অভিযোগ, ঘুষ না দেওয়ায় চাকরি হয়নি

Spread the love

অভিজ্ঞ ১৭ কেবিন ক্রুকে চাকরি দেয়নি বিমান

শরিফুল হাসান

বিভিন্ন বেসরকারি এয়ারলাইনসে কর্মরত এবং পরবর্তী সময়ে বিমানে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাময়িক চাকরি করা ১৭ জন কেবিন ক্রুকে চাকরি দেয়নি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এর মধ্যে প্রশিক্ষণে মেধাতালিকায় শীর্ষস্থানে থাকা ও ‘দক্ষতার’ জন্য বিমানের সনদপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও রয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ঘুষ দিতে না পারায় তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
বিমানের একটি সূত্র জানায়, কেবিন ক্রু নিয়োগে বিমানের চেয়ারম্যানের কথিত ধর্মপুত্র মাহমুদুল হক ওরফে পলাশ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিমানের ফ্লাইট পরিচালক শাখার সাবেক একজন পরিচালক (ডিএফও)।
পলাশ সোনা চোরাচালানের ঘটনায় গত ১৮ নভেম্বর বিমানের আরও দুই কর্মকর্তাসহ গ্রেপ্তার হন। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র জানায়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পলাশ জানিয়েছেন, বিমানে শতাধিক কেবিন ক্রু নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এঁদের অধিকাংশের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়। এ টাকার ভাগ সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনেকে পেয়েছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশিক্ষণ মেধাতালিকায় থেকেও চাকরিবঞ্চিতদের অনেকে প্রথম আলোর কাছে তাঁদের ক্ষোভ ও অভিযোগ জানান। তাঁরা নিয়োগের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে গত ২৫ নভেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন করেছেন। তাতে বলেছেন, তাঁরা দক্ষতার সঙ্গে বিমানের সংকটময় সময়ে কাজ করলেও সাজানোভাবে পরীক্ষা নিয়ে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
চাকরিবঞ্চিত ব্যক্তিরা প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা দেশের বিভিন্ন বেসরকারি এয়ারলাইনসে চাকরি করতেন। কিন্তু ২০১৩ সালে হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান দক্ষ কেবিন ক্রু চায়। তাঁরা আবেদন করেন। বিমান তখন সাক্ষাৎকার নিয়ে ৫৪ জনকে নির্বাচিত করে। এরপর বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টারে (বিএটিসি) ২১ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে ৩৮ জনকে হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর তিন মাস তাঁরা চাকরি করেন। দক্ষভাবে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করায় তাঁদের প্রশংসাসূচক সনদও দেয় বিমান এবং পরে তাঁদেরই আবার নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দেয়।
এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিমান। বলা হয়, সাবেক কেবিন ক্রুরা প্রাধান্য পাবেন। পরে চাকরির বয়সমীমা ৩০ করে দেওয়ায় আগের ৩৮ জনের মধ্যে নয়জনই আবেদন করতে পারেননি। অন্যরা আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে প্রশিক্ষণে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অধিকারীসহ ১৭ জনই চাকরি পাননি। অথচ তাঁদের সঙ্গে প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হননি, এমন অনেকেই এ পর্বে নিয়োগ পান।
বঞ্চিতদের একজন রুমানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তখন নিয়োগপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিদেশি নাগরিক জর্জের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জর্জ জানান যে পরীক্ষায় তাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর পরামর্শে চাকরিবঞ্চিতরা বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাননি।
প্রশিক্ষণে তৃতীয় হওয়া সজীব রানা বলেন, ‘দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনসে চাকরি করার পর আমরা বিমানে যোগ দিই। অথচ আমাদের ১৭ জনকে কোনো কারণ ছাড়াই বাদ দিল বিমান।’ একই অভিযোগ বিমানের সাবেক ক্রু আনজানা, শাহ আকরাম, ইয়ামিন, জান্নাতুল, সাদিয়া, শারমিন, আশীষ, সুলতানা, মুনিরা, নাসিমারও।
বঞ্চিতদের অভিযোগ, বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) রাজপতি সরকারের কারণেই তাঁরা নিয়োগ পাননি। তবে রাজপতি সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, ‘ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি বলেই চাকরি পাননি।’ নিয়োগ বোর্ডে থাকা বিদেশি সদস্য তো তাঁদের বলেছেন তাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছিলেন—এ কথা জানালে রাজপতি সরকার বলেন, ‘একজনের কাছে হয়তো পাস করেছেন, বাকিদের কাছে করেননি।’
তবে বঞ্চিতরা বলছেন, নিয়োগ বোর্ডে থাকা এই সদস্যরাই আগেরবার তাঁদের পরীক্ষা নিয়েছিলেন এবং সেখানে তাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এরপর ফ্লাইট পরিচালনা করে দক্ষ হওয়ার পর কীভাবে তাঁরা অনুত্তীর্ণ হন? এ বিষয়ে তাঁরা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.