শরিফুল হাসান

নূর হোসেন কোথায়? গ্রেপ্তার হচ্ছেন না কেন? নারায়ণগঞ্জে এখন সবার মুখে মুখে এ প্রশ্ন৷ পুলিশের ধারণা, তিনি দেশেই আছেন এবং খুব দ্রুতই তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে৷
ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে আসা সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই অপহরণের ঘটনায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী থেকে র্যাবে আসা তিন কর্মকর্তার নাম এসেছে৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ছয় কোটি টাকা৷ ফলে র্যাব ও সামরিক বাহিনী বিব্রত এবং তারা আসল ঘটনা জানতে চায়৷ নূর হোসেন কেন র্যাবকে টাকা দিল, র্যাব কেন এ কাজ করল৷ এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক নেতার
সম্পৃক্ততা আছে কি না, এসব জানতে তাঁরাও নূর হোসেনের ওপর নজরদারি রাখছেন৷
জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন এ বিষয়ে প্রথম আলাকে বলেন, ‘আমি মনে করি না, নূর হোসেন বিদেশে পালিয়ে যেতে পেরেছেন৷ আমরা তাঁর
কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছি, জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ আশা করছি, শিগগিরই তাঁকেও গ্রেপ্তার করা যাবে৷’
নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন আইনজীবী প্রথম আলোকে বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনার মূল হোতা নূর হোসেন৷ র্যাবের কারা টাকা নিল, কীভাবে লেনদেন হলো, কোথায় হত্যা করা হলো, কারা সেই হত্যায় জড়িত, সবকিছু জানেন তিনি৷
এ ছাড়া প্রশাসন ও পুলিশের কার সঙ্গে কী সম্পর্ক, এ ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো নেতার সম্পর্ক
আছে কি না, সবকিছু জানা যাবে নূর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হলে৷
সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন সাংসদ শামীম ওসমানের খুবই ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২৭ এপ্রিল অপহরণের দিন রাইফেলস ক্লাবে শামীম ওসমানের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ছিলেন তিনি৷ পরদিনও নূর হোসেন নারায়ণগঞ্জেই ছিলেন৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের কোনো চেষ্টাই করেনি৷
নূর হোসেনের সঙ্গে বর্তমানে কোনো যোগাযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে শামীম ওসমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা সত্যি, নূর হোসেন আমার কর্মী ছিল৷ একইভাবে নজরুলও আমার কর্মী ছিল৷ নজরুল অপহরণের পর তার পরিবার যখন নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে, আমি তাকে রাইফেলস ক্লাবে ডেকে আনি৷ কিন্তু সে অভিযোগ অস্বীকার করে৷ ওই দিনের পর নূর হোসেন কোথায় আছে আমার জানা নেই৷ আর তার সম্পর্কে আমার ভুলও ভেঙেছে৷ সে একজন খুনি৷ আমি মনে করি, তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করলেই সব বেরিয়ে আসবে৷’
গতকাল বৃহস্পতিবার সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে নূর হোসেনের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, ৩ মে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে
একটি মাইক্রোবাস ও ১২ জনকে আটক করে পুলিশ৷ এসব ঘটনার পর থেকে বাড়িতে
কেউ নেই৷ এ ছাড়া নূর হোসেনের বিভিন্ন কার্যালয়ে কয়েক দফা
হামলা চালায় জনতা৷ এর পর থেকে তার পরিবারের সদস্যরাও পালিয়ে আছেন৷
জেলা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নূর হোসেনের সহযোগী শাজাহানের স্ত্রী
মোমেনা, টিপু ও মিন্টুকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে নরসিংদীর শিবপুর থেকে৷
এর আগে আরও কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এঁদের তথ্যের ভিত্তিতে নূর হোসেনের
অবস্থানের ব্যাপারে পুলিশ বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছে৷
তবে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তাঁরা জেনেছেন, ২৮ এপ্রিল সিঙ্গাপুরে চলে গেছেন মামলার ১ নম্বর আসামি ইয়াছিন মিয়া৷ ৪ নম্বর আসামি আমিনুল ইসলাম ওরফে রাজুর বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজিতে৷ ঘটনার পর থেকে তিনিও এলাকায় নেই৷ ৩ নম্বর আসামি হাসমত আলী সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়ার দারোগা আলীর ছেলে৷ ৬ নম্বর আসামি ইকবাল হোসেনের বাড়িও একই পাড়ায়৷ ৫ নম্বর আসামি আনোয়ারের বাড়ি মিজমিজি চৌধুরীপাড়ায়৷ এঁরা কেউই এলাকায় নেই৷
নজরুলের ছোট ভাই আবদুস সালাম বলেন, আসামিরা কেউ এলাকায় নেই৷ সবার বাড়িঘর বন্ধ৷ তাঁদের বউ-ছেলেমেয়েরাও এলাকায় নেই৷ এঁরা আসলে আগেই
প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল৷ ইয়াসিন, রাজু ও হাসু আগেই ভিসা করে রেখেছিল৷
এত বড় ঘটনা ঘটিয়ে কয়েকজন আসামি কীভাবে দেশের বাইরে চলে গেল, জানতে চাইলে জেলা পুলিশে যোগ দেওয়া নতুন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আসামিরা যেন বিদেশে পালাতে না পারে, সে জন্য পুলিশ
২৯ এপ্রিল অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে জানায়৷ কিন্তু এই দেরির কারণে এর আগে দু-একজন পালিয়ে থাকতে পারে৷
নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম বলেন, বিদেশ থেকে কয়েকজন তাঁর মুঠোফোনে হুমকি দিচ্ছে৷ তাঁর ধারণা, ইয়াসিন এ কাজ করতে পারে৷ বিষয়টি তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন৷