সরকারি চাকরিজীবীদের ভাতা জমিয়ে দিয়েছে বাজার

Spread the love

জমজমাট বৈশাখী কেনাকাটা

শরিফুল হাসান


শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি। কিন্তু গতকাল সেখানে দেখা গেল, নারী-পুরুষ-কিশোর-তরুণ-শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। নতুন পোশাক কিনতে এসেছেন তাঁরা। ছেলেদের পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে মেয়েদের কাপড় কিংবা বাচ্চাদের পোশাক—সবকিছুতেই আছে সাদা-লালসহ বাহারি রঙের ছোঁয়া। বুঝতে বাকি থাকে না, পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের জন্যই এই কেনাকাটা।
পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে লোকে যে কেবল নতুন কাপড়ই কিনছেন তা নয়, মুঠোফোনসহ নানা ধরনের ইলেকট্রনিক সামগ্রীও বেচাকেনা হচ্ছে। এমনকি ঘরবাড়ি সাজানোর জন্যও অনেকে কেনাকাটা করছেন। ফলে বেচাকেনা জমে উঠেছে বিপণিবিতানগুলোতে।
ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই জানালেন, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের ভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় এবার বেচাকেনা বেশি। আজিজ সুপার মার্কেটে গতকাল নিজের জন্য পাঞ্জাবি কিনতে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিজওয়ান আহমেদ। সঙ্গে এক বান্ধবীও ছিলেন। রিজওয়ান জানালেন, তিনি একটি নতুন পাঞ্জাবি কিনেছেন। তাঁর বান্ধবী একটি শাড়ি কিনেছেন। আলাপকালে তাঁরা বললেন, বাংলা নববর্ষ পুরো বাংলাদেশের একটি সর্বজনীন উৎসব। তাই তাঁরা এই উৎসবে মেতে উঠবেন।
একটি সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক স্বপন ঘরামি জানালেন, তিনি ৬ হাজার ৯০ টাকা বোনাস পেয়েছেন। ওই টাকা দিয়ে স্ত্রীকে শাড়ি, ছেলেকে একটি ফতুয়া, মেয়েকে একটি জামা কিনে দিয়েছেন আড়ং থেকে।
‘কাপড়-ই বাংলা’র স্বত্বাধিকারী এবং আজিজ সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মুরসালিন বিথুন প্রথম আলোকে বলেন, পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে তাঁর চারটি দোকানে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার কাপড় এনেছেন। এপ্রিলের ১০ দিনে যা বিক্রি করেছেন, ঈদের আগেও তেমনি বিক্রি করেন। তিনি বললেন, এই মার্কেটে ২৫৬টি কাপড়ের দোকান রয়েছে। পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে এই দোকানগুলোতে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকার কাপড় তোলা হয়েছে। এর মধ্যে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, মেয়েদের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, থ্রিপিস থেকে শুরু করে শিশু-বৃদ্ধ—সব বয়সের মানুষের পোশাক রয়েছে।
নিউমার্কেটও মঙ্গলবার বন্ধ থাকে। তবে গতকাল গিয়ে দেখা গেল, বাইরে মার্কেট বন্ধ থাকলেও ভেতরে অনেক দোকানই খোলা। নিউমার্কেটের ভেতরে ৩ নম্বর গেটের সিঁড়ির নিচে একটি দোকানে বসে চুড়ি, গয়নাসহ সাজসজ্জার নানা সামগ্রী বিক্রি করছিলেন আলাউদ্দিন।
পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে গুলশান, উত্তরা, ধানমন্ডি, আসাদগেট, মগবাজারসহ আড়ংয়ের সব কেন্দ্রে বেচাকেনা জমে উঠেছে। আড়ংয়ের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা আরাফাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গত এপ্রিলের তুলনায় তাঁদের বেচাবিক্রি শতভাগ বেড়েছে।
বসুন্ধরায় একই ছাদের নিচে দেশের শীর্ষ ১০টি ফ্যাশন হাউস নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশী দশ। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে সেখানেও নানা ধরনের নতুন পোশাক এসেছে। ক্রেতাদেরও বেশ ভিড়। তবে বসুন্ধরার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি এম এ হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে প্রচুর মানুষ এলেও কাঙ্ক্ষিত বিক্রি হয়নি। তরুণ প্রজন্ম সামর্থ্য ও সুযোগ পেলেই নতুন নতুন মুঠোফোন কিনছে। পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে তাই মুঠোফোনের দোকানগুলোতেও বেশ ভিড়। স্যামসাং ইলেকট্রনিক বাংলাদেশের মুঠোফোনের প্রধান হাসান মেহেদী বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে স্যামসাং বিক্রয়কেন্দ্রগুলো বিশেষভাবে সাজানো হয়েছিল। নববর্ষ উপলক্ষে বিক্রিও বেশ ভালো।
কেবল যে দোকানেই বিক্রি হচ্ছে তা নয়, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কেনাকাটাকে নতুন মাত্রা দিতে বিভিন্ন অনলাইন কেনাকাটার মাধ্যম বা ই-কমার্স সাইটগুলোও নানা ধরনের ছাড় দিচ্ছে। ফেসবুকেও চলছে নানা ধরনের পণ্যের বিজ্ঞাপন। সব মিলিয়ে এবার জমজমাট বৈশাখের বাজার।

Leave a Reply

Your email address will not be published.