শান্তিপূর্ণ ভোট, গণতন্ত্রের জয়
শরিফুল হাসান
অত্যন্ত সোহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হলো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এক দিন আগেও দুই প্রার্থী যেখানে সহিংসতার আশঙ্কা করছিলেন, সেখানে গতকাল শনিবার দুই মেয়র প্রার্থীর কেউই কোনো অভিযোগ করেননি; বরং প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী সকালে একই কেন্দ্রে ভোট দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করেছেন। বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।শুধু নির্বাচন কমিশনই নয়, রাজশাহীর এই পরিবেশ দেখে সাধারণ ভোটাররাও দারুণ খুশি। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশের সব নির্বাচন যেন এমন শান্তিপূর্ণ হয়। আর তাহলেই গণতন্ত্রের জয় হবে, যেমনটা হয়েছে রাজশাহীতে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক তালা। এখানে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের ব্যানারে নির্বাচন করেছেন। তাঁর প্রতীক আনারস। গতকাল সকাল আটটায় রাজশাহীর ১৩৭টি কেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। খায়রুজ্জামান ও মোসাদ্দেক দুজনেই গতকাল সকালে উপশহর এলাকার স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন। সকাল সাড়ে আটটায় মোসাদ্দেক কেন্দ্রে উপস্থিত হলেও তখনই তিনি ভোট দেননি। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, বড় ভাই লিটনের (খায়রুজ্জামান) জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁর সঙ্গে ভোট দেবেন তিনি। মোসাদ্দেক কেন্দ্রে আসার ১৫ মিনিট পর সেখানে যান খায়রুজ্জামান। এরপর ৫ নম্বর কক্ষে ভোট দেন তিনি। মোসাদ্দেক ভোট দেন ৪ নম্বর কক্ষে। ভোট দেওয়ার পর দুজন কুশল বিনিময় করেন এবং কোলাকুলি করেন। এরপর তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। নির্বাচিত হলে দুজনই সমৃদ্ধ রাজশাহী গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এক প্রশ্নের জবাবে খায়রুজ্জামান বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে সবকিছু হলে তিনি মেনে নেবেন। তবে জয়ের ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি আশাবাদী। একই বিষয়ে জানতে চাইলে মোসাদ্দেক বলেন, ‘আমি জয়ের ব্যাপারে পুরোপুরি আশাবাদী। তার পরও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে যেকোনো রায় মেনে নেব।’ ভোটকেন্দ্রে আসার সময় খায়রুজ্জামানের সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা জাহানারা বেগম ও স্ত্রী শাহিন আক্তার। মোসাদ্দেকের সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রেবেকা সুলতানা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান। শুধু দুই প্রার্থীই নন, তাঁদের স্ত্রীরাও পরস্পরের প্রশংসা করেছেন। রাজশাহীর সৌহার্দ্যপূর্ণ এই নির্বাচনের পরিবেশ বজায় ছিল সারা দিন। ভোট নিয়ে সবার মধ্যে ছিল উৎসব উৎসব ভাব। সকাল নয়টার পর ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। পুরুষের চেয়ে নারীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সোহেল রানা দুপুরে জানান, তাঁর কেন্দ্রে মোট ভোটার এক হাজার ৫৪৬ জন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীও এই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে।রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবু রেজা জানান, তাঁর কেন্দ্রে মোট ভোটার এক হাজার ৪৫১ জন। প্রথম চার ঘণ্টায় প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোট কেমন হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশ।’ জানতে চাইলে রাজশাহীর তিন নারী ভোটার মাহমুদা ইয়াসমিন, ইলা সরকার ও আজমিরী প্রামাণিক বলেন, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। অর্ধশত কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সবখানেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হচ্ছে। কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে সবখানেই ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া পাহারা। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত, বিজিবির টহল ছিল শহরজুড়ে। নির্বাচন শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রার্থীসহ সবার সহযোগিতার কারণেই এমন ভালো একটি নির্বাচন হলো। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’



