শরিফুল হাসান
ভাগ্য ফেরাতে অবৈধভাবে গ্রিসে প্রবেশ। স্ট্রবেরির খামারে অমানবিক পরিশ্রমের পরও মিলত না বেতন। বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর মালিকপক্ষের গুলিবর্ষণে আহত হয়েছিলেন ৩৫ জন বাংলাদেশি কর্মী। এরপর শুরু হয়েছিল তাঁদের দুঃসহ যন্ত্রণার অনিশ্চিত জীবন।
অবশেষে সেই অনিশ্চয়তার অবসান হয়েছে। গ্রিস সরকার ওই ৩৫ বাংলাদেশিকে বৈধতা দিয়েছে। ১২ অক্টোবর (শনিবার) তাঁদের হাতে বৈধভাবে গ্রিসে থাকার ও কাজ করার কাগজপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ। অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ায় তাঁরা উল্লাস প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছিলেন উচ্ছ্বসিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে মানোলাদার প্রত্যন্ত এক গ্রামের স্ট্রবেরির খামারে ওই বাংলাদেশিরা কাজ করতেন। দীর্ঘদিন বেতন বকেয়া থাকায় চলতি বছরের এপ্রিলে শ্রমিকদের আন্দোলনে খামারের মালিকপক্ষের লোকজন গুলি চালান। এতে ৩৫ বাংলাদেশি আহত হন। এ ঘটনায় গ্রিসে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। পুলিশ খামারমালিক ও সুপারভাইজারকে গ্রেপ্তার করে। গ্রিস এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ওই ঘটনার সুবিচার দাবি করেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও গ্রিস সরকারকে চাপ দেয়। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রিস সরকার ওই বাংলাদেশিদের বৈধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
৩৫ বাংলাদেশির হাতে কাগজপত্র তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈধতার কাগজপত্র পেয়ে উচ্ছ্বসিত মোরশেদ চৌধুরী গতকাল সোমবার ফোনে বলেন, ‘আমি অনেক আনন্দিত। সবাই বলছে, যে কাগজ পেয়েছি তাতে করে আমাদের আর কাজে সমস্যা হবে না। ঈদের আগে এটা বিশাল উপহার।’ হবিগঞ্জের বানিয়াচং থেকে যাওয়া মোরশেদ জানান, বাংলাদেশ থেকে দুবাই, পরে সেখান থেকে অবৈধভাবে গ্রিসে এসে খুব কষ্টে ছিলেন।
একই রকম অনুভূতি জানান তোফাজ্জল হোসেন, মোহাম্মদ ফরহাদ, কামরুল মিয়া, শেখ হুমায়ুনসহ আরও কয়েকজন। তাঁরা বলেন, ওই খামারে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাঁরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কীভাবে বিদেশে আসার খরচ তুলবেন, কীভাবে বাড়িতে টাকা পাঠাবেন, এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কাগজ পেয়ে তাঁরা নতুন করে আশার আলো দেখছেন। তাঁদের কাছে এটি রক্ত দিয়ে পাওয়া বৈধতা।
প্রবাসীদের সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের (আয়েবা) সভাপতি জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে আমরা ইউরোপের সব দেশের দূতাবাসে স্মারকলিপি দিই। ইউরোপের বিভিন্ন গণমাধ্যম এই খবর প্রকাশ করে। মানবাধিকারকর্মীরা এগিয়ে আসেন। বিষয়টি নিয়ে ইউরোপে তোলপাড় শুরু হয়। অবশেষে গ্রিস সরকার ওই বাংলাদেশিদের বৈধ করে। এটি আসলেই বাংলাদেশিদের জন্য আনন্দের। কোনো খামারমালিক আর শ্রমিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন না।’
গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ঘটনার পর পরই আমরা গ্রিস সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। দেশটির শ্রমমন্ত্রী ও জনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেন, তাঁরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখবেন। অবশেষে তাঁরা ৩৫ জন বাংলাদেশিকে গ্রিসে থাকার ও কাজ করার বৈধতা দিয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘এখন এই বাংলাদেশিরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবেন এবং যেকোনো জায়গায় ভালো বেতনে চাকরি করতে পারবেন। তবে অবৈধভাবে বিদেশে আসা উচিত নয়।’