পাড়ার দোকান থেকে সুপারশপ সর্বত্রই ভিড়

Spread the love

রোজার আগে সরগরম বাজার

শরিফুল হাসান


আপডেট: ২৭ মে ২০১৭, ০৮: ৪৮ 

রোজার বাজার করছেন ক্রেতারা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
রোজার বাজার করছেন ক্রেতারা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

পাড়ার মুদির দোকান থেকে আরম্ভ করে সুপারশপ—সর্বত্রই ক্রেতাদের ভিড়। দম ফেলার ফুরসত নেই দোকানিদের। লোকজন আসছেন, কিনছেন। তবে তাঁদের ব্যাগে আজ ছোলা, ডাল, খেজুর, মুড়ি, চিনি, শসা, লেবু—এসব পণ্যই বেশি। হবেই-বা না কেন! কাল রোববার থেকে যে শুরু হচ্ছে মাহে রমজান।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্রেতাই রোজার বাজার করেছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ, রোজা সামনে রেখে চিনির দাম বেড়েই চলছে। নিয়ন্ত্রণের কেউ নেই। এ ছাড়া গরুর মাংসের দাম ৪৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ৫০০ থেকে ৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম না বাড়লেও রসুনের দাম বেড়েছে। তবে দাম বাড়লেও কেনাকাটায় লোকজনের আগ্রহের কোনো কমতি ছিল না।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের অন্যতম একটি বড় মুদির দোকান লক্ষ্মীপুর স্টোর। বাজারের কী অবস্থা জানতে চাইলে দোকানের মালিক আবুল কাসেম শুরুতেই বললেন, চিনির দাম বাড়তি। খোলা চিনি প্রতি কেজি ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা। আর প্যাকেট চিনি ৭৩ টাকা।
চিনি ছাড়া আর কী কী পণ্য বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে আবুল কাসেম বলেন, ছোলা, বেসন, নানা ধরনের ডাল, শরবতের বোতল ও প্যাকেটজাত উপকরণ বেশি বিক্রি হচ্ছে। অন্য যেকোনো শুক্রবারের চেয়ে বিক্রি বেশি। চিনি ছাড়া অন্যান্য জিনিসের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল আছে বলে জানান তিনি।
গ্রিন রোড থেকে কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন বেসরকারি একটি মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আহমেদ সজীব। বাজারের কী অবস্থা জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই তো চিনির দাম দফায় দফায় বাড়ছে। রোজা এলে দাম বাড়বে, এটা বোধ হয় আমাদের নিয়তি হয়ে গেছে।’
ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সপ্তাহ দুয়েক আগেও রাজধানীর খোলাবাজারে ৬৫ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি হয়েছে। এখন সেই চিনি ৭৫ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট চিনি গত সপ্তাহে ৭০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৭৩ টাকা। বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) সর্বশেষ তালিকায় চিনির দাম কেজিপ্রতি দেখানো হয়েছে ৬৭ থেকে ৭০ টাকা। আর এক মাস আগে এই দাম ৬২ থেকে ৬৪ টাকা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিত্যপণ্য ছাড়াও ইফতারির প্রধান দুই উপকরণ মুড়ি ও খেজুরের বাজারেও বেশ ভিড়। কারওয়ান বাজারে খেজুর বিক্রেতা আমানউল্লাহ জানালেন, রোজার সময় অনেক রকমের খেজুর পাওয়া যায়। বাজারে এখন মরিয়ম, তিউনিশিয়া, দামাস, বাংলাসহ নানা ধরনের খেজুর আছে। ১০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত এসব খেজুরের কেজি।
রোজাকে সামনে রেখে বেড়েছে মুড়ির দামও। নোয়াখালী দধি স্টোরে মুড়ি, দই, গুড়সহ নানা পণ্য বিক্রি হচ্ছে। দোকানদার নুর হোসেন জানান, মুড়ির দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে যে মুড়ির কেজি ৭০ টাকা ছিল, এখন সেটি ৮০ টাকা।
কেবল কারওয়ান বাজার নয়, হাতিরপুলের ভাই ভাই স্টোরের বিক্রেতা রাশেদুল আলম জানান, বুট, মুড়ি, ছোলা, ডাল, বেসন—এগুলোই বেশি বিক্রি করছেন। চিনির দাম একটু বেশি। পেঁয়াজের দাম আগের মতো থাকলেও রসুনের দাম একটু বেশি।
সবজি, মাছের দাম মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গরুর মাংসের দাম বেড়েছে বলে জানালেন ক্রেতারা। তৌফিক এলাহী নামের একজন জানালেন, গরুর মাংসের দাম ৪৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও হাতিরপুল বাজারে ৫২০ টাকা করে কেজি কিনতে হয়েছে।
সরকারি চাকরিজীবী মাসরুর সাইফুদ্দৌলা জানালেন, তিন দিন আগে যে রসুন ২৩০ টাকা কেজি ছিল, আমদানি করা সেই রসুনের কেজি এখন ২৭০ টাকা। দাম বেড়েছে ছোলারও। আগে যে ছোলার কেজি ৮০ টাকা ছিল, এখন তার দাম ৮৫ থেকে ৯০ টাকা।
টিসিবির তালিকায় দেখা গেল, এক সপ্তাহ আগে যেখানে আমদানি করা রসুনের দাম ২০০ থেকে ২২০ টাকা ছিল, এখন সেই রসুনের দাম ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা। আর ছোলার দাম যেখানে এক মাস আগে ৮০ থেকে ৯০ টাকা ছিল, এখন সেই দাম ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা।
কেবল যে সাধারণ বাজারেই ক্রেতাদের ভিড় তা নয়, রোজার কেনাকাটার চাপ সুপারশপগুলোতেও। স্বপ্নের পুরান ঢাকার ফরিদাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মোজাফফর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো শুক্রবারের চেয়ে আজ (গতকাল) ক্রেতা বেশি। তবে বেশির ভাগ ক্রেতার নজর চিনি, ছোলা, ডাল, চিড়া, গুড়, বেসন, শরবতের উপকরণের দিকে।’
রমজান মাসে সবকিছুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে, সরকার প্রতিবছর এমন কথা বললেও শেষ পর্যন্ত দেখা যায় কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কেন এই পরিস্থিতি, জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মো. মাসুম আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজায় যেন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখেন, সে জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী কয়েকবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আমাদের দুটি টিম শুক্রবারও বাজার তদারক করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ টিমও আছে। আমরা বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.