বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা হবে এমন প্রস্তাবের কথা শুনে ফেসবুক দেখছি সরগরম। অনেক শিক্ষকই নানা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। আমি সবসময়ই বলি বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষক অমেরুদণ্ডী প্রাণী বিশেষত এরা সরীসৃপ প্রজাতির। আর কেউ জানুক বা না জানুক তারা নিজেরা জানেন তারা কীভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। তারা জানেন কখন কোন রং ধারণ করতে হয়।
তবে আপনারা যারা শিক্ষক হয়েছেন বা হতে চান তাদের জন্য বলি এইসব পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। যতোদিন চলমান নোংরা এই রাজনীতি থাকবে ততোদিন আপনারা আগের পদ্ধতিতে তেলবাজি করেই শিক্ষক হতে পারবেন। কোন পরীক্ষা দিতে হবে না। আর দিলেও যাকে নেওয়া দরকার তাকেই প্রথম বানানো হবে।
তারপরেও রাষ্ট্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলছি আপনারা যদি আসলেই যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে চান কিছুই করার দরকার নেই শুধু একটা ছোট্ট একটা নিয়ম করেন। যদিও আমি জানি সারা দুনিয়ায় এই নিয়ম চললেও বাংলাদেশে হবে না। কারণ তবে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান সব নোংরামি বন্ধ হয়ে যাবে। তারপরেও আমার প্রস্তাবটা দিচ্ছি।
এখন থেকে যারা শিক্ষক হওয়ার আবেদন করবেন তাদের প্রথম বর্ষ থেকে মাষ্টার্স প্রতিটা ক্লাসে পাঠিয়ে দিন। তারা ক্লাস নিক। এরপর পাঁচ ইয়ারের তিন-চারশ ছাত্রছাত্রী তাদের নম্বর দিক। শিক্ষার্থীরা যাদের প্রথম দ্বিতীয় হিসেবে নম্বর দেবে তারাই হোক শিক্ষক। কারণ শিক্ষার্থীরাই শুধু জানে কে ভালো শিক্ষক অার কে মন্দ। শিক্ষকরাও এখানে কিছুটা নম্বর দিতে পারেন।
এই একটা পদ্ধতি চালু করলেই দেখবেন পুরো শিক্ষাব্যবস্থা বদলে গেছে। তখন আর স্বজনপ্রীতি দলীয় নোংরামি ফার্ষ্ট ক্লাস সেকেন্ড ক্লাস কিছুই থাকবে না। মেধাবীদের বদলে অযোগ্যরা নিযোগ পাবে না।
শুধু শিক্ষক নিয়োগেই নয় তাদের চাকুরি নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের পদোন্নতি বার্ষিক মূল্যায়নেও এই পদ্ধতি চালু করা হোক। দেখবেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা তখন নিজেরাও পড়বেন ছাত্রদেরও পড়াবেন।কিন্তু অামি জানি এদেশে এ নিয়ম কখনো চালু হবে না। কারণ অামাদের শিক্ষকরা রাষ্ট্রপতি মন্ত্রী রাজনীতিবিদ উপাচার্য সবার কাছে যেতে পারবেন কিন্তু অযোগ্য শিক্ষকরা ছাত্রদের মূল্যায়নকে খুব ভয় পান। খুব।
কোন কোন শিক্ষক বলতে পারেন এই পদ্ধতিতে যারা শিক্ষক হতে চান তারা তখন ছাত্রদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করবে। অসম্ভব। কারণ আপনি যখন ২০০৮ সালে ফার্স্ট ইয়ারে আপনি জানেন না ২০১৪ সালে আপনি যখন মার্ষ্টাস শেষ করবেন ওই বছর কারা ভর্তি হবে। আর যে লোক পাঁচ ইয়ারের তিনশ ছেলের মনজয় করতে পারে তিনি আসলেই শিক্ষক হওয়ার যোগ্য। তারপরেও শতভাগ নিরপেক্ষ করার জন্য ওই শিক্ষককে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে পাঠানো যেতে পারে যেখানে তাকে কেউই চেনে না।
যে শিক্ষক ছাত্রদের মূল্যায়নের মুখোমুখি হতে ভয় পান অামার চোখে তিনি শিক্ষক হবার যোগ্যই না। অার অামাদের অযোগ্য শিক্ষকরা যদি কোনদিন দেখতে পেতেন তাদের ছাত্ররা তাকে কতোটা ঘৃনা করে তিনি চমকে উঠতেন। একইভাবে অামাদের যোগ্য শিক্ষকদের প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করে ছাত্ররা।
অামি জানি অামাদের শিক্ষকরা অামার প্রস্তাব মানবেন না। কারণ এখন যারা শিক্ষক হতে চান তারা জানেন বিভাগের কোন শিক্ষককে তেল দাতে হবে। তাই আপনাদের ছাত্রদের মূল্যায়নে যেতে হয় না। আমি জানি যোগ্য শিক্ষকরা এই মূল্যায়নে খুশি হবেন। কিন্তু অযোগ্যরা মানবেন না।
কেউ কেউ বলতে পারেন শিক্ষকদের কাজ পড়ানো নাকি গবেষণা? যারা এই কথা বলেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন বলেন তো আমাদের শিক্ষকরা কী এমন গবেষণা করেছেন। গবেষণার কথা এলেই তাদের ফান্ড থাকে না। সার্বিকভাবে বলতে গেলে আমাদের শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থার পচন ধরেছে। এটা ঠেকানো জরুরী। আর সব পেশায় অযোগ্য লোক গেলে ততোটা ক্ষতি নয় যতোটা একজন অযোগ্য শিক্ষকের কারনে হয়। ৩০ বছর চাকুরি করলে তার কারণে বছরে ৩০০ করে ছাত্র ধরলে ৯০ হাজার ছাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজেই যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া জরুরী। আর সে কারণেই একটা পদ্ধতি আমাদের বের করতে হবেই। আমি জানি যেদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন শুরু হবে সেদিন থেকে বন্ধ হয়ে যাবে সব স্বেচ্ছাচারিতা।