মানবপাচার আইনের দুটি ধারার বিরোধিতা করছে বায়রা
শরিফুল হাসান
খসড়া মানবপাচার প্রতিরোধ আইনকে স্বাগত জানালেও দুটি ধারা নিয়ে জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা আপত্তি তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, এই দুটি ধারার কারণে দেশের জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। তাঁরা দুটি ধারার পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই দাবিকে অযৌক্তিক বলছে। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১১-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। এই আইনের ৩-এর (২) ধারায় বলা হয়েছে, বৈধ বা অবৈধ যে ভাবেই বিদেশে মানুষ পাঠানো হোক না কেন, বিদেশে গিয়ে কোনো ব্যক্তি যদি শোষণমূলক পরিস্থিতিতে পড়ে, তাহলে এটি পাচার বলে গণ্য হবে। আর ১৫ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতির প্রয়োজন হবে না।জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী আইনটিকে স্বাগত জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এই আইনের পক্ষে। কারণ এতে মানবপাচার বন্ধ হবে। কিন্তু ৩-এর (২) ধারার কারণে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ, অভিবাসনের উদ্দেশে লোক পাঠিয়ে কোনো বিপদ হলে সেটিকে পাচার বলা হচ্ছে। কিন্তু অভিবাসন আর পাচারকে এক করে দেখলে তো চলবে না।’ বায়রার মহাসচিব বলেন, মানবপাচার আইন যখন প্রস্তাব করা হয়, তখনো তাঁরা এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু তাঁদের আপত্তি উপেক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বৈধভাবে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সুযোগ অব্যাহত রাখতেই আমরা এই ধারাটি বাতিল করার দাবি করছি।’ প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুটি ধারা বাদ দিতে গত ২৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়, প্রস্তাবিত মানবপাচার আইনে বহির্গমন অধ্যাদেশের আওতাধীন কার্যক্রমকে সুরক্ষাই দেওয়া হয়নি। এর ফলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন অধিদপ্তর বা বিভিন্ন দূতাবাসের শ্রম শাখায় বা অন্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অভিবাসন কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে কাজের জন্য লোক পাঠানো হলেও অনেক সময় তিনি বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। এখন সেটি যদি পাচারের আইনে পড়ে, তাহলে তো অনেক কর্মকর্তা বিদেশে লোক পাঠানোর অনুমতিই দেবেন না। কাজেই জনশক্তি রপ্তানির দিক থেকে এটি একটি প্রতিবন্ধক আইন। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক) কামালউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় কিংবা বায়রার দাবি ঠিক নয়। তিনি বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশে কোনো আইন ছিল না। যেসব দেশে লোক পাঠানো হতো, তাদেরই এ নিয়ে অসন্তুষ্টি ছিল। আর আমরাও যেনতেনভাবে লোক পাঠাতে দিতে পারি না। সে কারণেই এই আইন। এর ফলে অবৈধভাবে বিদেশে লোক পাঠানো বন্ধ হবে এবং নিরাপদ অভিবাসন প্রতিষ্ঠা হবে।’তবে বায়রার সভাপতি আবুল বাশার বলেছেন, অভিবাসন ও পাচার এই দুটি বিষয় পরিস্কার না করলে এ নিয়ে সমস্যা হবে। বিশেষ করে রিক্রটিং এজেন্সিগুলো অভিবাসন কার্যক্রমে নিরুৎসাহিত হবে। তাই ৩ (২) ধারাটি পরিস্কার করা উচিত। বায়রা সরকারকে এ বিষয়টিই বোঝানোর চেষ্টা করবে।