মঠবাড়িয়ায় সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ৫

Spread the love

উল্লাসের রং মাখার বদলে হাতে ভাইয়ের রক্ত

শরিফুল হাসান 

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন নিহত বেলালের ভাই কামাল। ছবি: সাইফুল ইসলাম
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন নিহত বেলালের ভাই কামাল। ছবি: সাইফুল ইসলাম

পছন্দের প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হলে উল্লাস করবেন বলে রং কিনে পকেটে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থক মোহাম্মদ কামাল। কিন্তু সেই রঙের বদলে তাঁর হাতে লেগেছে নিজের ভাই বেলালের (৩০) রক্ত।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহত হওয়ার পর বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনতে আনতে নিথর হয়ে যান বেলাল। হাসপাতালের মর্গের সামনে কামালের আহাজারি তাই শেষই হচ্ছিল না।
বেলাল ছাড়াও মঠবাড়িয়ার ঘটনায় নিহত সোলায়মানের লাশ (১৯) ছিল মর্গে। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাসুদ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, বেলাল ও সোলায়মানকে হাসপাতালে আনার পথেই মারা গেছেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া থেকে আরও সাতজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বরিশাল মেডিকেলে আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন কিশোর। পাশাপাশি গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন স্থানীয় লোকজন।
ভাই হারানো শোকে স্তব্ধ কামাল পকেট থেকে রং বের করে বলেন, ‘এই যে দেহেন জেতলে রং মাহার লইগ্গা কেনছেলাম। এহন মোর হাতে ভাইর রক্ত।’ তিনি জানান, তাঁরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারুনুর রশিদের কর্মী। বিকেলে আওয়ামী লীগের অন্য নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁরা দুই ভাইও ছিলেন সাফা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে। এর মধ্যে হঠাৎ করেই গুলি আর গুলি। বেলাল সেই গুলিতে শেষ।

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত একজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: সাইফুল ইসলাম
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত একজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: সাইফুল ইসলাম


মঠবাড়িয়ার সংঘর্ষে আহত ইয়াছিন তুষখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। তার বাঁ পায়ে দুটি গুলি লেগেছে। চিকিৎসকেরা জানালেন, অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।
জানতে চাইলে কিশোর ইয়াছিন বলে, ‘আমরা শুনলাম নৌকা মার্কা সব জায়গায় এগিয়ে। কিন্তু সাফা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ফল দিচ্ছে না। আমরা সন্ধ্যা থেকেই সেখানে। হঠাৎ করেই বিজিবি গুলি চালাল। আমি উল্টো দিকে দৌড় দিলাম। কিন্তু গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে গেলাম।’
আহত ব্যক্তিরা জানান, ধানীসাফা ইউনিয়নের নয়টি কেন্দ্রের মধ্যে আটটিতে এক শ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারুন। স্থানীয় ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে নৌকার সাত শটি ভোট বাতিল করা হয় ব্যালটের মুড়িতে স্বাক্ষর না থাকায়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন বিকেলেই কেন্দ্র ঘেরাও করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বারবার চেষ্টা করেও তাঁদের সরাতে না পেরে প্রথমে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে আবার গুলি চালানো হয়।
সাফা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দীপাঞ্চল পাল প্রথম আলোকে জানান, তিনি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ফলাফল ঘোষণা করতে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা ফলাফল ঘোষণায় বাধা দেন। একপর্যায়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে গুলি চালানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.