একজন আফসান চৌধুরী!

Spread the love

শরিফুল হাসান

আফসান চৌধুরী। নিজ নামেই যিনি বিখ্যাত! একজীবনে সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা, লেখালেখি, গবেষণা, সাহিত্য ও ইতিহাস চর্চাসহ কতো যে কী কাজ করেছেন! ব্র্যাকের পরিচালক ছিলেন আফসান ভাই, ছিলেন ইউনিসেফের বড় পদে, ছিলেন বিবিসির তারকা সাংবাদিক! কাজেই তাঁর জানার পরিধি বিশাল।

নতুন বছরে তিনি আমাদের প্রথম অতিথি আলোচক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশের উন্নয়ন, গণমানুষ, ব্র্যাক, স্যার ফজলে হাসান আবেদ, সায়মন ড্রিং, অভিবাসন, এই দেশের সাংবাদিকতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থেকে শুরু করে নানা বিষয়ের আলোচনায় আজকে আমাদের মন্ত্রমুগ্ধের মতো আটকে রেখিছিলেন তিনি। আসলে আমার ভীষণ পছন্দের মানুষদের একজন Afsan Chowdhury ভাই।

অনেক বছর ধরে তাকে জানি। এমন মেধাবী একজন মানুষ যে নির্মোহ জীবনযাপন করেন সেটা আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে। মাঝে মধ্যেই আমি তাকে দেখি হেঁটে হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোথাও হয়তো কাজে যাচ্ছেন। এই দেশের বেশিরভাগ মানুষ যেখানে অর্থ, বৃত্ত, পদ-পদবী, ক্ষমতাসহ নানা কিছু চান আফসান ভাই সেখানে তুড়ি মেরে সব পদ বা যে কোন বড় চাকরি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। বাংলাদেশের গণমানুষের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দারুণ সব কাজ করেছেন তিনি।

আসলে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কারণের কোন অভাব নেই। নানা কারণেই তাই আমি আফসান ভাইয়ের বেশ ভক্ত।ব্র্যাকে আমরা যেই মাইগ্রেশন প্রোগ্রামটায় কাজ করি তাঁর শুরটা আফসান ভাইয়ের হাত ধরে। আমার জীবনের বেশিরভাগ যেমন সাংবাদিকতায় কেটেছে আফসান ভাইয়েরও তাই। নানা কারণে মাঝে মধ্যে আমি আফসান ভাইয়ের মতো হতে চাই। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না। কারণ আফসান ভাই তো আফসান ভাই।

তবে আজকে একটা মিটিং শেষ করে সকালে অফিসে এসে আফসান ভাইকে পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত ছিলাম। আমাদের মাইগ্রেশন টীমে আমরা প্রতিমাসে চেষ্টা করি কারো না কারো কথা শুনতে। আফসান ভাইকে অনুরোধ করলাম নতুন বছরে চলেন আমাদের মাইগ্রেশন টীম আপনার কাছ থেকে কিছু শুনুক তিনি না করলেন না। আর আফসান ভাইয়ের কথা মানেই ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমান, বাংলাদেশ থেকে শুরু করে বিশ্ব কী থাকে না!

আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন, চার দশকের বেশি সময় ধরে একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে কাজ করছেন আফসান ভাই। তিনি হাসান হাফিজুর রহমানের অধীনে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র’ প্রকল্পের একজন গবেষক ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নির্মিত চার খণ্ডে বাংলাদেশ একাত্তর (২০০৭) বইগুলোর সম্পাদক ও সহ-রচয়িতা তিনি। ১৯৭১ সালের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ (২০১৮) এবং গ্রামের জনগোষ্ঠীর একাত্তরের অভিজ্ঞতার ওপর গ্রামের একাত্তর (২০১৯) বই দুইটি সম্পাদনা করেছেন তিনি। ১৯৭১ নিয়ে আফসান ভাই বিবিসির জন্য রেডিও ডকুমেন্টারি করেছেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিভাগ থেকে লেখাপড়া শেষ করে সাংবাদিকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আফসান ভাই। ইংরেজি সাময়িকী ঢাকা কুরিয়ার, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার, বিবিসিতে কাজ করেছেন। বিবিসির দারুণ তারকাখ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক ছিলেনি তিনি।

দারুণ সব কাজ করেছেন তিনি। বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রের সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে প্রায় একদশক ইউনিসেফে কাজ করেছেন। ১৯৯৮ সালে অশোকা ফেলো মনোনীত হন। প্যানোস ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালকও ছিলেন।আফসান ভাই কতো জায়গায় চাকুরি করেছেন আর কতো জায়গার চাকুরি ছেড়েছেন সেটা রীতিমতো একটা ইতিহাস হতে পারে।

মাইগ্রেশন নিয়ে কথা বলার কথা থাকলেও তিনি সিলেট থেকে লোকেদের লন্ডনে যাওয়া, আন্তর্জাতিক অভিবাসন, আফগানিস্তান থেকে তাদের পূর্বপুরুষের বাংলাদেশে আসা, স্যার ফজলে হাসান আবেদের লণ্ডন যাত্রা, সেখানে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানাভাবনা, ব্র্যাকের শুরু, ভিকারুল ইসলাম, আমিনভাই, কৈরিদা থেকে শুরু করে নানা মানুষের গল্প, বাংলাদেশের উন্নয়নের নানাধাপ, সেখানে অভিবাসী শ্রমিক থেকে শুরু করে গার্মেন্টস কর্মীদের অবদান, প্রবাসী আয় কতো বিষয়ে যে বলছিলেন! নতুন নতুন আইডিয়াও দিচ্ছিলেন।

আফসান ভাই ২০০৩ সালে ব্র্যাকের এডভোকেসি ও মানবাধিকার কর্মসূচির পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৬ সালে তাঁর হাত ধরে আলাদাভাবে মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের শুরু। সেইসব গল্পগুলোও বলছিলেন বহুদিন পর এতো মুগ্ধ হয়ে কারো লেকচার শুনলাম! অনুরোধ করলাম আফসান ভাই প্লিজ মাঝে মধ্যে আসবেন আর আপনার আলোয় আমাদের আলোকিত করবেন! অনেক অনেক ভালোবাসা আফসান ভাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.