দূতাবাসে এমআরপি ও এমআরভির কাজ

Spread the love

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তে হতাশ পাসপোর্টের কর্মকর্তারা

শরিফুল হাসান

বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) ও যন্ত্রে পাঠযোগ্য ভিসার (এমআরভি) কাজে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে নিয়োগ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের জন্য পদগুলো সৃষ্টি করা হলেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তে শুধু সিনিয়র সহকারী সচিব চাওয়ায় তাঁরা আবেদনই করতে পারছেন না। অথচ বিজ্ঞপ্তিতে সিনিয়র সহকারী সচিব বা সমমর্যাদার পদের কথাটি উল্লেখ থাকলেই তাঁরা আবেদন করতে পারতেন। এ সমস্যা সমাধানে অধিদপ্তর থেকে কয়েকবার চিঠি দেওয়া হলেও এখনো সুরাহা হয়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, সমস্যাটির বিষয়ে তাঁর জানা আছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই তাঁর নির্দেশনায় এর সমাধান করা হবে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সূত্র বলেছে, ২০১২ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রীর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, কূটনৈতিক দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পাসপোর্ট ও ভিসা দেওয়ার কাজ করছেন। কিন্তু এ কাজে অভিজ্ঞ জনবল না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। যেহেতু বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ কাজে দক্ষ, কাজেই তাঁদের পক্ষেই কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব। ওই সারসংক্ষেপে দূতাবাসগুলোতে প্রথম শ্রেণির ৬৬ জন কর্মকর্তাসহ ৩৬৬টি পদ সৃজন করার প্রস্তাব করা হয়। ওই বছরের ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রী তাতে অনুমোদন দেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১৯টি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাসহ ৭৩টি পদের অনুমোদন দেয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয় ১১টি মিশনে ১১ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাসহ ৪৪টি পদ সৃষ্টির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এতে বলা হয়, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের পদগুলোতে সিনিয়র সহকারী সচিব অথবা সমমর্যাদার কর্মকর্তারা যাবেন।
অধিদপ্তরের সূত্র বলেছে, ২০১৪ সালের ১৭ জুন এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমমর্যাদার কর্মকর্তা অংশটি বাদ দিয়ে এই পদগুলো সিনিয়র সহকারী সচিব দিয়ে পূরণযোগ্য এবং সেগুলো শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে বলে মত দেয়। এর বিরোধিতা করে গত বছরের ৩ আগস্ট অধিদপ্তরের চিঠিতে বলা হয়, অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামোতেই পদগুলো তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। কাজেই ৫০ শতাংশ পদ মন্ত্রণালয় এবং ৫০ শতাংশ পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত করা হোক। তবে এই চিঠি আমলে না নিয়ে মন্ত্রণালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে ৮ জুন আবার অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে একই কথা বলা হয়।
জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, পাসপোর্ট ও ভিসার কাজ করার জন্য গত ৩০ জুলাই সৌদি আরবের জেদ্দা ও রিয়াদ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ও দুবাই, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক, যুক্তরাজ্য, কানাডার অটোয়ায় প্রথম সচিব এবং যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে দ্বিতীয় সচিব পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য সংরক্ষিত কথাটুকু বাদ দিয়ে বলা হয়, আবেদনকারীকে সিনিয়র সহকারী সচিব হতে হবে। বিষয়টি জেনে পাসপোর্ট অধিদপ্তর অর্ধেক পদে তার কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে চলতি মাসে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। এর সুরাহা না হওয়ায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা হতাশ।
অধিদপ্তরের একজন পরিচালক, ছয়জন উপপরিচালক ও ১১ জন সহকারী পরিচালক বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে যদি লেখা হতো সিনিয়র সহকারী সচিব কিংবা এই পদমর্যাদার কেউ আবেদন করতে পারবেন, তাহলে অধিদপ্তরের উপপরিচালকেরাও আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা ছাড়া যেন অন্য কেউ নিয়োগ না পান, সে জন্যই সিনিয়র সহকারী সচিব হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আবারও মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ৫০ শতাংশ পদ মন্ত্রণালয় এবং ৫০ শতাংশ পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছি। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চাইছেন, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়িত হোক। আমরা আশা করছি, মন্ত্রণালয় এ সমস্যার সমাধান করবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.