এক মাসেও সরকার পক্ষের সাড়া নেই

Spread the love

ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণসহ নয় বিষয়ে আলোচনা চায় স্কপ

শরিফুল হাসান


শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের বাঁচার মতো মজুরি নির্ধারণ এবং সুস্থ ট্রেড ইউনিয়ন বিকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ নয়টি মূল বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। এ জন্য ১৮ বছর পর একটি জাতীয়ভিত্তিক দাবি-দাওয়া শ্রম মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো যথাযথ সাড়া পাওয়া যায়নি। স্কপের নেতারা জানিয়েছেন, নয়টি মূল বিষয় এবং এর অধীনে আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কাছে গত ৩ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত দাবিনামা দেওয়া হয়েছে। সে সময় মন্ত্রী স্কপের নেতাদের আশ্বাস দেন, পরে তিনি এ নিয়ে কথা বলবেন। তবে এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো আলোচনার জন্য স্কপের কাউকে ডাকা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত এক মাসে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। ফলে স্কপের নেতাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারিনি। সময় পেলেই এ বিষয়ে আলোচনা হবে।’ বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে জাতীয়ভিত্তিক দাবি। ১৯৯২ সালে সর্বশেষ পাঁচ দফা দাবিনামা দেওয়া হয়েছিল। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তখন তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। ১৮ বছর পর আবার সরকারের কাছে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হলো। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব ছাড়াও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে আলোচনার জন্য বিষয়গুলো উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। স্কপ সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য যেসব বিষয় উত্থাপন করেছে, তাতে নয়টি শিরোনামে ৬০টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে মৌলিক ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা মজুরি, সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির বাস্তবায়ন, চাকরির নিরাপত্তা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধের কথা বলা হয়েছে। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় শ্রমিক লীগ, শ্রমিক দল, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন, জাতীয় শ্রমিক জোট, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোট, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ফ্রি টেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা স্কপের এই দাবিনামায় স্বাক্ষর করেছেন। স্কপের নেতারা বলছেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের বাঁচার মতো মজুরি, আইএলও কনভেনশন ৮৭ এবং ৯৮ ভিত্তিতে শ্রম আইন-২০০৬ সংশোধনসহ বিদ্যমান জাতীয় ইস্যু নিয়ে সরকারকে সুনির্দিষ্ট কতগুলো দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করে কারখানা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়ের করা মামলা সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির মেয়াদ ও জরিমানার পরিমাণ বাড়াতে বলা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে মহিলা শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় পরিবহনব্যবস্থা বাড়ানোর দাবিও করা হয়েছে। স্কপের দাবি, বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে চাল, ডাল, তেল, নুন, চিনি জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কম দামে এবং প্রয়োজনে স্থায়ী রেশন চালু করতে হবে। লিখিত দাবির মধ্যে আরও রয়েছে, প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে বন্ধ ও রুগ্ণ কারখানাগুলো চালুর উদ্যোগ, পাটসহ জাতীয় শিল্প রক্ষা ও কৃষকদের স্বার্থে কাঁচাপাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, দেশীয়ভাবে চাহিদা মেটানো সম্ভব এমন দ্রব্যের আমদানি নিষিদ্ধ, চাকরির নিরাপত্তা ও হয়রানিমূলক বদলি বন্ধ এবং সুস্থ ট্রেড ইউনিয়নের বিকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করা। এ ছাড়া সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সব ধরনের বৈষম্য দূর, প্রবাসী শ্রমিকদের বিমানবন্দরে হয়রানি বন্ধ, দেশে ফেরত আসার পর তাদের কার্যকরী সহায়তা দেওয়া এবং দূতাবাসগুলোতে শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.