যোগ দিয়েই আ.লীগ প্রার্থী বিএনপিতে নতুন মুখ
শরিফুল হাসান
আগে কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি না করলেও তিন মাস আগে যোগ দিয়েই মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন শহিদুল ইসলাম। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মনসুর আহমেদ। পেশায় দুজনই ব্যবসায়ী।
মীরকাদিমের স্থানীয় লোকজন ও আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ২০০১ সালে পৌরসভা হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে শহিদুল ইসলাম কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে তাঁকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছিল। বিকল্পধারার প্রতিষ্ঠাতা বদরুদ্দোজা চৌধুরীরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। তবে ২০১১ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। তিন মাস আগে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফুল দিয়ে দলে যোগ দেন। তবে তাঁর অর্থ ও প্রভাব দুটোই আছে। ফলে তিনি নিজের পক্ষে মনোনয়ন আনতে পেরেছেন।
অন্যদিকে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ ওরফে কালাম থানা থেকে শুরু করে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। সর্বশেষ সম্মেলনের পর তিনি জেলা আওয়ামী লীগের মানবসম্পদ সম্পাদক হন। তবে দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন শেষ দিন।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, মনসুর আহমেদ গত নির্বাচনে তাঁর আত্মীয় বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন। ফলে দলের অনেকেই সেটি ভালোভাবে নেননি। এ ছাড়া এবার মনসুর আহমেদকে জিতিয়ে আনার জন্যই বিএনপি সেখানে শক্ত প্রার্থী দেয়নি। এসব ভেবেই তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন কেন জানতে চাইলে মনসুর আহমেদ গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। এবার দলের মনোনয়ন পাব বলে আশা করেছিলাম। দল দেয়নি। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অটল আছি।’
শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আগে কখনো সক্রিয়ভাবে রাজনীতি না করলেও আওয়ামী লীগ সমর্থন করতাম। তবে কোনো পদবিতে ছিলাম না। তিন মাস আগে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দিই। তৃণমূল ও দল আমাকে এবার সমর্থন দিয়েছে। ফলে আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মনোনয়ন বাছাই কমিটির সদস্য ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি সত্যি মনসুর আহমেদ অনেক দিন থেকেই দলের সঙ্গে আছেন। আর শহিদুল ইসলাম তিন মাস আগে যোগ দিয়েছেন। তবে আমরা প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দেখেছি, কে সেখানে জয়ী হতে পারবে। আমাদের বিবেচনায় যাকে যোগ্য মনে হয়েছে তাকেই সর্বসম্মতভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’ দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
অন্যদিকে এই পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী কে সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান ও সভাপতি জসীমউদ্দিন আলোচনায় থাকলেও তৃণমূলের নেতারা পৌর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আকতার ফারুককে প্রার্থী ঘোষণা করেন। তবে শেষ মুহূর্তে শামছুর রহমানকে বিএনপি তাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়, যিনি অতীতে কখনো রাজনীতিই করেননি।
তবে বর্তমান মেয়র শহিদুল ইসলামের সঙ্গে শামছুর রহমানের জমিজমা নিয়ে বিরোধ আছে। সেটিকে কেন্দ্র করেই তিনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। আর বিএনপিও শেষ মুহূর্তে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া এই পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হোসেন (রেনু) এখানে জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
বিদ্রোহী আছে মুন্সিগঞ্জে: মুন্সিগঞ্জ পৌরসভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের ছেলে ফয়সাল বিপ্লব দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে এখানেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ জেলা কমিটির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আনিসুজ্জামানের ছেলে জালালউদ্দিন এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
এ ছাড়া শহর বণিক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে আছেন। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ও শহর বিএনপির সভাপতি এ কে এম ইরাদত। আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেকেরই অভিযোগ, বিপ্লববিরোধী আওয়ামী লীগের একটি অংশ চায় এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। তাতে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হবে বলে তাদের ধারণা।



