শরিফুল হাসান
নিজ দেশের এক নাগরিক হত্যার পর এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আসার আগ্রহ হারাচ্ছেন জাপানিরা। গত দুই সপ্তাহে অন্তত পাঁচ শ জাপানি তাঁদের নির্ধারিত সফর বাতিল করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের অনেক পর্যটকও তাঁদের সফরসূচি পিছিয়ে দিচ্ছেন।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের কয়েকটি হোটেলের কর্মকর্তারা বলছেন, বছরের শেষের এই সময়টা তাঁদের হোটেলগুলোতে প্রায় শতভাগ বুকিং থাকে। কিন্তু এখন সেটি কিছুটা হলেও কমেছে। কারণ অনেকে তাঁদের নির্ধারিত সফর পিছয়ে দিচ্ছেন।
২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ১০ লাখ বিদেশি আনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পর্যটন বর্ষের সফলতা নিয়েও শঙ্কা আছে।
অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত বিদেশি আসায় খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবেই গড়ে দেড় হাজারেরও বেশি বিদেশি আসছেন। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত যেখানে ৪৫ হাজার ২৪৯ জন বিদেশি এসেছেন, এই বছরের একই সময়ে সেখানে ৪২ হাজার ৯৭ জন বিদেশি এসেছেন বাংলাদেশে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ বিদেশি বাংলাদেশে আসেন। এর মধ্যে ১৭ থেকে ২০ হাজারই জাপানি। এ ছাড়া ভারত থেকে দেড় লাখ, যুক্তরাজ্য থেকে ৮০ হাজার, চীন থেকে ৩০ হাজার, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১২ হাজার, মালয়েশিয়া থেকে ১০ হাজার, কানাডা থেকে ২০ হাজার, অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৫ হাজার ও জার্মান থেকে ১০ হাজার পর্যটক আসেন বাংলাদেশে।
বিদেশি সংস্থাগুলো এখন আসতে না চাওয়ায় এক মাস পিছিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম মেলা। আজ ১৫ অক্টোবর বসুন্ধরা সিটি কনভেনশন সেন্টারে এই মেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা ফরিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দুই বিদেশি হত্যাসহ সাম্প্রতিক ঘটনায় গত দুই সপ্তাহে ছয়–সাতটি গ্রুপ তাদের সফর বাতিল করেছে। এতে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
টোয়াবের পরিচালক ও বেঙ্গল ট্যুরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জাপানি নাগরিক হত্যার পরদিনই অন্তত ৫০ জন জাপানি সফর বাতিল করেছেন। গত দুই সপ্তাহে অন্তত ৩০০ বিদেশি তাঁদের সফর বাতিল করেছেন। অনেকে নিরাপত্তার বিষয়ে বারবার প্রশ্ন করছেন।
টোয়াবের পরিচালক ও জার্নি প্লাসের প্রধান নির্বাহী তৌফিক রহমান বলেন, এখন জাপানিরা সবচেয়ে বেশি সফর বাতিল করছেন। যুক্তরাজ্য, রাশিয়ার কয়েকটি গ্রুপ এসেছে। তবে যাঁরা আসছেন, তাঁরা নিরাপত্তা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করছেন।
আন্তর্জাতিক হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের গণমাধ্যম কর্মকর্তা সালমান কবির প্রথম আলোকে বলেন, বছরের এই সময়টা হোটেল পুরোপুরি ভর্তি থাকে। কিন্তু এখন ৮০ ভাগ রুম পূর্ণ। কাজেই কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলাই যায়।
তবে গুলশানের একটি আন্তর্জাতিক মানের হোটেলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের হোটেলে ইউরোপ ও পশ্চিমের অনেক বিদেশি থাকতেন। কিন্তু তাঁরা এখন অধিকাংশই তাঁদের সফরসূচি পরিবর্তন করছেন।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাকিম আলী মনে করেন, এখনো পরিস্থিতি ততটা খারাপ হয়নি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, জাপানিরা বাদে অধিকাংশই তাঁদের সফর বাতিল করেননি। অনেকেই তাঁদের সফরসূচি পরিবর্তন করছেন। তবে এর চেয়ে অনেক বেশি খারাপ অবস্থা ছিল অবরোধের সময়।
জানতে চাইলে বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সবাইকে আশ্বস্ত করছি, কোনো সমস্যা হবে না। যারা বিদেশি আনছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকেও একই বার্তা দিতে অনুরোধ করছি।’