সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগ পিএসসি ছয় হাজার ত্রুটিপূর্ণ আবেদন বাতিল করেছে

Spread the love

শরিফুল হাসান

সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে ছয় হাজার আবেদনপত্র বাতিল করে দিয়েছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। ছয় বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন বাতিল হয়েছে ঢাকায়। এই বিভাগে তিন হাজার ৮৯৩টি আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৭৪২টি, চট্টগ্রামে ৪৫২, খুলনায় ৫১৬, বরিশালে ২০৪ ও সিলেটে ১৬৫টি আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে।১৯ জুলাই পিএসসিতে বাতিলের এই তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। পিএসসির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মোট ১৪টি কারণে আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদনপত্র বাতিল হয়েছে পদ বা মন্ত্রণালয়ের নাম না লেখায় কিংবা ভুল লেখায়। পিএসসি কার্যালয়ে যে তালিকা টাঙানো হয়েছে, তাতে প্রার্থীদের নামের পাশে বাতিলের কারণ হিসেবে যেসব মন্তব্য লেখা আছে তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ১৪ নম্বরটি বেশি লেখা রয়েছে। অর্থাত্ পদ বা মন্ত্রণালয়ের নাম না লেখার কারণে এসব আবেদনপত্র বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া এসএসসি সনদ অনুযায়ী প্রার্থীর নাম ও পিতার নামে গরমিল থাকায়, শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই বা অবতীর্ণ হিসেবে আবেদন করেছেন, আবেদনপত্রে জন্মতারিখ উল্লেখ নেই বা ভুল লিখেছেন, বয়স বেশি অথবা কম, নির্ধারিত সময়ের পরে আবেদনপত্র পৌঁছানো, ব্যাংক ড্রাফট বা চালান ঠিক না হলে, মূল আবেদনপত্রে স্বাক্ষর না থাকায়, নির্ধারিত ফরমে কোড না থাকায়, আবেদনপত্রের সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতা সঠিকভাবে উল্লেখ না থাকায় অসংখ্য আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে। অবতীর্ণ হিসেবে প্রার্থিতা বাতিল করায় গতকাল অনেক প্রার্থীই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, সম্মান পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে যদি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়, তাহলে একটি নন-ক্যাডার পরীক্ষায় কেন অংশ নেওয়া যাবে না? আর এমন সব তুচ্ছ কারণে একজন চাকরিরত প্রার্থীকে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ না দেওয়াটা তাঁদের প্রতি অন্যায় সিদ্ধান্ত। তবে পিএসসি কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম মেনেই আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আবেদনপত্র পূরণের সময় প্রার্থীদের আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পিএসসির কর্মকর্তারা। গতকাল সোমবার পিএসসি কার্যালয়ে আসা চট্টগ্রামের এক প্রার্থী জানান, তিনি সাময়িক সনদ জমা দিয়েছিলেন। আবেদনের বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার করে লেখা ছিল, সাময়িক সনদ জমা দিলেও চলবে। সাক্ষাতের সময় মূল কাগজপত্র আনতে হবে। কিন্তু সাময়িক সনদ দেওয়ায় তাঁর আবেদনপত্রও বাতিল করা হয়েছে। বরিশালের এক প্রার্থী রিপন কুমারের আবেদনপত্র বাতিল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ এমনিতেই কম। কাজেই এভাবে তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে পরীক্ষা দিতে না দিলে আমরা কোথায় যাব?’ এ প্রসঙ্গে সরকারি কর্মকমিশনের পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, কয়েক দফা দেখার পর একজনের আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তার পরও যদি কেউ চান, এখানে এসে দেখে যেতে পারেন কেন আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে।পিএসসি বলেছে, বাতিল হওয়া তালিকায় নাম নেই এমন কেউ যদি আবেদন করার পরও প্রবেশপত্র না পেয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে পিএসসিতে দুই কপি পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি জমা দিয়ে নকল প্রবেশপত্র নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ঢাকার প্রার্থীরা আজ ২১ জুলাইয়ের মধ্যে এবং বাকি পাঁচ বিভাগের প্রার্থীরা ২২ ও ২৩ জুলাই নকল প্রবেশপত্র নিতে পারবেন।২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সহকারী উপজেলা এবং থানা শিক্ষা কর্মকর্তার মোট ২৩০টি স্থায়ী পদে নিয়োগের কথা উল্লেখ ছিল। আগামী ৩১ জুলাই এ পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এবার মোট ৭১ হাজার ৫৮৪ জন পরীক্ষা দিচ্ছেন। ঢাকার মোট ৪৫টি কেন্দ্রে এবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে ঢাকায় পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে অনেক প্রার্থীই তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল তাতে পরিষ্কার করে বলা ছিল, প্রার্থী যে স্থানে পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক, সে স্থানে অবস্থিত সরকারি কর্মকমিশনের স্থানীয় কার্যালয়েই যেন ফরম জমা দেন। সে অনুযায়ী তাঁরা যেখানে থাকেন সেখানে ফরম জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাঁদের ঢাকায় এসে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.