শরিফুল হাসান
খুলনা শহরের পাশেই ভৈরব নদ। সেই নদের পারের ছোট্ট এক উপজেলা দীঘলিয়া। সেখানকার সড়কগুলোতে যত দূর চোখ যায় পোস্টার আর পোস্টার। সাতসকালেই চায়ের দোকানগুলোতে জমজমাট আড্ডা। বিষয়বস্তু আজকের নির্বাচন।
মানুষজনের কথাবার্তা শুনে মনে হলো, যেন উপজেলা নয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনই হচ্ছে। সব দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বেজায় খুশি তাঁরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তাঁরা এমন পরিবেশ চেয়েছিলেন। না পেয়ে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সেই আক্ষেপ পূরণ করবেন। আর প্রধান দুই জোট বলছে, তাদের কাছে এই নির্বাচন জনপ্রিয়তা প্রমাণের পরীক্ষা।
খুলনার কয়রা আর দীঘলিয়ায় আজ বুধবার ভোট হচ্ছে। কয়রায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর সঙ্গে লড়াইয়ে বিএনপির ভরসা জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থী। আর দীঘলিয়ায় লড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীদের দাবি, নির্বাচনে তাঁরা জয়ী হবেন। অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোটের নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাঁরাই জয়ী হবেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাতটা। শীতের সকাল। খুলনা শহরের দৌলতপুর ঘাট থেকে নৌকায় করে ভৈরব নদ পেরিয়ে দীঘলিয়ার সেনহাটি ইউনিয়ন। মামুনুর রশিদের ভ্যানে করে রওনা হলাম দীঘলিয়া সদরে। নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কেমন জানতে চাইলে মামুনের জবাব, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে লড়াই জমেছে।’ আফসোস প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ইস্, সংসদ নির্বাচনটাও যদি এমন পরিবেশে হতো!’
দীঘলিয়ার পাটকলশ্রমিক সৌরভ হোসেন বলেন, ‘সাংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। মনে একটা আক্ষেপ আছে। এবার ভোট দিয়ে সেই আক্ষেপ পূরণ করব।’ স্থানীয় লোকজন জানালেন, দীঘলিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত একক প্রার্থী শিক্ষকনেতা খান নজরুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে লড়াই হচ্ছে তাঁরই ছাত্র বিএনপি-সমর্থিত একক প্রার্থী সাইফুর রহমানের।
আর কয়রায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত একক প্রার্থী জি এম মহাসিন রেজা। এখানে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের নেতা মাওলানা আ খ ম তমিজ উদ্দিন। এখানে আগে বিএনপির দুজন প্রার্থী থাকলেও শেষ মুহূর্তে তাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ব্যবসায়ী হারুন শেখ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত সবাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এ কারণে নির্বাচন নিয়ে সবার আগ্রহ অছে। আমরা চাই সব সময় এমন নির্বাচনই হোক।’ খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেল, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও কোস্টগার্ড। দীঘলিয়ায় দুই প্লাটুন সেনা, কয়রায় কোস্টগার্ডের ৯০ জন সদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন।