বাংলাদেশের বন্ধু, যুদ্ধ শিশুদের বন্ধু, মানবতার বন্ধু মাদার তেরেসা

mother teresa
Spread the love

নীল পাড়ের সাদা শাড়িতে তিনি এসেছিলেন ভারতবর্ষে। এসেছিলেন তিনি বিপন্ন মানুষের আশার আলো হয়ে। এই সমাজ যারা ছিলো অচ্ছুত, অবহেলিত, আজীবন সেইসব মানুষের সেবা করেছেন তিনি। ছিলেন বাংলাদেশের বন্ধু। বিংশ শতাব্দীর মহৎপ্রাণ এই মানুষটার নাম মাদার তেরেসা। নিজের সব চাওয়া পাওয়া ভুলে পুরো একটা জীবনই যে মানবসেবায় কাটিয়ে দেওয়া যায় সেটা প্রমাণ করেছিলেন মাদার তেরেসা। আর সে কারণেই তিনি বলতে পেরেছিলেন, যে জীবন অন্য মানুষের জীবনের জন্য যাপন করা হয় না সেই জীবন কোন জীবনই নয়।

Mother Teresa

১৯১০ সালে মেসিডোনিয়ায় জন্ম তেরেসার। তার আসল নাম ছিল আনিয়েজ গঞ্জে বয়াজিউ। কিন্তু মাদার তেরেসা নামেই সারা দুনিয়া তাকে চেনে। তাঁর বাবা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়সে বাবাকে হারায় তেরেসা। নানা প্রতিকূলতায় বড় হন। সেই কঠিন সময়েও তার মা তাকে শেখান, “অন্যদের অভুক্ত রেখে কখনো এক লোকমা খাবারও মুখে তুলো না। আর জেনো, তাদের মধ্যে অনেকে হয়তো আমাদের আত্মীয় না, কিন্তু সকল মানুষই আমাদের আপন, আমাদের নিজের”।

শৈশবে মায়ের বলা এই কথাগুলোকে জীবন দর্শন বানিয়েছিলেন তেরেসার। ১৯২৮ সালে মাত্র আঠারো বছর বয়সে ঘর ছেড়ে পৃথিবীর পথে পা বাড়ান এগনেস, নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করেন মানবতার সেবার জন্য। ১৯২৯ সালে ভারতবর্ষের দার্জিলিংয়ে আসেন তিনি। তেরেসা কখনোই জাত-ধর্ম-বর্ণের সীমানায় নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। তিনি সবসময় ঘোষণা করে গেছেন যে প্রকৃত ঈশ্বরপ্রীতি রয়েছে সকল মানুষের প্রতি ভালোবাসায়।

মানুষের প্রতি ভালোবাসা যে সবচেয়ে জরুরী সেটা আজীবন বারবার বলেছেন তেরেসা। তাঁর কথায়, “রুটির ক্ষুধা মেটানোর চেয়ে অনেক বেশি কঠিন স্নেহের ক্ষুধা মেটানো”। তাঁর এই গভীর জীবনবোধের জন্যই হয়তো তিনি তাঁর সেবা ও স্নেহ কোন সীমানা দ্বারা আবদ্ধ রাখেননি। ১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি মিশনারিজ অফ চ্যারিটি নামে একটি সেবাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। রাস্তা থেকে তুলে আনা শিশুদের এনে তিনি গড়ে তোলেন শিশু ভবন। যাদের কেউ স্পর্শ করতেন না আজীবন সেই কুষ্ঠরোগীদের সেবা করেছেন তিনি। সারাজীবন তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে, দারিদ্র্যপীড়িত আফ্রিকায়, যুদ্ধআক্রান্ত মুসলিম দেশগুলোতে পৌঁছাতে থাকে তাঁর স্নেহের আশীর্বাদময় স্পর্শ, এসে পৌঁছায় বাংলাদেশেও।

১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মানুষের পাশে। একাত্তরের ডিসেম্বরে মাদার তেরেসা খুলনা ও ঢাকার কয়েকটি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পাকসেনাদের তান্ডব তাকে আহত করে। সব ক্যাম্পে পাকসেনারা দিনের পর দিন বাংলাদেশী নারীদের ওপর অত্যাচার করে আসছিল। এসব দেখে ঢাকায় তিনি খোলেন ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজ’-এর একটি শাখা। তখন বেশির ভাগ যুদ্ধশিশুকে দেখা হতো ঘৃণার চোখে, তাদের ফেলে দেওয়া হতো ডাস্টবিনে। মাদার তেরেসা ওই সময় পরম মমতায় যুদ্ধ শিশুদের কোলে নিতে থাকেন। তাদের পাঠিয়ে দেন কলকাতা, ফ্রান্স ও সুইডেনে। সেদিন তিনি সেই উদ্যোগ না নিলে যুদ্ধশিশুদের ঠিকানা যে কোথায় হতো সৃষ্টিকর্তাই জানেন শুধু। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড়ের পরও মানুষের সেবায় তিনি এসেছিলেন এই বাংলায়।

যে নীল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে বিশ্ব ঘুরেছেন তেরেসা, আর্ত-মানবতার সেবায় নিয়োজিত হয়েছিলেন সেই শাড়ি এখন মিশনারিজ অব চ্যারিটির প্রতীক। ১৯৭০-এর দশকের মধ্যেই সমাজসেবী এবং অনাথ ও আতুরজনের বন্ধু হিসেবে তাঁর খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি তাঁর সেবাকার্যের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন। ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। মাদার টেরিজার মৃত্যুর সময় বিশ্বের ১২৩টি রাষ্ট্রে এইচআইভি/এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষার চিকিৎসাকেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম ও বিদ্যালয়সহ মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র বিদ্যমান ছিল।
আর্ত-মানবতার সেবায় অবিসংবাদিত নাম মাদার তেরেসা। যে নীল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে বিশ্ব ঘুরেছেন, আর্ত-মানবতার সেবায় নিয়োজিত হয়েছিলেন, সেই শাড়ি এখন মিশনারিজ অব চ্যারিটির প্রতীক।

নীল পাড়ের সাদা শাড়িতে তিনি এসেছিলেন ভারতবর্ষে। এসেছিলেন তিনি বিপন্ন মানুষের আশার আলো হয়ে। এই সমাজ যারা ছিলো অচ্ছুত, অবহেলিত, আজীবন সেইসব মানুষের সেবা করেছেন তিনি। ছিলেন বাংলাদেশের বন্ধু। বিংশ শতাব্দীর মহৎপ্রাণ এই মানুষটার নাম মাদার তেরেসা। নিজের সব চাওয়া পাওয়া ভুলে পুরো একটা জীবনই যে মানবসেবায় কাটিয়ে দেওয়া যায় সেটা প্রমাণ করেছিলেন মাদার তেরেসা। আর সে কারণেই তিনি বলতে পেরেছিলেন, যে জীবন অন্য মানুষের জীবনের জন্য যাপন করা হয় না সেই জীবন কোন জীবনই নয়।

১৯১০ সালে মেসিডোনিয়ায় জন্ম তেরেসার। তার আসল নাম ছিল আনিয়েজ গঞ্জে বয়াজিউ। কিন্তু মাদার তেরেসা নামেই সারা দুনিয়া তাকে চেনে। তাঁর বাবা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়সে বাবাকে হারায় তেরেসা। নানা প্রতিকূলতায় বড় হন। সেই কঠিন সময়েও তার মা তাকে শেখান, “অন্যদের অভুক্ত রেখে কখনো এক লোকমা খাবারও মুখে তুলো না। আর জেনো, তাদের মধ্যে অনেকে হয়তো আমাদের আত্মীয় না, কিন্তু সকল মানুষই আমাদের আপন, আমাদের নিজের”।

শৈশবে মায়ের বলা এই কথাগুলোকে জীবন দর্শন বানিয়েছিলেন তেরেসার। ১৯২৮ সালে মাত্র আঠারো বছর বয়সে ঘর ছেড়ে পৃথিবীর পথে পা বাড়ান এগনেস, নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করেন মানবতার সেবার জন্য। ১৯২৯ সালে ভারতবর্ষের দার্জিলিংয়ে আসেন তিনি। তেরেসা কখনোই জাত-ধর্ম-বর্ণের সীমানায় নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। তিনি সবসময় ঘোষণা করে গেছেন যে প্রকৃত ঈশ্বরপ্রীতি রয়েছে সকল মানুষের প্রতি ভালোবাসায়।

মানুষের প্রতি ভালোবাসা যে সবচেয়ে জরুরী সেটা আজীবন বারবার বলেছেন তেরেসা। তাঁর কথায়, “রুটির ক্ষুধা মেটানোর চেয়ে অনেক বেশি কঠিন স্নেহের ক্ষুধা মেটানো”। তাঁর এই গভীর জীবনবোধের জন্যই হয়তো তিনি তাঁর সেবা ও স্নেহ কোন সীমানা দ্বারা আবদ্ধ রাখেননি। ১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি মিশনারিজ অফ চ্যারিটি নামে একটি সেবাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। রাস্তা থেকে তুলে আনা শিশুদের এনে তিনি গড়ে তোলেন শিশু ভবন। যাদের কেউ স্পর্শ করতেন না আজীবন সেই কুষ্ঠরোগীদের সেবা করেছেন তিনি। সারাজীবন তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে, দারিদ্র্যপীড়িত আফ্রিকায়, যুদ্ধআক্রান্ত মুসলিম দেশগুলোতে পৌঁছাতে থাকে তাঁর স্নেহের আশীর্বাদময় স্পর্শ, এসে পৌঁছায় বাংলাদেশেও।

১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মানুষের পাশে। একাত্তরের ডিসেম্বরে মাদার তেরেসা খুলনা ও ঢাকার কয়েকটি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পাকসেনাদের তান্ডব তাকে আহত করে। সব ক্যাম্পে পাকসেনারা দিনের পর দিন বাংলাদেশী নারীদের ওপর অত্যাচার করে আসছিল। এসব দেখে ঢাকায় তিনি খোলেন ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজ’-এর একটি শাখা। তখন বেশির ভাগ যুদ্ধশিশুকে দেখা হতো ঘৃণার চোখে, তাদের ফেলে দেওয়া হতো ডাস্টবিনে। মাদার তেরেসা ওই সময় পরম মমতায় যুদ্ধ শিশুদের কোলে নিতে থাকেন। তাদের পাঠিয়ে দেন কলকাতা, ফ্রান্স ও সুইডেনে। সেদিন তিনি সেই উদ্যোগ না নিলে যুদ্ধশিশুদের ঠিকানা যে কোথায় হতো সৃষ্টিকর্তাই জানেন শুধু। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড়ের পরও মানুষের সেবায় তিনি এসেছিলেন এই বাংলায়।

যে নীল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে বিশ্ব ঘুরেছেন তেরেসা, আর্ত-মানবতার সেবায় নিয়োজিত হয়েছিলেন সেই শাড়ি এখন মিশনারিজ অব চ্যারিটির প্রতীক। ১৯৭০-এর দশকের মধ্যেই সমাজসেবী এবং অনাথ ও আতুরজনের বন্ধু হিসেবে তাঁর খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি তাঁর সেবাকার্যের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন। ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। মাদার টেরিজার মৃত্যুর সময় বিশ্বের ১২৩টি রাষ্ট্রে এইচআইভি/এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষার চিকিৎসাকেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম ও বিদ্যালয়সহ মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র বিদ্যমান ছিল।
আর্ত-মানবতার সেবায় অবিসংবাদিত নাম মাদার তেরেসা। যে নীল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে বিশ্ব ঘুরেছেন, আর্ত-মানবতার সেবায় নিয়োজিত হয়েছিলেন, সেই শাড়ি এখন মিশনারিজ অব চ্যারিটির প্রতীক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.