কোরবানি হোক নির্ধারিত স্থানে

Spread the love

অা‌মি তখন কাতা‌রে। ২০১৪ সা‌লের কোরবানি ঈদের কথা। কাতার থেকে প্রথম আলোর মধ্যপ্রাচ্য সংস্করন বের হবে। সেই কাজে যাওয়া। কিন্তু ঈদের আগেরদিন শহরের কোথাও কোন গরু ছাগল ভেড়া এমনকি উটও চোখ পড়লো না। তবে কী মুসলিম দেশ কাতারে কোরবানি হয় না?আমার সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানলাম এই দেশে শহরের মধ্যে যেখানে-সেখানে পশু জবাইয়ের কোনো সুযোগ নেই। কোরবানি করা হয় শহরের বাইরে আবু হামর এলাকায়। সেখানেই পশু কেনাবেচা হয়। কেউ কোরবানি দিতে চাইলে সেখানেই দেন।কৌতুহলী এই আমি ‌বিষয়টা দেখ‌তে গেলাম আবু হামরে। সেখা‌নে ভেড়া, ছাগল, গরু, উট সার বেঁধে রাখা। কেউ একজন যেটা পছন্দ করছেন সেটার নির্ধারিত মূল্য জমা দিয়ে কুপন সংগ্রহ করছেন। শুনলাম ঈদের দিন বা পরের দিন লাইনে দাঁড়িয়ে সেই কুপন নিয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করলে ভেতর থেকে সেটি জবাই এবং মাংস কাটাকু‌টির কাজ শেষ হয়ে আসবে। ফলে ঈদুল আজহায় কাতারের কোনো সড়ক বা কোথাও কোনো রক্ত বা পশুর বর্জ্য চোখে পড়ে না। পরদিন বাহরাইনে গিয়েও একই চিত্র পেলাম। অাপনারা যারা বি‌দে‌শে থা‌কেন কিংবা গে‌ছেন তারা নিশ্চয়ই এগু‌লো জা‌নেন। কারণ মোটামুটি সারা বিশ্বেরই একই চিত্র। এর নামই নগর সভ্যতা।অথচ বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে গেলেই আপনি পাবেন ভিন্ন এক চিত্র। এখানে প্রকাশ্যে রাস্তায় কোরবানি হবে। ঈদের দিন সড়কগুলো ভেসে যাবে রক্তে। তরবারি হাতে ছুটে বেড়াবেন মাওলানারা। তাদের সাদা পাঞ্জাবি রক্তে লাল হয়ে যাবে। ছোট ছোট বাচ্চারা সেগুলো দেখবে। গরু কাটাকাটির ছবিতে সয়লাব হয়ে যাবে ফেসবুক। আচ্ছা জাতি হিসেবে আমরা এমন কেন?বেসরকা‌রি একটা প্র‌তিষ্ঠা‌নের কর্মকর্তা Masum Jaki ভাই অামা‌কে একটু অাগে জানা‌লেন, তার ছোট্ট ছেলেটা সকালে উঠে রাস্তায় এত রক্ত আর চাপাতি দিয়ে গরু কাটার দৃশ দেখে ভয়ে বার বার আঁতকে উঠছে, আর বার বার বলছে, ” আমাদের গলুটা কষ্ট পাচ্ছে, ওকে রক্ত দিয়ে দিছে মেরে ফেলছে “। জা‌কি ভাই বল‌লেন গরুটা মাংস হয়ে গেছে, আমরা খাব একটু পড়ে। ও বলে ‘ না আমি এই মাংস খাবেনা তুমি’। বাচ্চাটার গায়ে এখন জ্বর। আমাদের এখন সময় এসেছে কুরবানি দেয়ার সিস্টেম নিয়ে ভাবার। কারণ এইভা‌বে জবাই শিশু‌দের কী সংক‌টে ফে‌লে সেটা যে কোন ম‌নো‌বিজ্ঞানীর সা‌থে কথা বল‌লেই বুঝ‌তে পার‌বেন।
‌এ তো গেল বাচ্চাদের কথা। আজ সকালে যারা ঢাকা শহরে বেরিয়েছেন তারা দেখবেন সব রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে সয়লাব। ‌কোন কোন জায়গায় পশুর রক্তে সেই পানি হয়ে গেছে টকট‌কে লাল। দোলাইপাড়ে অা‌মি নি‌জে এর ম‌ধ্যে দি‌য়ে রিকশা নি‌য়ে গে‌ছি। অামার মনে হ‌য়ে‌ছে এখা‌নে বুঝি যুদ্ধ চলছে। সিটি করপোরেশন গতবছর থেকে কোরবানির স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু সেটা তদারকির কেউ নেই। ফলে সব রাস্তাই ভেসে যাচ্ছে রক্তে। ঈদের দিন বা পরের দিন আপনি কোথাও বের হবেন দুর্গন্ধে টেকা দায়। অার এই যে রক্তস্নাত শহর কতো যে রোগ বালাই ছড়াবে কে জা‌নে?আপনারা অনেকেই আমার কথা শুনে রেগে যেতে পারেন কিন্তু সত্যি বলছি আমরা এদেশের বেশিরভাগ লোকই কোরবানির মর্মার্থই বুঝি না। তাই ভেতরের পশুত্বকে জবাই দেয়ার বদলে আমরা পশু জবাইয়ে বেশি আনন্দ পাই। কার গরু বড় বা কতো কেজি মাংস হলো ফ্রিজ ভর্তি করে কতোদিন খেতে পারবো সেই হিসেব নিকেশে আমরা ব্যস্ত থাকি। কিন্তু ইসলামের শিক্ষা কী তাই? অ‌াম‌ি কিন্তু প্র‌তিবছর কোরবা‌নি ক‌রি এবং ইসলাম মেনে বি‌লিবন্টন ক‌রি। কিন্তু এই রাস্তায় কোরবা‌নি অামি মানতে পা‌রি না।সরকারের কাছে অনুরোধ যেখানে সেখানে কোরবানি দেয়া বন্ধ করার ব্যববস্থা নিন। পশু জবাইয়ের জন্য প্রতিবার শহরের একটা বড় জায়গা কিংবা একাধিক জায়গা ঠিক করা হোক। কোরবানির একটা ব্যবস্থাপনা ঠিক করা হোক। তবে শুধু সরকার কখনোই এই কাজ পারবে না। এজন্য নাগরিকদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। চলুন আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগী হই। কোরবানির নামে শহরকে রক্তাক্ত করার অভ্যাস থেকে বের হই। কারণ এই শহরটা যে আমাদেরই। সবার কাছে অনুরোধ চলুন মনের ভেতরের পশুত্বকে কোরবানি দেই। তবেই কোরবানি স্বার্থক হবে। সবাইকে ঈদ মোবারক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.