শরিফুল হাসান
মানুষের জীবনের চেয়ে এই পৃথিবীতে আর কোন কিছু মূল্যবান হতে পারে না। এই যে খেলা হবে খেলা হবে বলে বিশ্বকাপ আর ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ের দিনে নয়াপল্টনে মকবুল নামে একজন মানুষ মারা গেলেন তার দায় কে নেবে? এই যে আর্জেন্টিনার জার্সি পরেই পুলিশ অস্ত্র নিয়ে নামলো, এরপর সংঘর্ষ, একজন মানুষের প্রাণহানি, এগুলোই যদি রাজনৈতিক খেলা হয় সেই খেলা কোনভাবেই দেশ আর মানুষের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। সাংবাদিক হিসেবে আমি নানা সব বিষয়ে বিষয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছিলাম।
২০১৩ সালে যখন রাজনৈতিক সহিংসতা আর আগুন সন্ত্রাসে একের পর এক মানুষ মারা যাচ্ছিল তখন আমি ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৩ এই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষের মৃত্যু নিয়ে একটা নিউজ করি। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর করা ওই নিউজের শিরোনাম ছিল, হত্যার রাজনীতি, লাশের মিছিল।দিনের পর দিন পত্রিকা ঘাটাঘাটি করে করা ওই নিউজে লিখেছিলাম, এই দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন, হরতাল, অবরোধ, নির্বাচনী সহিংসতা এবং দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২২ বছরে প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার ৫১৯ জন মানুষ।
আর একই সময়ে কম-বেশি আহত হয়েছেন দেড় লাখ মানুষ। ২০১৩ সালের পর গত নয় বছর হিসেব করলে প্রাণহানির সংখ্যা কতো হবে আমার জানা নেই। নিউজে দেখিয়েছিলাম, প্রতিটি সরকারের শেষ বছরে, অর্থাৎ নির্বাচনী বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি মানুষ সহিংসতায় প্রাণ হারান। কিন্তু এভাবে আর কতো? দেখেন রাজনৈতিক সহিংসতায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ মারা যান। ক্ষমতায় যাওয়ার কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার রাজনীতির কারণে তাঁদের প্রাণ দিতে হয়। ওই সময়ের জাতীয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান স্যার বলেছিলেন, এমন মৃত্যুগুলো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
কোনো সভ্য সমাজে এটা চলতে পারে না। রাজনৈতিক এই সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহবান, প্লিজ আলোচনা করুন। কথা বলুন। কিন্তু দয়া করে রাজনৈতিক সহিংসতায় যাবেন না। কারণ এই দেশে যেই দলের মানুষটাই মারা যাক তিনি এই দেশের মানুষ। কারো না কারো স্বজন। আরেকটা কথা, এই ২০২২ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় কোন মানুষ মারা গেলে দিনশেষে সারা পৃথিবীর কাছে ছোট হয় বাংলাদেশ।
আমি জানি বিশ্বকাপের এই সময় আর ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জয়ের এই দিনে লোকজন খেলার স্ট্যাটাস নিয়ে মেতে থাকবে। তারপরও বিবেকের তাড়নায় লিখছি। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র ও সুশাসন ছাড়া একটা দেশ কখনোই টেকসই হয় না। সরকারি দল, বিরোধী দলসহ সব নীতি নির্ধারকদের কাছে তাই হাতজোড় করে অনুরোধ, দেশের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে সহিংসতার এই নোংরা খেলা বন্ধ করুন।



