১৬০০ বাংলাদেশির মানবেতর জীবন

Spread the love

শরিফুল হাসান

ওজার কোম্পানিতে কর্মরত কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিক l ছবি: সংগৃহীত
ওজার কোম্পানিতে কর্মরত কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিক l ছবি: সংগৃহীত

প্রায় আট মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না সৌদিপ্রবাসী ১ হাজার ৬০০ বাংলাদেশি। এসব বাংলাদেশির অনেকে অর্থাভাবে খাবারও কিনতে পারছেন না। মানবেতর দিন কাটছে তাঁদের।
সৌদি আরবের অন্যতম বড় কোম্পানি সৌদি ওজারের কর্মী এই বাংলাদেশিরা। কোম্পানিটির মালিক লেবাননের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি। ২০০৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পর বড় ছেলে সাদ হারিরি কোম্পানির দায়িত্ব নেন। আর্থিক দুরবস্থা শুরু হওয়ায় আট মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটি কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না। ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ হাজার বিদেশি কর্মী সংকটে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে জেদ্দা, দাম্মাম ও রিয়াদে অন্তত ১ হাজার ৬০০ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। সাদ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৪২ বাংলাদেশি চার থেকে পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না।
ভুক্তভোগী বাংলাদেশিদের কয়েকজন বলেন, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের বকেয়া বেতন আদায়ে সৌদি কর্তৃপক্ষকে চাপ দিচ্ছে। খোঁজখবর নিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ দূতাবাস এখনো যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। তাঁরা মরুভূমিতে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তবে সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, সমস্যা সমাধানে তাঁরা কাজ করছেন। জরুরি খাদ্যসহায়তাও দিচ্ছেন।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেছেন, সাময়িক অসুবিধা দূর করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে সৌদি আরবে ৫৩ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে।
সৌদি ওজারের নিরাপত্তা শাখায় কর্মরত মোখলেছুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এই কোম্পানিতে যাঁরা আছেন, তাঁদের অধিকাংশই ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন। কিন্তু গত বছর নভেম্বর থেকে কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। অনেকের খাবারও জুটছে না। তিনি বলেন, ‘মানবিক অবস্থা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার যেন আমাদের পাশে দাঁড়ায়।’
রাশেদুল হাসান নামের আরেক বাংলাদেশি বলেন, ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা ভারতীয়দের জন্য নিয়মিত খাবার নিয়ে আসছেন। তাঁদের বেতন পরিশোধের জন্য চাপও দিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু বাংলাদেশিদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

>*সৌদি ওজার কোম্পানিতে আট মাস বেতন নেই, খাদ্যসংকট
* আরেক কোম্পানির ১৪২ জন চার–পাঁচ মাস বেতনহীন

আরেক বাংলাদেশি সাবের আলী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ক্রমাগত পড়তে থাকায় সৌদিতে অনেক কোম্পানিতে কাজ বন্ধ হচ্ছে। বিশেষ করে নির্মাণ সংস্থাগুলো শ্রমিকদের হঠাৎ করে ছাঁটাই করছে। মাসের পর মাস বেতন না হওয়ায় অনেকে সৌদি আরব ছেড়ে দেশে চলে গেছেন।
সৌদি ওজারের দুরবস্থা নিয়ে বিবিসি, সিএনএন, আরব নিউজ, গালফ নিউজ, সৌদি গেজেটসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। এসব খবরে বলা হয়েছে, সৌদি ওজারের পরিচালক ফরিদ শাকের বকেয়া পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও পারেননি। ফলে মরুভূমির বিভিন্ন ক্যাম্পে এশিয়ার শ্রমিকদের দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা তাঁদের খাবার দিচ্ছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেক বিদেশি শ্রমিক বিক্ষোভ করছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সম্প্রতি টুইটারে ভারতীয় কর্মীদের খাবার না পাওয়ার কথা লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা আল ওয়াতন-এ বলা হয়েছে, সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়—সবাই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। সমস্যা সমাধানে সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় একটি কমিটি করে দিয়েছে। ফিলিপাইন, ফ্রান্স, ভারত, পাকিস্তান—প্রতিটি দেশই বেতন পরিশোধে সৌদি নিয়োগকর্তাদের চাপ দিচ্ছে। সৌদি ওজার ছাড়াও বিন লাদেন গ্রুপেরও একই রকম সমস্যা চলছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মিজানুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সৌদি ওজার একসময় বড় কোম্পানি ছিল। কিন্তু এখন এটি প্রায় দেউলিয়া হয়ে গেছে। ফলে ওই কোম্পানির অন্তত ১ হাজার ৬০০ বাংলাদেশি কর্মী সংকটে পড়েছেন। আমরা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছি। তাঁদের জরুরি খাদ্যসহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।’ আর কোনো প্রতিষ্ঠানে সমস্যা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাদ নামের আরেকটি কোম্পানির ১৪২ জন বাংলাদেশি চার-পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। আমরা এ ব্যাপারেও উদ্যোগ নিচ্ছি। আর কোথাও সংকটের খবর এখনো আমরা জানি না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.