আরেকটি লাশ উদ্ধার, এখনো নিখোঁজ ৬১

Spread the love

লঞ্চ উদ্ধারে যুক্ত হয়েছে ‘কপ্পা’

শরিফুল হাসান 

স্থানীয় ‘কপ্পা’ পদ্ধতিতে পিনাক-৬ উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে। লম্বা রশিতে ইট বেেঁধ দুটি ট্রলারে মুন্সীগঞ্জের লোকজন এবার নেমেছে পদ্মায়। ছবি: ফোকাস বাংলা
স্থানীয় ‘কপ্পা’ পদ্ধতিতে পিনাক-৬ উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে। লম্বা রশিতে ইট বেেঁধ দুটি ট্রলারে মুন্সীগঞ্জের লোকজন এবার নেমেছে পদ্মায়। ছবি: ফোকাস বাংলা

একে একে পেরিয়ে গেল ছয় দিন। তবুও মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি এখনো উদ্ধার করা যায়নি। এমনকি লঞ্চটির অবস্থানও নিশ্চিত করতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। ফলে লাশের জন্য স্বজনহারাদের অপেক্ষা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।

এদিকে গত ছয় দিনে আধুনিক সব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় মুন্সিগঞ্জের লোকজন স্থানীয় ‘কপ্পা’ পদ্ধতিতে পিনাক-৬ উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে। লম্বা রশিতে ইট বেঁধে দুটি ট্রলার নিয়ে তারা এবার নেমেছে পদ্মায়।

গত সোমবার কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া আসার পথে পিনাক-৬ ডুবে যায়।

উদ্ধার কার্যক্রম সীমিত
উদ্ধার কার্যক্রমের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আজ দুপুরে মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান মাওয়া পদ্মা সেতু রেস্ট হাউসে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তিনি বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পদ্মা নদীর ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সাত দিন ধরে তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিন্তু পিনাক-৬ এখনো শনাক্ত হয়নি। তবে পদ্মার তলদেশে ধাতব যে বস্তুটির ছবি পাওয়া গেছে এখন কেবল সেটিকে ঘিরেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জাহাজ কান্ডারি-২ ও জরিপ-১০ উদ্ধারকাজ চালাবে। নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিস এখন আর কাজ করবে না। তাদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিত্যক্ত করা হয়েছে। তবে প্রতিটি সংস্থার ডুবুরি দল থাকবে। এ ছাড়া লঞ্চ টেনে তোলার জন্য রুস্তম ও নির্ভীক প্রস্তুত থাকবে।

উদ্ধার কার্যক্রমে দেরি হচ্ছে কেন জানতে চাইলে সাইফুল হাসান বলেন, ‘ডুবুরিরা সাধারণত এক থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল মাত্রার স্রোত থাকলে কাজ করতে পারে। বর্তমানে পদ্মায় পাঁচ থেকে ছয় নটিক্যাল মাইল মাত্রার স্রোত রয়েছে। এ অবস্থায় ডুবুরিদের কাজ করাও ঝুঁকিপূর্ণ। নদীর স্রোত কমে আসলে ডুবুরিরা পুরোদমে কাজ করবে।’
জেলা প্রশাসক জানান, উদ্ধার কার্যক্রম গুটিয়ে আনলেও ভেসে ওঠা মৃতদেহ উদ্ধারকাজ ও নৌপথে টহল অব্যাহতভাবে চলবে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন নজরুল ইসলাম, কান্ডারি-২-এর কমান্ডার মনজুর করিম চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার কুতুবুর রহমান এবং কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ধাতব ওই বস্তুটিকে ঘিরে যে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে তাতে কতটা সাফল্য আসবে জানতে চাইলে মনজুরুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো এখনো আশাবাদী। আর সে কারণেই আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি।’

কপ্পা পদ্ধতি নিয়ে স্থানীয়রা পদ্মায়
অন্যদিকে সনাতন পদ্ধতিতে লঞ্চটি খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আশার কথা শোনাচ্ছেন মাওয়া ঘাটসংলগ্ন মেদেনীমণ্ডল এলাকার জনগণ। নাইলনের রশির মধ্যে ইট বেঁধে দুটি ট্রলার দিয়ে তাঁরা ইলিশ মাছ ধরার জাল টানার মতো করে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছেন। কেউ এই অভিযানকে বলছেন ‘টাটকা’ আবার কেউবা ‘কপ্পা’।
এই উদ্ধারকাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওয়া ফেরিঘাটের চেইন ব্যবসায়ী হাসান পাঠান। তিনি প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই এই পদ্ধতিতে ফেরিতে উঠতে গিয়ে পড়ে যাওয়া গাড়ি এমনকি ডুবে যাওয়া ট্রলারও তুলেছি। পিনাক-৬ ও আমরা তুলতে পারব বলে আশাবাদী।’ মাওয়া ঘাটের স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ খলিল ও শাহিনুর আলমও তার বক্তব্যকে সমর্থন করলেন।
একটি ট্রলারে ২০ জন করে উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছেন। প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। স্থানীয় এই লোকজনের দাবি, আরও আগে তাঁদের নামতে দিলে তাঁরা সফল হতেন। এদিকে আজ সন্ধ্যায় খবর ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় এই পদ্ধতিতেই লঞ্চটি শনাক্ত হয়েছে। তবে তার কোনো সত্যতা এখনো পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় লোকজনের এই উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান বলেন, ‘আমরা স্থানীয়দের উদ্ধার অভিযানে নামার বিষয়টি জেনেছি। তবে কোনো কিছু উদ্ধারের খবর পাইনি এখনো।’

আরেকটি লাশ উদ্ধার
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশালের মেহেদীগঞ্জ থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটে স্থাপিত জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মজিবর রহমান প্রথম আলোকে জানান, এ নিয়ে মোট ৪৬ লাশ উদ্ধার করা হলো। এর মধ্যে পুরুষ ১৯ জন, নারী ১৬ জন ও শিশু ১১টি। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন ৬১ জন।
নিখোঁজের স্বজনেরা এখনো পদ্মার পাড়ে অপেক্ষায় আছেন। তবে কবে লঞ্চ উদ্ধার হবে আর কবে লাশ মিলবে সেই প্রশ্নের উত্তর তাঁদের কেউ দিতে পারছেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.