পিএসসি !

Spread the love

শরিফুল হাসান

ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক এই ছবিগুলো! গতকালের মতো আজও পিএসসির চেয়ারম্যান মহোদয় পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে পিএসসি ছাড়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পরীক্ষার্থীরা তাঁর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। এরপরে তিনি আরেক দফায় পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে বের হন। ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক!

যাদের কাজ সারাক্ষণ পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা সেই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মুখোমুখি হবার সাহস রাখেন না। দুদিন ধরে কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে পিএসসির সামনে আর তিনি কথা না বলে পুলিশ নিয়ে চলে যাচ্ছেন।‌

আমার ২০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে পিএসসিতে এমন ঘটনা দেখিনি। আমি চেয়ারম্যান হলে এমন ঘটনার আগে পদত্যাগ করতাম। যাদের জন্য আমার কাজ তারাই যদি আমার বিরুদ্ধে যায় বা তাদের সাথে কথা বলার সাহস করতে না পারি তাহলে দায়িত্বে থাকা কেন?

মাননীয় চেয়ারম্যান আপনি শিক্ষা সচিব থাকাকালে গণহারে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে পাবলিক পরীক্ষার। পিএসসির প্রতি এই দেশের তারুণ্যের আস্থা আছে। দয়া করে প্রতিষ্ঠানটা ধ্বংস করবেন না। দেখেন, আপনাকে যে যাই পরামর্শ দিক আমার অনুরোধ আপনি এই ছেলে-মেয়েদের সাথে কথা বলুন।

আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করুন।আগেও লিখেছি, গত ১৩ বছরে যে পিএসসি শিক্ষার্থীদের আস্থার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল সেই পিএসসি আজ পরীক্ষার্থী বান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আগামী নির্বাচনের আগে দেশের তরুণদের জন্য কেউ যেন নতুন সংকট তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু কেন?

নন ক্যাডারে নিয়োগে পরীক্ষার্থী বান্ধব যে চর্চা চলছিলো আজ কেন কারা সেটা ধ্বংস করতে চাইছে? ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গত এক মাস ধরে এ নিয়ে আন্দোলন করছে। আন্দোলনের তৃতীয় দফায় তারা পিএসসির সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে। দেশে এমনিতেই অনেক সংকট।

নতুন করে আর সংকট তৈরির প্রয়োজন নেই। আশা করছি পিএসসি তাদের কথা শুনে দ্রুত সমস্যার সমাধান করবে। ততোক্ষণে আমি আপনাদের একটু অতীতে ফেরাই।প্রথম শ্রেণীর সব চাকুরিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস, নিয়োগে দুর্ণীতি ও অনিয়ম বন্ধে বিসিএস থেকে নন ক্যাডারে নিয়োগের অসাধারণ একটা পদ্ধতি করেছিলেন পিএসসির দারুণ দূরদর্শী প্রয়াত চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন।

বিষয়টি এতো অসাধারণ ছিলো যে সাবেক আরেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ দ্বিতীয় শ্রেণীর নিয়োগেও এই পদ্ধতির চর্চা শুরু করেন। আর নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বিষয়টিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন ক্যাডারের অনেক পদে বিপুল সংখ্যক ছেলে-মেয়ে বিসিএস পরীক্ষা দেয়া শুরু করে।৩৪ থেকে ৩৮ প্রতিটা বিসিএসে গড়ে দেড় থেকে ২০০০ ছেলে মেয়ে নন ক্যাডারে চাকরি পেয়েছে।

সাদিক স্যার যখন বিদায় নেন আমি বলেছিলাম একদিন ছেলে মেয়েরা বুঝবে অন্যদের চেয়ে কেন তিনি আলাদা। আমার কথার সত্যতা যে এতো তাড়াতাড়ি আসবে বুঝতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয় গতি হারিয়েছে একাধিক বিসিএসজটে আক্রান্ত এই পিএসসি। আসল কাজ বাদ দিয়ে নন ক্যাডারের অসাধারণ পদ্ধতিকে নিয়ে ব্যস্ত তারা। দেখে মনে হয়, বাস্তবতা সম্পর্কে তাদের ধারণা যেমন নেই ছেলে-মেয়েদের কথাও তারা ভাবে না। আচ্ছা পিএসসি কী জানে নন ক্যাডারের চাহিদা কীভাবে আসে?

প্রতিটা বিসিএসের পর ছেলেমেয়েরা যেভাবে নানা দপ্তরে দৌড়ায় সেই সম্পর্কে কতোটা জানে এই পিএসসি? তাঁরা কী জানে না নন ক্যাডার নিয়োগ না হলে একটা গোষ্ঠী খুশি? আর আজকে যে তারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পদের চাহিদা বিভাজনের কথা বলছে বর্তমান চেয়ারম্যান তাহলে কীসের ভিত্তিতে ৩৮ বিসিএস থেকে নন ক্যাডার দিলেন এ বছরের মার্চে?জানি না আসল স্বার্থ কী?

মাঝে মধ্যে ভীষণ আফসোস লাগে আমাদের কর্তাদের জন্য! কেন কী কারণে তারা এসব করেন তারা কী জানেন। নন ক্যাডারের নতুন যে পদ্ধতির কথা ভাবছে পিএসসি তাতে ছেলে মেয়েদের চাকরির পথ যেমন সংকুচিত হবে তেমনি নিয়োগ পরীক্ষার নামে বাণিজ্য বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজকের চাহিদা যদি তাঁর বছর পর নিয়োগ পায় তাহলে কতো ধরনের জটিলতা তৈরি হবে সেটা কি পিএসসি জানে?আমার বেশ মনে আছে, সাদিক স্যার বিদায় নেওয়ার আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমাকে একটা সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন।

২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সেটি ডেইলি স্টারে প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, পিএসসির প্রতি তরুণ ও চাকরিপ্রার্থীদের যে আস্থা তৈরি হয়েছে সেটি ধরে রাখতে হবে। আজকে সেই আস্থার ভয়াবহ সংকট। মাত্র দুই বছরের মাথায় এখন সেই সাক্ষাতকারটা আজ ভীষণ প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। চাইলে পড়তে পারেন।

(https://bangla.thedailystar.net/node/173773) নন ক্যাডারের নিয়োগটিকে বিশেষ সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করে বিদায়ী চেয়ারম্যান বলেছিলেন, ‘এক বিসিএস থেকে যখন আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দিলাম, যখন হাজার হাজার ছেলেমেয়ে নিয়োগ পেল সবার আগ্রহ আরও বাড়লো।

তরুণরা মনে করলো, লেখাপড়া করে বিসিএস উত্তীর্ণ হলে একটি চাকরি হবেই। আর এর ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যোগ্য কর্মকর্তা পেয়েছে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে।’আজকে সেটি অব্যাহত রাখার বদলে নতুর করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। বেড়েছে বিসিএসজট। সবকিছু মিলে ভয়াবহ সংকট।

বিস্তারিত এখানে https://www.ajkerpatrika.com/…/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6…

এই সাক্ষাৎকারটাও দেখতে পারেন।https://fb.watch/gbtlSCb1i2/

পিএসসির প্রতি অনুরোধ গত ১৪ বছরে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি যে আস্থা তৈরি হয়েছে সেই আস্থাটা ধরে রাখুন। তারুণ্যের কথা শুনুন। পিএসসি চাইলে প্রকাশ্যে কোন উম্মুক্ত অনুষ্ঠান করতে পারে।‌

সেখানে আমার গত দুই দশকের অভিজ্ঞতা থেকে কথা বলতে পারি। তারুণ্যের প্রতি অনুরোধ আলোচনা করুন। আমি বিশ্বাস করি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই পিএসসি আমাদের তারুণ্যকে বুঝবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.