আওয়ামী লীগের ১৭ বিদ্রোহী প্রার্থী
শরিফুল হাসান
চাঁদপুরের চারটি পৌরসভায় মূল প্রার্থীর বাইরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রাথী আছেন ১৭ জন। এর মধ্যে শাহরাস্তি পৌরসভায় ছয়জন, কচুয়ায় পাঁচজন, ফরিদগঞ্জে চারজন এবং মতলবে দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। হাজীগঞ্জ ও ছেঙ্গারচর পৌরসভায় কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। ১৮ জানুয়ারি এসব পৌরসভায় নির্বাচন হবে। জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করার জন্য দল ও কেন্দ্র থেকে নানা রকম চেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি কাজে আসছে না। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল হক ভুঁইয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব রকম চেষ্টা করেছি। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে এসব প্রার্থীর কাছে দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রথম চিঠিতে কেন্দ্রের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। এতে অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। তবে আরও অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।’শামসুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘দ্বিতীয় চিঠিতে বিদ্রোহীদের বলা হয়, আওয়ামী লীগের জন্য আপনার অনেক অবদান আছে। কিন্তু যেহেতু দল থেকে একজন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে, কাজেই আপনি সরে দাঁড়ান। ভবিষ্যতে দল আপনাকে মূল্যায়ন করবে। এরপরও যারা সরে দাঁড়াননি তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের এই অবস্থার বিপরীতে বিএনপির কেবল শাহরাস্তি ও ফরিদগঞ্জে একজন করে বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। শাহরাস্তি: আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন ছয়জন। তাঁরা হলেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহবুব আলম চৌধুরী, থানা আওয়ামী লীগের সদস্য হুমায়নু কবির, পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য মিহিরচন্দ্র সাহা, সদস্য আনোয়ার হোসেন এবং তাঁর স্ত্রী বিলকিছ আক্তার।আর মেয়র পদে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের। বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মোস্তফা কামাল। এ ছাড়া গণফোরামের সমর্থনে এখানে নির্বাচন করছেন মুহাম্মদ সারোয়ার মোর্শেদ। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার প্রতি দলের আস্থা আছে। নির্বচানে আমি সফল হব জেনেই দল আমাকে একক প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়েছে।’আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রেজাউল করিম বলেন, ‘নেতা-কর্মী ও এলাকার জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। জনগণ আমার সঙ্গে আছে।’একই সুরে কথা বলেছেন বিদ্রোহী বাকি প্রার্থীরাও।কচুয়া: এখানে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আহসান হাবীব। পাঁচ বিদ্রোহী হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবীব, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আজাদ, সাবেক ছাত্রলীগের নেতা মোস্তফা কামাল ও আওয়ামী লীগের সদস্য গোপালচন্দ্র পোদ্দার। স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কয়েক দফা সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল হক ভুঁইয়া। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের নেতৃত্বে একটি বৈঠকও হয় কচুয়াতে। কিন্তু ওই বৈঠকে দুজন যোগ দিলেও তিন বিদ্রোহী যোগ দেননি।বিদ্রোহী মেয়র পদপ্রার্থী নুরুল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয়ভাবে যাঁকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে তাঁর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। কচুয়ার ভোটাররা আমার পক্ষে। একই রকম দাবি বাকি বিদ্রোহী প্রার্থীদেরও। কচুয়ায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. হুমায়ুন কবির প্রধান। এখানে জামায়াত সরাসরি প্রার্থী না দিলেও আবদুল গণি জামায়াত পরিচয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। হুমায়নু কবির বলেন, ‘আমাকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু জনগণ আমার সঙ্গে আছে।’ফরিদগঞ্জ: এখানে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আবদুর রহমান। বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন খান, পৌর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহাদাত মিয়া। এখানে কেন্দ্রীয়ভাবে সমঝোতার মাধ্যমে মূল প্রার্থী আবদুর রহমানকে বসিয়ে মোফাজ্জলকে সমর্থন দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু এর জন্য ১৫ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সমঝোতা ভেঙে যায়।মোফাজ্জল হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই নির্বাচন কোনো দলীয় নির্বাচন নয়। এটা জেনেশুনেই আমি জেতার লক্ষ্য নিয়ে ভোট চাইছি।’উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুবুল বাসার প্রথম আলোকে বলেন, তৃনমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মতামত নিয়েই সমঝোতার মাধ্যমে দলের একক প্রার্থী করার চেষ্টা এখনো চলছে। কারণ নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলে এখানে জেতা যাবে না।এখানে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী সফিকুল ইসলাম পাটোওয়ারি। সদ্য বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনজিল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং পৌর বিএনপির সহসভাপতি সাহাবুদ্দিন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। সাবেক পৌর প্রশাসক মনজিল হোসেন বলেন, ‘আমি প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার। প্রশাসকের দায়িত্বে থেকে আমি এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। তাই জনগণ আমাকে আবার প্রার্থী করেছে।’মতলব: এখানে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ইকবাল হোসেন পাটোয়ারি ও যুবলীগের কর্মী মোহাম্মদ মহসিন মৃধা। ইকবাল হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জনগণের প্রার্থী এবং শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব।’ একই কথা বলেছেন মোহাম্মদ মহসিন।তবে নূরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিদ্রোহীরা আমার জন্য কোনো সমস্যা নয়। আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।’এখানে বিএনপির প্রার্থী সাবেক মেয়র এনামুল হক। তিনি বলেছেন, ‘আমি অতীতে অনেক উন্নয়নকাজ করেছি। কাজেই জনগণ আমাকে মূল্যায়ন করবে।’ হাজীগঞ্জ: সাতজন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত এখানে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন তিনজন। বাকিরা দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন।এখানে মহাজোট-সমর্থিত প্রার্থী গাজী মাইনুদ্দিন। বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নান খান। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ছালেহ আহমেদের নাম থাকলেও তিনি প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।ছেঙ্গারচর: মতলব উত্তরের এই পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী নেই কোনো দলেই। এখানে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী থানা আওয়ামী লীগের সদস্য বিলাল হোসেন সরকার। বিএনপির প্রার্থী বর্তমান মেয়র আমেনা বেগম। এই দুজনের মধ্যেই এখানে নির্বাচন হবে। (প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশ, ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি এম কে মানিক পাঠান, হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি মোহাম্মদ শাহজাহান. শাহরাস্তি প্রতিনিধি মো. আবুল কালাম, মতলব দক্ষিণ প্রতিনিধি মুহাম্মদ জাকির হোসেন ও মতবল উত্তর প্রতিনিধি কামরুজ্জামান হারুন)।