শরিফুল হাসান
অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে সৌদি আরব সরকার। তবে ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু না করলে তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হবে। সৌদি গেজেট ও আরব নিউজসহ দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।২৩ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে সরকারিভাবে এই ঘোষণার কথা জানানো হয়। ঘোষণায় বলা হয়, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সৌদি আরবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকেরা ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছরের ২৩ মার্চ পর্যন্ত দেশে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন। এ জন্য দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় সৌদি আরব না ছাড়লে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।অনলাইন আরব নিউজের খবরে বলা হয়, হজ ও ওমরাহ করতে কিংবা ভ্রমণ ভিসায় এসে অনেকেই দীর্ঘ সময় সৌদি আরবে থাকছেন। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অনেকে কয়েক বছরের জন্য কাজ করতে এসে দীর্ঘদিন সৌদি আরবে থাকছেন। এসব ব্যক্তিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সৌদি আরব ছাড়তে হবে। এ জন্য যথাসময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বা ওয়াফিদিনের কাছে রিপোর্ট করতে হবে। মন্ত্রণালয় সাধারণ ক্ষমার এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে।সৌদি পত্রিকাগুলোর খবরে বলা হয়, ২৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় দিবসে পবিত্র দুটি মসজিদের রক্ষক বাদশাহ আবদুল্লাহ দেশি-বিদেশিসহ বিপুলসংখ্যক বন্দীর জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেয়।সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, এই ঘোষণার পর অবৈধ অনেক বাংলাদেশি দেশে ফিরতে পারবেন। কারণ, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা পরিবার, মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনকে দেশে ফেরত পাঠাতে পারছিলেন না। সাধারণ ক্ষমার এই ঘোষণা তাঁদের অনেক কাজে আসবে।সৌদি-প্রবাসী সাইফ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে জানান, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেক বাংলাদেশি দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার ফলে তাঁদের দেশে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি হলো।বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আসাদুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে জানান, সাধারণ ক্ষমার ব্যাপারে তাঁরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি আরব থেকে কিছু জানতে পারেননি। তবে দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) এস এম হারুন-অর-রশীদ গতকাল বিকেলে টেলিফোনে প্রথম আলোকে জানান, জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে সৌদি আরব সরকার তাদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। এটি ইতিবাচক। এ সিদ্ধান্তের ফলে অবৈধ হয়ে পড়া নাগরিকেরা দেশে ফিরতে পারবেন। এতে অনেক বাংলাদেশি উপকৃত হবেন।হারুন-অর-রশীদ বলেন, সৌদি আরবে মূলত প্রতিবেশী দেশ ইয়েমেন ও জর্ডান থেকে বেশি অবৈধ নাগরিক এসেছেন। বাংলাদেশ থেকে আগমনকারীদের সবাই বৈধভাবে এসেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত স্পন্সর নিয়ে এসে অবৈধ হয়ে পড়া ব্যক্তিরা এখন ফিরতে পারবেন। তবে তাঁদের ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হবে, তা এখনো জানানো হয়নি। সৌদি আরবে কতসংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সংখ্যা কারও পক্ষেই বলা সম্ভব নয়।