শরিফুল হাসান
বাংলাদেশ থেকে কর্মী হিসেবে বিদেশে সবচেয়ে বেশি যান কুমিল্লার লোকজন। এই তালিকায় এরপর আছে চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী ও ফেনী। সবচেয়ে কম কর্মী বিদেশে যান এমন ১০টি জেলার ছয়টিই উত্তরাঞ্চলের। বাকি চার জেলা হলো শেরপুর, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি।বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির চিত্র বিশ্লেষণ করে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এসব তথ্য পেয়েছে। বিএমইটির ২০০৪ সালের জুন থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই সাড়ে পাঁচ বছরে ৬৪ জেলা থেকে জনশক্তি হিসেবে বিদেশে গেছেন মোট ২৪ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৭ জন। এর মধ্যে কুমিল্লার রয়েছেন তিন লাখ ১১ হাজার ৯৮১ জন। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম থেকে গেছেন দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫৮১ জন, তৃতীয় টাঙ্গাইল থেকে গেছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৭১২ জন। এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক লাখ ৪৭ হাজার ৭০৪ জন, ঢাকার এক লাখ ৪১ হাজার ১৭৯, চাঁদপুরের এক লাখ ১৯ হাজার ৪৯৪, নোয়াখালীর এক লাখ ১২ হাজার ৯২৭, মুন্সিগঞ্জের ৯৫ হাজার ২৬৫, নরসিংদীর ৮৬ হাজার ৪৯৬ ও ফেনীর ৮১ হাজার ১৫৪ জন বিদেশে গেছেন।এই তালিকার ১১ থেকে ২০-এ থাকা জেলাগুলো হলো: নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। এসব জেলা থেকে প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার কর্মী বিদেশে যান। তালিকায় এরপর রয়েছে যশোর, বগুড়া, সাতক্ষীরা, বরিশাল, মাদারীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও কক্সবাজার।বিএমইটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত সাড়ে পাঁঁচ বছরে সবচেয়ে কম কর্মী বিদেশে গেছেন বান্দরবান থেকে, ৬৩৩ জন। এ ছাড়া রাঙামাটির ৯০৩ জন, পঞ্চগড়ের এক হাজার ১০০, খাগড়াছড়ির এক হাজার ৭১০, লালমনিরহাটের দুই হাজার ৯১, ঠাকুরগাঁওয়ের তিন হাজার ২০২, নীলফামারীর তিন হাজার ৭৫৫, কুড়িগ্রামের চার হাজার ৯৭৩, শেরপুরের পাঁচ হাজার ৪৬৯, দিনাজপুরের ছয় হাজার ৪৮২ ও জয়পুরহাটের ছয় হাজার ৯৬৯ জন কর্মী এ সময়ে বিদেশে গেছেন।বিএমইটির পরিচালক (কম্পিউটার, গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ—সিআরএম) নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাঁরা কর্মী হিসেবে বিদেশে যাচ্ছেন তাঁদের সবার তথ্য বিএমইটিতে সংরক্ষিত থাকে। ওই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কুমিল্লা জেলার লোক বেশি যাচ্ছেন। বিভাগভিত্তিক হিসাব করলে মোট জনশক্তি রপ্তানির ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ যায় চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে উত্তরাঞ্চল। জনশক্তি রপ্তানিতে উত্তরাঞ্চলের পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, মূলত অসচেতনতা। ওই অঞ্চলের লোকজন সহজ-সরল। তাঁরা মনে করেন, বিদেশে যাওয়াটা অনেক কঠিন। তাই তাঁরা এদিকে আসেন না। একজন যখন দেখেন, তাঁর কোনো প্রতিবেশী বিদেশে যাওয়ার পর তাঁর ঘরবাড়ি ভালো হচ্ছে, তখন ওই ব্যক্তিও বিদেশে যেতে উৎসাহী হন। উত্তরাঞ্চলের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।