পাকিস্তানের এক কারাগারে আটক ৯০ বাংলাদেশি
শরিফুল হাসান
২০১১ সালের অক্টোবরে কাজের জন্য দুবাই গিয়েছিলেন ঢাকার আশুলিয়ার মো. ফারুক। সেখানে বাংলাদেশি এক দালাল তাঁকে ভালো কাজ ও বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে ইরানে নিয়ে যান। কিন্তু ইরানের পুলিশ ফারুককে আটক করে পাকিস্তানে পাঠায়। তিনি বর্তমানে পাকিস্তানের কোয়েটার বালুচ চৈতা কারাগারে আটক রয়েছেন।দালালের খপ্পরে পড়ে ফারুকের এই দুর্ভাগ্যের কথা জানান তাঁর ভাই মোস্তফা সরকার। তিনি জানান, ফারুক টেলিফোন করে বলেছেন, এক মাস ধরে তিনি পাকিস্তানের ওই কারাগারে বন্দী রয়েছেন।প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দালাল-প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে একই অবস্থার শিকার হয়ে ফারুকের মতো ৮০-৯০ জন বাংলাদেশি এখন আটক রয়েছেন ওই কারাগারে। তাঁদের বেশির ভাগই দুবাই গিয়েছিলেন। সেখানে কাজ করতেন। কিন্তু একসময় প্রতারকদের দেখানো ভালো কাজ ও বেতনের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে গ্রিসসহ অন্য দেশে যাওয়ার পথে ইরানে ধরা পড়েন। ইরানের পুলিশ তাঁদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়। এসব বাংলাদেশির স্বজনেরা তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।মোস্তফা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারুক প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করে দুবাই গিয়েছিল। বাংলাদেশি ওই দালাল ফারুকসহ ছয়জন বাংলাদেশিকে দুবাই থেকে ইরানে নিয়ে গিয়েছিল। ছয়জনই ধরা পড়েছে।’বালুচ চৈতা কারাগারে আটক বাংলাদেশিদের মধ্যে আছেন নারায়ণগঞ্জের আরিফ হোসেন, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার হাসান মোহাম্মদ, কুষ্টিয়ার শেখপাড়ার জাহিদ। আরিফের মামা সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরিফ দুবাইয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে গ্রিসে যাওয়ার পথে ইরানে ধরা পড়ে। পরে আমি জানতে পারি, সে পাকিস্তানের জেলে আছে।’ হাসানের মা শেফালী বেগম জানান, ২০১০ সালে তাঁর ছেলে দুবাই যান। সেখানে ১৮ মাস থাকার পর ইরানে যাবেন বলে মনস্থির করেন। তাঁরা নিষেধ করলেও হাসান শোনেননি। দালালদের প্ররোচনায় ইরানে গিয়ে গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে তাঁকে পুলিশ পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়। শেফালী বেগম বলেন, ‘গত বুধবার সর্বশেষ সে ফোন করে খুব কান্নাকাটি করেছে। তার সঙ্গে আমিও কেঁদেছি। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনা হোক।’জাহিদের ভাই সোহানুর রহমান বলেন, ‘জাহিদ আড়াই বছর আগে দুবাই যায়। গ্রিসে নেওয়ার কথা বলে দালালেরা তাকে সেখান থেকে ইরানে নিয়ে গিয়েছিল। কয়েক দিন আগে সে ফোন করে বলেছে, বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ নিলে তারা ফেরত আসতে পারবে।’বালুচ চৈতা কারাগারে আটক এই বাংলাদেশিদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিচালক মোহসিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাকিস্তানের একটি কারাগারে আটক কয়েকজন বাংলাদেশির স্বজনেরা আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ওই কারাগারে ৮০ থেকে ৯০ জন বাংলাদেশি আটক আছেন। ওই বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত উদ্যোগ নেব।’