ভারতের মেয়ে বাংলাদেশে পাচার, নাটকীয় বিয়ে

Spread the love

শরিফুল হাসান

ভারতের জয়পুর থেকে রুবিনাকে মাত্র ছয় বছর বয়সে পাচার করা হয়েছিল। ট্রেন, বাস, এরপর লঞ্চে করে আনা হয় বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায়। তাঁকে গৃহকর্মীর কাজ করতে হয়েছে অনেক বাড়িতে। ১০ বছর ধরে কাজ করছেন ঢাকায়। একপর্যায়ে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে এক তরুণের সঙ্গে। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন তাঁকে। আর যাঁর বাড়িতে কাজ করতেন, তিনি করেছেন অপহরণের মামলা। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে সব ঘটনা। রুবিনার আকুতি, তিনি ফিরে যেতে চান মা-বাবার কাছে।

রুবিনা আক্তারের বয়স এখন ১৯ বছর। তিনি এখন ঢাকার মিরপুরের শাহআলী থানা এলাকার পারুল আহমেদের বাসায় আছেন। ১০ বছর ধরে এই বাসাতেই কাজ করছেন তিনি। গোয়েন্দা পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার বাঁশবাড়ি গুচ্ছগ্রামের মমতাজ বেগম (৫৭) ছয় বছর বয়সে রুবিনাকে ভারত থেকে পাচার করে এনেছিলেন।

পাচার হওয়া রুবিনার ছোটবেলার ছবি (মমতাজের কোলে বায়ে) সংগৃহীত
পাচার হওয়া রুবিনার ছোটবেলার ছবি (মমতাজের কোলে বায়ে) সংগৃহীত

ছয় বছর বয়সে পাচার হলেও রুবিনার এখনো মা-বাবার নাম মনে আছে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁর বাবার নাম বাবু খান। মা নুরজাহান। জয়পুরে একটা তিনতলা বাসায় তাঁরা থাকতেন। মন্দিরের কাছে একটা স্কুলে যেতেন। তাঁর একটা ছোট ভাই আছে। রুবিনা বলেন, ‘একবারের জন্য হলেও আমি তাঁদের দেখতে চাই। দেশে ফিরতে চাই।’


কীভাবে তাঁকে পাচার করা হলো, জানতে চাইলে স্মৃতি হাতড়ে রুবিনা বলেন, ‘আমার যখন ঘুম ভাঙে, আমি তখন ট্রেনে ছিলাম। আমি তখন কাঁদতে থাকি। মমতাজ বেগম বলেন, তিনি আমার নানু হন। আমি জিজ্ঞাসা করি, আমার বাবা-মা কোথায়? তিনি বলেন, “তোমার বাবা-মায়ের কাছেই তো নিয়ে যাচ্ছি।” আমাকে প্রথমে ট্রেনে, এরপর বাসে, পরে লঞ্চে করে কোথায় যেন নিয়ে আসে। পরে বুঝি এটা বাংলাদেশ।’

রুবিনা আক্তার
রুবিনা আক্তার

পারুল আহমেদ জানান, গত বছরের ৯ নভেম্বর রুবিনাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে যাওয়ার সময় গুলিস্তান থেকে রুবিনা হারিয়ে যান। এরপর তিনি পল্টন থানায় জিডি করেন। পরে এটি অপহরণ মামলায় রূপান্তরিত হয়। পুলিশ ৬ মে রুবিনাকে ভাষানটেক থেকে উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, রুবিনা পালিয়ে গিয়ে রাশেদুল ইসলাম (২৩) নামের এক যুবককে বিয়ে করেন। রাশেদ এসি-ফ্রিজ মেরামতের কাজ করেন। উদ্ধার করার পর রুবিনাকে পারুল আহমেদের হেফাজতে দেওয়া হয়। অপহরণের মামলায় রাশেদুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
মিরপুরে পারুলের বাসায় সম্প্রতি কথা হয় রুবিনার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার গৃহকর্ত্রী পারুলের এক আত্মীয় কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আমি তাঁকে শুশ্রূষা করতে গিয়েছিলাম। হাসপাতালে থাকার সময় আমার সঙ্গে রাশেদের পরিচয়। পরস্পরকে ভালো লাগে। এরপর মাদারীপুর যাওয়ার সময় গুলিস্তান থেকে পালিয়ে গিয়ে আমরা বিয়ে করি। এরপর স্বামীর সঙ্গেই ছিলাম।’ রুবিনা বলেন, রাশেদ তাঁকে অপহরণ করেননি। তাঁকে মুক্তি দেওয়া হোক।
রুবিনাকে উদ্ধারের পর তাঁর বর্ণনা অনুসারে, ১২ মে পুলিশ মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করে। রুবিনা অপহরণ মামলার তদন্ত গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের পরিদর্শক স ম কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, রুবিনাকে পাচার করে নিয়ে আসার কথা মমতাজ স্বীকার করেছেন। তাঁর কাছ থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট, রেশন কার্ড, পরিচয়পত্র ও রুবিনার ছোটবেলার একটা ছবিও উদ্ধার করা হয়েছে। মমতাজ জানিয়েছেন, তিনি ভারতের জয়পুরের একটি বস্তিতে থাকতেন। সেখান থেকেই রুবিনাকে পাচার করে নিয়ে আসেন। শিশু পাচারের এ ঘটনায় ভাষানটেক থানায় একটি মামলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.