সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া গিয়ে আটক

Spread the love

বাড়ি ফিরছেন রশিদ তবে লাশ হয়ে

শরিফুল হাসান

পরিবারের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে দেশে ফিরছেন আবদুর রশিদ (৪৫)। তবে লাশ হয়ে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার চার মাস এবং মালয়েশিয়া উপকূলে আটক হওয়ার আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর তিনি দেশে আসছেন। তিনি মারা গেছেন বন্দিশিবিরে।
মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ মাস আগে রশিদসহ হাজার খানেক লোক দালালদের মিথ্যা প্রলোভনে মালয়েশিয়াগামী একটি ট্রলারে উঠেছিলেন। কয়েক মাস সাগরে ভাসার পর একদিন দালালেরা তাঁদের ফেলে যান। এরপর জেলেদের কাছ থেকে তেল নিয়ে তাঁরা নিজেরাই ট্রলার চালিয়ে লংকাবি উপকূলে ভিড় করেন। মালয়েশিয়ার পুলিশ গত ১১ মে সেখান থেকে ৭১৬ জন বাংলাদেশিকে আটক করে। এরপর তাঁদের নেওয়া হয় বেলান্তিক বন্দিশিবিরে। ইতিমধ্যে সেখান থেকে পরিচয় যাচাই হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ বাংলাদেশি স্বজনদের কাছে ফিরে এসেছেন।
রশিদের ভাই আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ক্যাম্পে থাকা নরসিংদীর আরেক ছেলে এবং রশিদের বন্ধু আল আঠমিন জানান, রশিদ ক্যাম্পে মারা গেছেন। আমরা সেই খবর পেয়ে রশিদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চিঠি দিই।’
হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সরকারিভাবে ফেরত পাঠানো হলেও মৃত রশিদকে ফেরত পাঠানোর খরচ নিয়ে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। ফলে রশিদের লাশ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে যায়। শেষে এশিয়ার অভিবাসীদের কাজ করা বেসরকারি সংস্থা কারাম এশিয়া ও মালয়েশিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ভালোবাসি বাংলাদেশ খরচ দিতে রাজি হলে লাশ দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কারাম এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়ক হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রশিদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে কেএল ফিউনারিয়াল সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার রিঙ্গিত দিয়েছি। সোমবার (গতকাল) রাতে বিমান বাংলাদেশের মাধ্যমে তাঁর লাশ দেশে এসে পৌঁছাবে।’
হাইকমিশন এবং পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বন্দিশিবিরে আনার পর গত ৫ জুন মারা যান রশিদ। তাঁর মৃত্যুর কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে দীর্ঘদিন সাগরে ভেসে থাকা, ঠিকমতো খেতে না পারা এবং এবং দুর্বলজনিত কারণেই তিনি মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) মুশাররত জেবিন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ তাঁর মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্তসহ অন্যান্য পরীক্ষা করেছে। তবে এখনো সেই প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলে বোঝা যাবে, কীভাবে তিনি মারা গেলেন।
রশিদের বাবার নাম আফতাবউদ্দিন। বাড়ি নরসিংদী সদরের ভেলানগরে। রশিদের স্ত্রী নাছিমা বেগম। তাঁর তিন ছেলে। বড় ছেলে স্বপন মিয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি বাবার ডায়রিয়া হয়েছিল। বন্দিশিবিরে নাকি ঠিকমতো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এমনকি স্যালাইনও দেওয়া হয়নি। অসুস্থ অবস্থাতেই আমার বাবা মারা গেছেন।’
রশিদ কীভাবে মালয়েশিয়া গেলেন—জানতে চাইলে স্বপন মিয়া বলেন, ‘বাবা কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। এলাকার দালাল জমির হোসেন আব্বাকে লোভ দেখাইয়া মালয়েশিয়া নিয়ে গেছে। ২৭ মার্চ আব্বা ট্রলারে উঠেছেন। কিন্তু আমরা কিছুই জানতাম না। এক মাস পর জমির এসে বলে, “তোমার আব্বা মালয়েশিয়া গেছে। আড়াই লাখ টাকা দাও।” আমরা প্রমাণ চাইলে সে বলে তোমার আব্বার মোবাইল আমার কাছে। এরপর আমরা আড়াই লাখ টাকা দিই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.