পাসপোর্টের কাজে পাসপোর্টের কর্মকর্তারাই বাদ পড়ছেন!
শরিফুল হাসান
অভিজ্ঞ জনবলের অভাবে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) ও ভিসার (এমআরভি) ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে না বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো। এ সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এ কাজ দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী পদও সৃজন করে।কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের শর্তের কারণে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এই দায়িত্ব পাওয়া থেকে বাদই থাকছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলে এ দায়িত্ব পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের। প্রস্তাবটি এখন অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির কাছে যাবে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এমন হলে সেবা উন্নত করার উদ্দেশ্যই পূরণ হবে না।বর্তমানে ৪৭টি দেশে থাকা বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর মধ্যে ৩১টিতে এমআরপি ও এমআরভি কার্যক্রম আছে। তবে দূতাবাসগুলো এ ব্যাপারে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রীর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের জুনে এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একটি সারসংক্ষেপ পাঠায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের স্বাক্ষর করা ওই সারসংক্ষেপে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৮০ লাখ বাংলাদেশি আছে। এখন পর্যন্ত (সারসংক্ষেপ পাঠানো পর্যন্ত) ২৪টি মিশনে এমআরপি ও এমআরভি কার্যক্রম আছে। কূটনৈতিক দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পাসপোর্ট ও ভিসা দেওয়ার কাজ করছেন। কিন্তু অভিজ্ঞ লোকজন না থাকায় যন্ত্রগুলো পুরোপুরি ব্যবহূত হচ্ছে না। অনেক জায়গায় যন্ত্রগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। এ কারণে এসব মিশনে দক্ষ লোক দরকার। যেহেতু বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাসপোর্ট ও ভিসা-সংক্রান্ত কাজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ এবং কাজটিও তাঁদের, কাজেই তাঁদের পক্ষেই এ ব্যাপারে উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব। এ পরিপ্রেক্ষিতে ৬৬টি মিশনে প্রথম শ্রেণীর ৬৬ জন কর্মকর্তাসহ বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ৩৬৬টি পদ সৃজন করা যেতে পারে।গত বছরের ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবটিতে অনুমোদন দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মাধ্যমে এসব পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠানো হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গুরুত্ব বিবেচনায় এই মুহূর্তে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, কুয়েতসহ ১৯টি দূতাবাসে ১৯ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাসহ মোট ৭৩টি পদের অনুমোদন দেয়। এরপর সেটি যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। চলতি বছরের ১১ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় ১১টি মিশনে ১১ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাসহ ৪৪টি পদ সৃষ্টির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় শর্ত জুড়ে দেয়, প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের পদগুলোতে সিনিয়র সহকারী সচিব অথবা সমমর্যাদার কর্মকর্তারা যাবেন।পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এই শর্তের ফলে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে এমআরপি ও এমআরভির কাজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো। কারণ, পাসপোর্ট অধিদপ্তরে সিনিয়র সহকারী সচিব পদ নেই। আর সমমর্যাদার বিষয়টি পরে আসায় মূলত অন্যদের সুযোগই বেশি তৈরি হলো। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় যদি বলত পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপপরিচালক বা সহকারী পরিচালক মর্যাদার কর্মকর্তা কিংবা সমমর্যাদার কর্মকর্তারা কাজটি করবেন, তাহলেই সমস্যার সমাধান হতো। এতে দক্ষ লোক দিয়ে সেবা উন্নত করার উদ্দেশ্যও পূরণ হতো।জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল মাবুদ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।অধিদপ্তরের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ২৮, ৩০ ও ৩১তম বিসিএসে ২৭ জন এবং পিএসসির মাধ্যমে ২৬ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক হিসেবে গত এক বছরে অধিদপ্তরে নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ৩২ জনকেই গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগানো যায়নি। ৩১টি জেলায় নতুন এমআরপি কার্যক্রম শুরুর জন্য ৩১ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও সেভাবে কার্যক্রম না থাকায় তাঁরা এক অর্থে বসে আছেন।জানতে চাইলে সে সময়ের স্বরাষ্ট্রসচিব এবং বর্তমান জনপ্রশাসন সচিব আবদুস সোবহান সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যার যার মন্ত্রণালয়ের কাজ আসলে তারই করা উচিত—এমন দৃষ্টিকোণ থেকে তখন ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কারণ, পাসপোর্টের কর্মকর্তারা এমআরপি, এমআরভি কাজে দক্ষ। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় কেন এমন নির্দেশনা দিল, তা আমরা খতিয়ে দেখব। আর বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কারণ, প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদনের জন্য এটি আসবে। সেখানে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে এমন পদক্ষেপ নেব, যেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।’



