নারায়ণগঞ্জে আতঙ্ক কাটেনি, র‍্যাবে নতুন অধিনায়ক

Spread the love

শরিফুল হাসান 

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনার পর র‌্যাব, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গণবদলি করা হলেও জেলার সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কাটেনি।
গত ১০ দিনে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র‌্যাব-১১-এর অধিনায়কসহ তিন কর্মকর্তা, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তাসহ অন্তত ৯১ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) সব কর্মকর্তা রয়েছেন।
কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনের অপহরণের ঘটনায় র‌্যাবের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানা ছয় কোটি টাকা নিয়ে এই অপহরণ ও খুন করেছেন। এই অভিযোগের পর গত মঙ্গলবার তাঁদের অবসরে পাঠানো হয়।
র‌্যাব-১১-তে নতুন অধিনায়ক হিসেবে গতকাল শুক্রবার যোগ দিয়েছেন লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান। তিনি এর আগে রাজশাহীতে র‌্যাব-৫-এর অধিনায়ক ছিলেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর দুপুরে র‌্যাব-১১-এর কার্যালয়ে গিয়ে সাংবাদিকেরা বক্তব্য জানতে চাইলে আনোয়ার লতিফ খান আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে তাঁর প্রধান কাজ।
এদিকে গতকাল সিদ্ধিরগঞ্জে নূর হোসেনের আস্তানা থেকে তিন হাজার বোতল ফেনসিডিল, পাঁচটি রামদা এবং বিপুল পরিমাণ মদ ও বিয়ার উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসীকে তিনি স্বস্তি দিতে চান। সাত খুনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করা হবে। তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় কী, পুলিশ কিছুই বিবেচনা করবে না।
নারায়ণগঞ্জের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা যেসব কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, তাঁদের কারও সঙ্গে নূর হোসেন বা সন্ত্রাসীদের আর্থিক বা অন্য কোনো যোগসাজশ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন। কেবল র‌্যাব নয়, সাত খুনের ঘটনায় যদি অন্য কারও সম্পৃক্ততা বা ব্যর্থতা থাকে, সেটিও খতিয়ে দেখার দাবি জানান তাঁরা।
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় কথা হয় কলেজছাত্র রাইসুল ইসলাম, বেসরকারি চাকরিজীবী আসাদুজ্জামান, ব্যবসায়ী সাইফুল রশিদসহ অনেকের সঙ্গে। তাঁরা প্রত্যেকেই জানান, তাঁদের আতঙ্ক কাটেনি। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মহিলা পরিষদের সমাবেশেও সবাই বলেছেন, তাঁরা আতঙ্কিত।
একই কথা বললেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাত খুনের পর নারায়ণগঞ্জের মানুষ আতঙ্কে আছে। তাদের স্বস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলেই তাঁদের বদলি করা হয়েছে। নতুন যাঁরা এসেছেন, তাঁদের কাছে নারায়ণগঞ্জের মানুষের অনেক প্রত্যাশা। আশা করি, তাঁরা নারায়ণগঞ্জবাসীকে স্বস্তি দিতে পারবেন।’
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। এর দুই দিন পর জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ও র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদসহ তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল মতিন ও ফতুল্লা থানার ওসি আক্তার হোসেনকে বদলি করা হয় বৃহস্পতিবার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা ডিবির ওসি মাহাবুবুর রহমান এবং ওসি (তদন্ত) আবদুল আউয়ালকে বরিশাল রেঞ্জে বদলি করা হয়। আউয়াল সাত খুনের মামলার তদন্ত পেয়েছিলেন। কিন্তু নজরুলের পরিবার অভিযোগ করে, তিনি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর পক্ষে সুষ্ঠুভাবে মামলার তদন্ত করা সম্ভব নয়। নারায়ণগঞ্জে যোগ দেওয়া ডিবির নতুন ওসি মামুনুর রশিদকে এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়।
এরপর বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের ৮১ জন কর্মকর্তাকে একযোগে নারায়ণগঞ্জ থেকে বদলি করা হয়। তাঁদের মধ্যে দুজন পরিদর্শক, ৪০ জন উপপরিদর্শক (এসআই) এবং ৩৯ জন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রয়েছেন। তাঁরা ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এবং ডিবিতে কর্মরত ছিলেন। এসব পুলিশ কর্মকর্তাকে ঢাকা রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বদলি করা হয়।
জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেছেন, প্রশাসনিক কারণেই এই বদলি করা হয়েছে। তবে জেলা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ পুলিশের সঙ্গেই নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং অনেকেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এ কারণেই নারায়ণগঞ্জ পুলিশকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
জানতে চাইলে জেলার সাবেক পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ করেছেন, তাঁরা স্বজনদের হারিয়েছেন। কিন্তু আমরা অবহেলা করিনি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.