মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী প্লিজ পদত্যাগ করুন

shikkha montri
Spread the love

এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের বিন্দুমাত্র আশঙ্কা নেই বলে গতকাল দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তবে বাংলা ট্রিবিউনের খবর বলছে, আজ বাংলা প্রথম পত্রের বহুনির্বাচনি অভিক্ষার ‘খ’ সেট প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই ফেসবুকে এসেছে।অবশ্য এ বিষয়ে জানতে চাইলে সকালে মন্ত্রী সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, ‘ফেসবুকে ছড়ানো প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নের মিল নেই। আমি মিলিয়ে দেখেছি। বিষয়টি মিথ্যা ও গুজব।’ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস করলে কেউ রেহাই পাবে না। কী হবে আমি নিজেও বলতে পারি না। তবে চরম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’তবে বাংলা ট্রিবিউন দাবি করেছে, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। আমি এখন হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না।আচ্ছা প্রশ্নপত্র কী ফাঁস হয়েছে না হয়নি? হলে কী চরম ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাই।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে আমি লিখেছিলাম দেশকে কী শিক্ষা দিচ্ছে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়? এখু‌নি কেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ কর‌বেন না? ‌শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তার বিষয়ে গতকাল মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিটা পড়ে আমার মনে ফের এই দু‌টো প্রশ্নই জেগেছে।
অাচ্ছা এমন দায়সারা বিবৃতি কী করে কেউ দিতে পারে? দেশের শিক্ষার প্রধান কর্মকর্তার মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আগেই বলেছেন, তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা দুর্নীতিগ্রস্ত কী না তিনি জানেন না। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, কারও ব্যক্তিগত দুর্নীতির দায় নেবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদপ্তর। আর এই বিবৃতি দেখেই আমি অবাক হয়েছি।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, গোয়েন্দা পুলিশ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বলছে, শিক্ষা মন্ত্রীর পিওর বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁস, জিপিএ ফাইভ বিক্রি, লেকহেড গ্রামার স্কুল চালুর ব্যবস্থা করা, মন্ত্রণালয় থেকে ভুয়া সনদ সত্যায়িত করা, দুর্নীতিগ্রস্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের অনুমতি পাইয়ে দেয়া এবং টাকার বিনিময়ে সরকারি কলেজ ও স্কুল শিক্ষকদের পদোন্নতি ও বদলির ব্যবস্থা করার অভিযোগ উঠেছে।আচ্ছা এসব কাজের কোনটিই তো একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তার একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে অবশ্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন লোকজন জড়িত। কারণ তাদের স্বাক্ষরেই এসব কাজ হওয়ার কথা। কাজেই মন্ত্রণালয়ের তো বলা উচিত ছিলো এসব দুর্নীতির সাথে অন্য কেউ জড়িত কী না সেটাও তদন্ত করা হবে তা না করে উল্টো তারা বলছে দায় নেবে না।শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি বলতে চায় জিপিএ ফাইভ বিক্রি, লেকহেড গ্রামার স্কুল চালুর ব্যবস্থা করা, মন্ত্রণালয় থেকে ভুয়া সনদ সত্যায়িত করা কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের অনুমতি পাইয়ে দেয়ার কাজটি পিও একাই করেছেন- তাহলে আমার প্রশ্ন এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের থাকার দরকারটা কী? তারা বসে বসে কী করেন?গণমাধ্যমের খবর আর পুলিশ সূত্র বলছে, পিও হবার কয়েক মাসের মধ্যে মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রভাব বিস্তার করে ‘তদবির রাজ্য বানিয়ে ফেলেন মোতালেব। গড়ে তোলে ছয়জনের একটি সিন্ডিকেট। এরপর শুরু করেন স্কুল কলেজ সরকারিকরণের নামে অবৈধভাবে টাকা আদায়, এমপিওভুক্তির নামে ঘুষ, বিভিন্ন কৌশলে শিক্ষকদের কাছ থেকে মাসোহারা নেওয়া, কর্মকর্তাদের বদলি, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থায় নিয়োগ বাণিজ্য। এসব থেকে অবৈধভাবে আয় করে তিনি রাজধানীতে বহুতল ভবন বানিয়েছেন। নিজ নামে ও অন্যের নামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।এতো এতো অভিযোগ অথচ আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় নাকি কিছুই জানতেন না। ঘটনার পর তিনি বলেছেন, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা দুর্নীতিবাজ কিনা তিনি জানেন না৤ আর গতকাল শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরেছে বলে এখন তো আমরা নিশ্চিত হলাম। নিশ্চয় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। আমরা কখনো কোনো অন্যায়কারী, ঘুষ খাওয়া, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, বেআইনি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো লোককে প্রশ্রয় দেবো না। অপরাধী হলে চাকরিবিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ‘
তা মন্ত্রী মহোদয় এতোদিন আপনার আইন কোথায় ছিল?আচ্ছা মাননীয় মন্ত্রী আপনার পিও যে এতো অনিয়মের সাথে জড়িত মন্ত্রী হয়ে আপনি জানলেন না কেন? অবশ্য জানবেনই বা কীভাবে? আপনি তো আবার কিছুই জানেন না।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও আপনি জানেন না, কারা করে আপনি জানেন না, নিজের লোকজন কারা দুর্নীতি করে কিছুই আপনি জানেন না।মাননীয় মন্ত্রী আপনার পিও পশ্চিম ধানমন্ডির বি ব্লকের ৪ নং রোডের ২৬ নম্বর প্লটে সাত তলা বাড়ি করছে যার দাম অন্তত চার কোটি টাকা, অথচ আপনি জানেন না। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গীদের অবৈধ অর্থের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ এনেছে সেটাও নিশ্চয়ই আপনি জানেন না? আচ্ছা মাননীয় মন্ত্রী এগুলো সহনীয় মাত্রার দুর্নীতি কী না সেটা কী জানেন? আপনি তো বলেছিলেন ঘুষ খান তবে সহনীয় মাত্রায় তা কতো কোটি টাকা হলে সহনীয় মাত্রা বলবেন কী মাননীয় মন্ত্রী? নাকি তাও জানেন না আপনি? যে দেশের শিক্ষামন্ত্রী কিছু জানেন না সেই দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই এখন হয়ে গেছে আমরা কিছুই জানি না।মাননীয় মন্ত্রী যদ নয় বছর আগে ফিরি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আপনি যখন শিক্ষামন্ত্রী হলেন আমরা কিন্তু খুব আশাবাদী হয়েছিলাম। সাংবাদিক হিসেবে আপনার সাথে অনেকবার কথা হয়েছে। খুব বিশ্বাস করতাম আপনি দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার জন্য ভালো কিছু করবেন। কিন্তু আমার মতো পুরো জাতিই আজ হতাশ।আপনি শিক্ষামন্ত্রী হলেন, দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের জোয়ার এলো। প্রাইমারি থেকে জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি এমনকি নিয়োগ পরীক্ষা সব জায়গাতেই তো প্রশ্নপত্র ফাঁস হলো। কষ্টটা কী মন্ত্রী মহোদয় জানেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে না পারলেও আপনি উল্টো বলে বসলেন, ‘সেই ১৯৬১ সালে যখন ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছেন তখনো নাকি প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে ফাঁসের খবর দ্রুত প্রচার হয়ে যায়। এ জন্য মনে হয় অনেক বেশি।’আমি জানি না একটা দেশের শিক্ষামন্ত্রী কী করে এই ভাষায় কথা বলতে পারেন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী চলুন আপনাক অন্য দেশের একটা ঘটনা বলি।দেশটার নাম দক্ষিন কোরিয়া| ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বরের ঘটনা। দেশটির কলেজ প্রবেশিকা পরীক্ষা চলছে। ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। শুধুমাত্র দুটি প্রশ্নপত্রে ভুল হয়েছে। অভিবাবকরা এ নিয়ে অভিযোগ তুললেন। সাথে সাথেই পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানালেন পরীক্ষার শিক্ষা বোর্ড প্রধান কিম সাং-হুন।আর সেই ভুলের দায় স্বীকার করে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শিক্ষামন্ত্রী হাওয়াং উ-ইয়ে বললেন, ‘আমি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি এবং প্রশ্নপত্র তৈরি প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ দরকার বলে স্বীকার করছি। ঘটনার মূল কারণ বের করতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।’S Korean minister apologises for ‘faulty’ exam questions লিখে গুগলে সার্চ করেন পেয়ে যাবেন সেই খবর। আরও কয়েকটা ঘটনা আপনাকে বলি। পিএইচডি জালিয়াতি নিয়ে ছোট্ট এক এক ঘটনায় বছর চারেক আগে পদত্যাগ করেিছেলন জার্মানির শিক্ষামন্ত্রী কেভিন দোহিট্টি। একটা স্কুলের ঘটনা নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন ওয়েলেসের শিক্ষামন্ত্রী লিথন অ্যান্ড্রু। সারা দুনিয়ায় এমন ঘটনা অনেক আছে। অথচ একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস, সহনীয় মাত্রায় ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগে নিজের পিওর গ্রেপ্তাররে পরেও আপনার একবারের জন্য মনে হচ্ছে না আপনার পদত্যাগ করা উচিত।মাননীয় মন্ত্রী, আপনার মনে না হতে পারে, আমাদের খুব মনে হচ্ছে আপনার পদত্যাগ করা উচিত। তাতে পাবলিক কিংবা নিয়োগ সব ধরনের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে যুক্তরাও শিখবে দায়িেত্ত্বে অবহেলা করলে পদত্যাগ করতে হয়। আপনি চাইলে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে দেখেন।সবাই বলবে যে দেশের শিক্ষামন্ত্রী তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দুর্নীতি অনিয়মের খবর রাখেন না তাঁর দেশের শিক্ষামন্ত্রী থাকার কোন অধিকার নেই। অার ব্য‌ক্তিগত কর্মকর্তার গা‌ড়ি‌তে টাকা থাকায় য‌দি সুর‌ঞ্জিত সেনগুপ্ত‌কে পদত্যাগ কর‌তে হয় অাপনার পিওর দুর্নীতির জন্য কেন অাপ‌নি পদত্যাগ কর‌বেন না? আমরা আসলেই চাই আপনি পদত্যাগ করুন। তাতে দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং লাখো শিক্ষার্থী দেশের শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে অন্তত এটুকু শিখবে, বিবেকবোধ বলে একটা শব্দ আছে। তাই অনুরোধ, প্লিজ মাননীয় মন্ত্রী আপনি পদত্যাগ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.