ছিল। সরকারী কলোনীতে আমরা যে বাসায় থাকতাম সেখানে একবার যে গেছে সে মায়ের রান্না খেয়ে, তার আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতেন। মা মানুষকে খাইয়ে খুব আনন্দ পেতেন। সবসময় তিনি বাসায় মেহমান খুব পছন্দ করতেন।
দিন নেই, রাত নেই বাসায় বন্ধুবান্ধব নিয়ে যেতাম। মা কখনো বিরক্ত হয়ে বলতেন না অসময়ে কেন এতো বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসিস? আমার মায়ের মতো অসাম্প্রদায়িক মানুষ, উচ্চ মনের মানুষও আমি কম দেখেছি। নিজে নামায পড়তেন, কিন্তু বাসায় যারা আসতো হিন্দু বৌদ্ধ কোনদিন কাউকে খাওয়াতে মাকে কার্পন্য করতে দেখিনি। শুধু জানতে চাইতেন কে কী খাবে। আর গরীব বা ভিক্ষুকদের মা কখনো না বলতেন না।
ছোটবেলায় অামরা তিন ভাইবোন প্রতিযোগিতা করে ভিক্ষা দিতাম কে কার চেয়ে বেশি চাল দেবো। অামার মা কখনোই বকতেন না অামাদের। কলোনীতে থাকার কারনেই বাসায় সবসময় ভিক্ষুক আসতো। ঢাকা থেকে গিয়ে আমি মাঝে মধ্যে টানা তাদের কলিং বেল শুনে বিরক্ত হতাম। বিশেষ করে ঢাকায় এসে সুস্থ ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দিতে চাইতাম না। চট্টগ্রামে গিয়ে একইভাবে সুস্থ ভিক্ষুকদের চলে যেতে বললে তারা আমাকে উল্টো জিজ্ঞাসা করতো,
৩ ডিসেম্বর। ক্যালেণ্ডার ঘুরে প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বর আসে আর আমার ভেতরকার হাহাকারটা বাড়ে।আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন এই ৩ ডিসেম্বর। আমার পৃথিবী বদলে যাওয়ার দিন এই ৩ ডিসেম্বর। ১৪ বছর আগে ২০০৮ সালের এই দিনে আমি মাকে হারিয়েছি। ব্যক্তিগত সব বিষয়, নিজের দুঃখ কষ্ট সযত্নে আড়াল করে রাখা এই আমি ৩ ডিসেম্বর এলে আর পারি না। আমি তখন ১৪ বছর ধরে টেনে নেয়া আমার হাহাকারের পুরোনো কষ্টগুলো লিখি আবার। ২০০৮ সালের নভেম্বরের শেষ সপ্তায়, কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে আমরা মাকে স্বাভাবিক চেকআপের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করি। সুস্থ্য একজন মানুষ, উচ্চ রক্তচাপের কারনে হাসপাতালে। আমরা কেউই বুঝতেই পারিনি এভাবে হুট করে মা আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। হাসপাতালে তিনদিন সবই ভালো। কিন্তু ১ ডিসেম্বর কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ আইসিইউতে নিতে হয়। দুদিন সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউতে থাকার পর আমার মা চলে গেলেন আমাদের চোখের জলে ভাসিয়ে, মাত্র ৪৫ বছর বয়সে। আমার মা। গল্প-উপন্যাস বা সিনেমার চরিত্রকেও হার মানবে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়নি তার বিয়ের কারনে। কিন্তু আমার মনে হয়, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও বোধহয় মায়ের মতো মানুষ হতে পারেনি অামরা। আমার মা ক্লাসের সেকেণ্ড ছিলেন। প্রথম যে ছিলেন তিনি ডাক্তার। সেই জাহাঙ্গীর মামাসহ অনেকের কাছে শুনেছি ছোটবেলা থেকে মায়ের কথা। তারা বলতেন, তোরা ভাইবোনরা লেখাপড়ায় ভালো, কারণ তোর মা ক্লাসের সেরা ছাত্রী ছিলেন। মায়ের মনটা ছিলো বিশাল। চট্টগ্রামে আমার বাবার সরকারী চাকুরি ছিল। সরকারী কলোনীতে আমরা যে বাসায় থাকতাম সেখানে একবার যে গেছে সে মায়ের রান্না খেয়ে, তার আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতেন। মা মানুষকে খাইয়ে খুব আনন্দ পেতেন। সবসময় তিনি বাসায় মেহমান খুব পছন্দ করতেন। দিন নেই, রাত নেই বাসায় বন্ধুবান্ধব নিয়ে যেতাম। মা কখনো বিরক্ত হয়ে বলতেন না অসময়ে কেন এতো বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসিস? আমার মায়ের মতো অসাম্প্রদায়িক মানুষ, উচ্চ মনের মানুষও আমি কম দেখেছি। নিজে নামায পড়তেন, কিন্তু বাসায় যারা আসতো হিন্দু বৌদ্ধ কোনদিন কাউকে খাওয়াতে মাকে কার্পন্য করতে দেখিনি। শুধু জানতে চাইতেন কে কী খাবে। আর গরীব বা ভিক্ষুকদের মা কখনো না বলতেন না। ছোটবেলায় অামরা তিন ভাইবোন প্রতিযোগিতা করে ভিক্ষা দিতাম কে কার চেয়ে বেশি চাল দেবো। অামার মা কখনোই বকতেন না অামাদের। কলোনীতে থাকার কারনেই বাসায় সবসময় ভিক্ষুক আসতো। ঢাকা থেকে গিয়ে আমি মাঝে মধ্যে টানা তাদের কলিং বেল শুনে বিরক্ত হতাম। বিশেষ করে ঢাকায় এসে সুস্থ ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দিতে চাইতাম না। চট্টগ্রামে গিয়ে একইভাবে সুস্থ ভিক্ষুকদের চলে যেতে বললে তারা আমাকে উল্টো জিজ্ঞাসা করতো, আপনি কে? এই বাসার খালাম্মা কখনো না করে না জানেন না? তাদের কথায়, আমি লজ্জা পেতাম। মাঝে মাঝে এ নিয়ে মায়ের সাথে মজা করে বলতাম, মা ভিক্ষকু-গরিব এরা কি তোমার বান্ধবী? সবসময় এতো জ্বালাতন করে কেন? মা হাসতো। মা মাঝে মধ্যে টাকা চাইতেন। আমি বলতাম মা কি করবে? তিনি হাসতেন। সেই টাকা চলে যেতো গরীবদের বা তাদের শিশুদের কাছে। তাঁর জীবনে এমন দিন খুব কমই গেছে যেদিন তিনি কোন গরিব বা অসহায় মানুষকে খাওয়াননি। মানুষের জন্য মায়ের ছিলো চরম সহমর্মিতা। কারো কোন কষ্টের কথা শুনলেই মা কাঁদতেন। তাদের স্বান্ত্বনা দিতেন। এমন মানবিক মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। মা মারা যাওয়ার পর আমার ছোট বোন জানালো, কয়েকদিন আগে নাকি সকাল ১১ টার দিকে এক গরিব মানুষ আমাদের বাসায় এসে মাকে বললো তার খুব খিদে লেগেছে। ১১ টার সময় রান্না থাকার কথা নয়, তাই বাসায় ভাত নেই। কিন্তু আমার মা গরম ভাত রান্না করে তাকে খাইয়ে বিদায় করলেন। এমন হাজারো ঘটনা আছে আমার মায়ের জীবনে। গল্প করলে শেষ হবে না। আমার মা কে আমার এখন গল্প উপন্যাসের চরিত্র মনে হয়। কখনো খুব বৃষ্টি হলে ছাদে গিয়ে আমাদের সাথে বৃষ্টিতে ভিজতেন। আমাদের পাগলামিকে সমর্থন দিতেন। মানুষের পাশে থাকতে বলতেন। প্রতিবেলা রান্নার আগে মা পুরনো ভাত বাইরে কাক বা শালিককে দিতেন। মার রান্না করার সময় রান্নাঘরের সামনে সবসময় পাখি থাকতো। মা প্রচুর বই পড়তেন। তাঁর কারনেই ছোটবেলা থেকে আমরা ভাই বোন প্রচুর গল্পের বই পড়তাম। অন্যরা গল্পের বই পড়লে নাকি তাদের বাবা মা মকা দেয় আর আমার মা আমাদের উৎসাহ দিতেন। সবসময় ভালো মানুষ হতে বলতেন, মানুষের জন্য করতে বলতেন। নিজের শত সমস্যাতেও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা আর সাহস মায়ের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি। আমাদের তিন ভাইবোনের সব বন্ধুদের আম্মা নিজের সন্তানের মতো আদর করতেন। তাই তিনটা ব্যাচেরই আড্ডা খাওয়া বেড়ানোর জায়গা ছিলো আমাদের বাসা। গভীর রাত কিংবা দুপুর কতো সময় যে হুট করে কতো বন্ধুদের নিয়ে আমি বাসায় গেছি। আম্মা শুধু বলতেন একটু আগে থেকে বলে আনলে ভালো হতো। একটু খাওয়ানো যেতো ভালো করে। আমাদের পরিবারে দুঃখ কষ্ট সেভাবে ছিল না। বেশিরভাগ সময়েই ছিল আনন্দ উচ্ছলতা। কিন্তু এতো আনন্দের মধ্যেই আমার মা চলে গেলো আমাদের ছেড়ে। ভাসিয়ে দিয়ে গেল অামাদের দুঃখের সাগরে। আমরা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি সে এভাবে হঠাৎ করে চলে যাবে। ২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বর সকাল সোয়া সাতটায় মা মারা যায়। ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে আমার ছোটবোনটার কান্না দেখে আমার বুক ফেটে যাচ্ছিল কষ্টে। আমি সেই কান্না আজও ভুলতে পারিনা। আমরা দুই ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারনে খুব কম বাসায় থাকতাম। ছোট বোনটাই বাসায় বেশি থাকতো। ওর কতো আফসোস মাকে নিয়ে। ও হাসপাতালে মাকে সুস্থ্য দেখে, রাতে খাইয়ে বাবার সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়েছিল। এসে দেখে মা আর নেই। এসএসসি পাস করার পর আমি বাসা ছেড়ে কলেজ হোস্টেল, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যলেয়ের হল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পেশা আবার সাংবাদিকতা। তাই বছরের খুব কম সময় বাসায় গিয়ে থাকতে পারতাম। কিন্তু যখন যেতাম মা আমায় নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে উঠতেন। কি খাওয়াবেন কি করবেন দিশা পেতেন না। আমি ফেরার সময় মায়ের চোখ ছলছল করতো। ভাবতে কষ্ট হয়, সেসব দিন আর কখনো ফিরে আসবে না। ভাবতে কষ্ট হয় আমার জীবনে নানা ধরনের দিন আসবে, আমার সন্তান বড় হবে কিন্তু কখনো মাকে আর পাবো না। এই কথাগুলো লিখতে লিখতে আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে। গত ১৪টা বছর ধরে প্রায় প্রতিনিয়ত আমি মা হারানোর যন্ত্রণা টের পাই। প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বর এলেই আমার ভীষন কান্না পায়। খুব চিৎকার করে ডাকতে ইচ্ছে করে মা। আপনাদের যাদের মা আছে তারা কখনোই বুঝবেন না, মা না থাকার কষ্ট। যেদিন থেকে মা থাকবে না পুরো পৃথিবীটা বদলে যাবে। আমার মনে হয় এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত মা। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক মা। অনেক সময় নানান কাজের চাপে বা ব্যস্ততায় আমরা মাকে ভুলে যাই। আপনাদের যাদের মা আছে মাকে সময় দিন। মায়ের জন্য নামাজে দোয়া করবেন। পারলে নিজের মাকে রোজ ফোন করুন। মায়ের যত্ন নিন। পারলে এখুনি ফোন দিন। চিৎকার করে ডাকুন মা……
পনি কে? এই বাসার খালাম্মা কখনো না করে না জানেন না? তাদের কথায়, আমি লজ্জা পেতাম। মাঝে মাঝে এ নিয়ে মায়ের সাথে মজা করে বলতাম, মা ভিক্ষকু-গরিব এরা কি তোমার বান্ধবী? সবসময় এতো জ্বালাতন করে কেন? মা হাসতো। মা মাঝে মধ্যে টাকা চাইতেন। আমি বলতাম মা কি করবে? তিনি হাসতেন। সেই টাকা চলে যেতো গরীবদের বা তাদের শিশুদের কাছে। তাঁর জীবনে এমন দিন খুব কমই গেছে যেদিন তিনি কোন গরিব বা অসহায় মানুষকে খাওয়াননি। মানুষের জন্য মায়ের ছিলো চরম সহমর্মিতা। কারো কোন কষ্টের কথা শুনলেই মা কাঁদতেন। তাদের স্বান্ত্বনা দিতেন। এমন মানবিক মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। মা মারা যাওয়ার পর আমার ছোট বোন জানালো, কয়েকদিন আগে নাকি সকাল ১১ টার দিকে এক গরিব মানুষ আমাদের বাসায় এসে মাকে বললো তার খুব খিদে লেগেছে। ১১ টার সময় রান্না থাকার কথা নয়, তাই বাসায় ভাত নেই। কিন্তু আমার মা গরম ভাত রান্না করে তাকে খাইয়ে বিদায় করলেন। এমন হাজারো ঘটনা আছে আমার মায়ের জীবনে। গল্প করলে শেষ হবে না। আমার মা কে আমার এখন গল্প উপন্যাসের চরিত্র মনে হয়। কখনো খুব বৃষ্টি হলে ছাদে গিয়ে আমাদের সাথে বৃষ্টিতে ভিজতেন। আমাদের পাগলামিকে সমর্থন দিতেন। মানুষের পাশে থাকতে বলতেন। প্রতিবেলা রান্নার আগে মা পুরনো ভাত বাইরে কাক বা শালিককে দিতেন। মার রান্না করার সময় রান্নাঘরের সামনে সবসময় পাখি থাকতো। মা প্রচুর বই পড়তেন। তাঁর কারনেই ছোটবেলা থেকে আমরা ভাই বোন প্রচুর গল্পের বই পড়তাম। অন্যরা গল্পের বই পড়লে নাকি তাদের বাবা মা মকা দেয় আর আমার মা আমাদের উৎসাহ দিতেন। সবসময় ভালো মানুষ হতে বলতেন, মানুষের জন্য করতে বলতেন। নিজের শত সমস্যাতেও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা আর সাহস মায়ের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি। আমাদের তিন ভাইবোনের সব বন্ধুদের আম্মা নিজের সন্তানের মতো আদর করতেন। তাই তিনটা ব্যাচেরই আড্ডা খাওয়া বেড়ানোর জায়গা ছিলো আমাদের বাসা। গভীর রাত কিংবা দুপুর কতো সময় যে হুট করে কতো বন্ধুদের নিয়ে আমি বাসায় গেছি। আম্মা শুধু বলতেন একটু আগে থেকে বলে আনলে ভালো হতো। একটু খাওয়ানো যেতো ভালো করে। আমাদের পরিবারে দুঃখ কষ্ট সেভাবে ছিল না। বেশিরভাগ সময়েই ছিল আনন্দ উচ্ছলতা। কিন্তু এতো আনন্দের মধ্যেই আমার মা চলে গেলো আমাদের ছেড়ে। ভাসিয়ে দিয়ে গেল অামাদের দুঃখের সাগরে। আমরা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি সে এভাবে হঠাৎ করে চলে যাবে। ২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বর সকাল সোয়া সাতটায় মা মারা যায়। ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে আমার ছোটবোনটার কান্না দেখে আমার বুক ফেটে যাচ্ছিল কষ্টে। আমি সেই কান্না আজও ভুলতে পারিনা। আমরা দুই ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারনে খুব কম বাসায় থাকতাম। ছোট বোনটাই বাসায় বেশি থাকতো। ওর কতো আফসোস মাকে নিয়ে। ও হাসপাতালে মাকে সুস্থ্য দেখে, রাতে খাইয়ে বাবার সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়েছিল। এসে দেখে মা আর নেই। এসএসসি পাস করার পর আমি বাসা ছেড়ে কলেজ হোস্টেল, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যলেয়ের হল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পেশা আবার সাংবাদিকতা। তাই বছরের খুব কম সময় বাসায় গিয়ে থাকতে পারতাম। কিন্তু যখন যেতাম মা আমায় নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে উঠতেন। কি খাওয়াবেন কি করবেন দিশা পেতেন না। আমি ফেরার সময় মায়ের চোখ ছলছল করতো। ভাবতে কষ্ট হয়, সেসব দিন আর কখনো ফিরে আসবে না। ভাবতে কষ্ট হয় আমার জীবনে নানা ধরনের দিন আসবে, আমার সন্তান বড় হবে কিন্তু কখনো মাকে আর পাবো না। এই কথাগুলো লিখতে লিখতে আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে। গত ১৪টা বছর ধরে প্রায় প্রতিনিয়ত আমি মা হারানোর যন্ত্রণা টের পাই। প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বর এলেই আমার ভীষন কান্না পায়। খুব চিৎকার করে ডাকতে ইচ্ছে করে মা। আপনাদের যাদের মা আছে তারা কখনোই বুঝবেন না, মা না থাকার কষ্ট। যেদিন থেকে মা থাকবে না পুরো পৃথিবীটা বদলে যাবে। আমার মনে হয় এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত মা। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক মা। অনেক সময় নানান কাজের চাপে বা ব্যস্ততায় আমরা মাকে ভুলে যাই। আপনাদের যাদের মা আছে মাকে সময় দিন। মায়ের জন্য নামাজে দোয়া করবেন। পারলে নিজের মাকে রোজ ফোন করুন। মায়ের যত্ন নিন। পারলে এখুনি ফোন দিন। চিৎকার করে ডাকুন মা……