সৌদি আরবে আজ থেকে অভিযান

Spread the love

সাত লাখ বাংলাদেশি ক্ষমার সুবিধা নিয়েছেন

শরিফুল হাসান

প্রায় ছয় মাস ধরে চলা সৌদি আরব সরকারের সাধারণ ক্ষমা গতকাল রোববার শেষ হয়েছে। এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সময়সীমা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানালেও সৌদি সরকার রাজি হয়নি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাঁরা বৈধ হননি, তাঁদের বিরুদ্ধে আজ সোমবার থেকে অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে দেশটি।

সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ঢাকায় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সৌদি বাদশা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করায় গত ছয় মাসে সুবিধা পেয়েছেন অন্তত সাত লাখ বাংলাদেশি। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা কাজের অনুমতিপত্র (ইকামা) ও পেশা বদল করেছেন। অবৈধ অনেক বাংলাদেশি বৈধও হয়েছেন। প্রায় ৪০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি এই সময়ে আউট পাস (বহির্গমন) নিয়ে দেশে ফিরেছেন।

দূতাবাস মনে করছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুযোগ নেননি এমন বাংলাদেশির সংখ্যা খুব বেশি হবে না। কাজেই আজ থেকে অভিযান শুরু হলেও খুব বেশি বাংলাদেশির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।

এ বছরের মে মাসে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। ১০ মে থেকে শুরু হয়ে সময় বাড়িয়ে তা ৩ নভেম্বর পর্যন্ত চলে। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে ইকামা পরিবর্তন, পেশা পরিবর্তন, যাঁরা নিয়োগকর্তার কাছ থেকে চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের বৈধ হওয়াসহ অবৈধদের দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

নির্ধারিত এই সময়ে কী পরিমাণ বাংলাদেশি বৈধ হয়েছেন জানতে চাইলে বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব (শ্রম) মিজানুর রহমান গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দু-এক দিনের মধ্যে সঠিক সংখ্যাটি বলা যাবে। তবে আমরা মনে করছি, কমবেশি সাত লাখ লোক এর সুবিধা পেয়েছেন।’

সাধারণ ক্ষমা শুরুর পর প্রায় সাড়ে তিন লাখ বাংলাদেশিকে সেবা দিয়েছে রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট। এই সময়ের মধ্যে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু, পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়েছে। ৪০ থেকে ৫০ হাজার বাংলাদেশি দেশে ফেরার জন্য আউট পাস নিয়েছেন।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশি কর্মীদের সব কাজ যেন দ্রুত করা যায়, সে জন্য বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত জনবল পাঠানো হয়েছে। সবার প্রচেষ্টায় প্রায় সাত লাখ বাংলাদেশি নানা ধরনের সুযোগ পেয়েছেন।’

পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ আরও কয়েকটি দেশ সাধারণ ক্ষমার সময়সীমা আরেকবার বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানালেও সৌদি সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে।

সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হবে অবৈধদের বিরুদ্ধে অভিযান। শুধু অবৈধরাই নন, তাঁদের যাঁরা কাজ দিয়েছেন, তাঁদেরও শাস্তি দেওয়া হবে।

সৌদি সরকারের শ্রম উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন নাসের আবুথনাইন বলেন, অভিযান পরিচালনার জন্য তাঁরা কতগুলো টিম গঠন করেছেন। রাস্তা থেকে অবৈধ লোকদের আটক করার ক্ষমতা এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, সৌদি আরবে ১৮ থেকে ২০ লাখ বাংলাদেশি আছেন। তবে সৌদি সরকারের তথ্যমতে, এই সংখ্যা ১৩ লাখ। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার সৌদি আরবে একসময় বছরে গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ লোক গেলেও গত চার বছরে মাত্র ৭০ হাজার কর্মী গেছেন দেশটিতে।

তবে প্রবাসীকল্যাণ সচিব আশা প্রকাশ করে বলেন, অবৈধদের বৈধকরণের এই প্রক্রিয়া শেষ হলে কর্মী যাওয়া বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.