শূন্য পদের তালিকা চায় পিএসসি, অনাগ্রহ মন্ত্রণালয়গুলোর
শরিফুল হাসান
বিসিএস-উত্তীর্ণদের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ-প্রক্রিয়া এগোচ্ছে না। এ জন্য সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোকে দুষছে। পিএসসির অভিযোগ, মন্ত্রণালয়গুলো শূন্য পদের তালিকা না পাঠানোর কারণে নন-ক্যাডার পদে বিসিএস-উত্তীর্ণদের নিয়োগ আটকে যাচ্ছে। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় বলছে, শূন্য পদের তালিকা পিএসসিতে পাঠানোর জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তালিকা পাঠানো হয়নি। তাই আবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।তবে মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর অভিযোগ, পিএসসি স্বাভাবিক নিয়োগ-প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য কার্যাবলি সময়মতো নিষ্পন্ন করতে পারে না। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইতিমধ্যে চার শতাধিক শূন্য পদের চাহিদা দেওয়া হলেও পিএসসি এ পর্যন্ত ২০০ জনের নিয়োগের সুপারিশ করেছে। তা ছাড়া ইতিমধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণীর শূন্য পদের ৯০ শতাংশ পদে মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সরাসরি নিয়োগ দিতে পারবে। সে কারণেও অনেক ক্ষেত্রে শূন্য পদের তালিকা দিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ কম। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পিএসসির চাহিদাপত্র পাওয়ার পর গত ২১ অক্টোবর সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয় সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। এতে বলা হয়, ‘বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও পদস্বল্পতার কারণে ক্যাডার পদে অনেক প্রার্থীকে সুপারিশ করা যায়নি। এসব প্রার্থীকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দিতে চায় সরকার। তাই পিএসসি শূন্য পদের তালিকা চেয়েছে। এ কারণে প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার শূন্য পদের তালিকা সংযুক্ত করে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরাসরি পিএসসিতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলো।’ গত ঈদুল আজহার আগেই ১৫ কার্যদিবস শেষ হয়েছে। জানতে চাইলে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখনো অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ শূন্য পদের তালিকা পাঠায়নি। তাই তালিকা পাঠানোর জন্য সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে তাগাদা দিয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে আবার চিঠি পাঠানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত কতগুলো শূন্য পদের তালিকা পাঠানো হয়েছে, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, বেশির ভাগ মন্ত্রণালয়ই তালিকা পাঠায়নি। সবাই পাঠালে এ বিষয়ে বলা যাবে।সরকার চলতি বছরের ১০ মে প্রজ্ঞাপন করে নন-ক্যাডার বিধিমালা-২০১০ জারি করে। বিধিমালার ৪-এর ২ অনুচ্ছেদে বলা হয়, ২৮তম বিসিএস থেকেই এ নিয়ম কার্যকর হবে। বিধিমালা প্রসঙ্গে পিএসসির চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, একটি বিসিএস পরীক্ষায় আট থেকে ১০ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু পদ কম থাকে বলে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের অধিকাংশকেই চাকরি দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই ক্যাডারের চাকরির জন্য সুপারিশ করা যায় না এমন উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে নন-ক্যাডার বিধিমালা করেছে সরকার।নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের বিধিমালায় বলা হয়েছে, শূন্য পদের ৫০ শতাংশ পদ বিসিএসে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সংসদে বলেছেন, প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদে ৩৫ হাজার ৪৬০টি পদ শূন্য আছে। পিএসসির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোর অসহযোগিতার কারণেই বিসিএস-উত্তীর্ণ হওয়ার পরও চাকরি পাচ্ছেন না অনেকে। ফলে নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা জারির উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হতে চলেছে।এ বছরের ৩ জুন ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে পাঁচ হাজার ১০৫ জন চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন। তাঁদের মধ্যে দুই হাজার ১৯০ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। বাকি দুই হাজার ৯১৫ জনকে পর্যায়ক্রমে বিধিমালা অনুযায়ী নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পিএসসি সূত্র জানায়, নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য ২৮ জুন থেকে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে আবেদনপত্র বিতরণ শুরু হয়। দুই হাজার ৭০০ জন আবেদন করেন।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিএসসি সচিবালয়ের সচিব চৌধুরী বাবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রথম দফায় ২০০-এর মতো পদে চাহিদাপত্র পেয়েছি। এগুলোর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আবার মন্ত্রণালয়গুলোতে চাহিদাপত্র চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু মন্ত্রণালয় চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। তা সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোতে পাঠানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এটি যেহেতু একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, কাজেই ২৯তম বিসিএস পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা পর্যন্ত নিয়োগ-প্রক্রিয়া চলবে।’নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালায় বলা আছে, পরবর্তী বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশের দিন পর্যন্ত আগেরবারের উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ২৯তম বিসিএস পরীক্ষার মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। তখন আর ২৮তম বিসিএস-উত্তীর্ণ প্রার্থীদের জন্য পিএসসির মাধ্যমে আর চাকরির সুযোগ থাকবে না।



