মোজাম্বিকের কারাগারে ৩৭২ বাংলাদেশি, উদ্বিগ্ন স্বজনেরা
শরিফুল হাসান
জাল ভিসা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুপ্রবেশের পর গ্রেপ্তার হওয়া ৩৭২ জন বাংলাদেশি মোজাম্বিকের একটি কারাগারে আটক আছেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত উদ্বিগ্ন স্বজনেরা তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।আটক এই বাংলাদেশিদের বেশির ভাগের বাড়ি নোয়াখালী, ফেনী ও চাঁদপুরে। স্বজনেরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ অফ্রিকায় ভালো কাজ দেওয়ার কথা বলে এঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সাত লাখ থেকে আট লাখ টাকা নিয়েছে দালালেরা।আফ্রিকার ইন্টারনেটভিত্তিক পত্রিকা ‘অল আফ্রিকা ডট কম’ এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, গত ১২ জানুয়ারি দালালেরা ৩৭২ জন বাংলাদেশিকে পর্যটন ভিসার মাধ্যমে মোজাম্বিক সীমান্ত দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠায়। কিন্তু অনুপ্রবেশের দায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। সেখানকার জেলে কিছুদিন রাখার পর তাঁদের আবার মোজাম্বিক পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।খবরে আরও বলা হয়, ৩৭২ বাংলাদেশিসহ এশিয়ার মোট ৪০০ নাগরিককে মোজাম্বিকে ফেরত পাঠিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এঁদের মধ্যে পাকিস্তান, বাংলাদেশি, ভারত ও চীনের নাগরিক আছেন।দক্ষিণ আফ্রিকার অভিবাসন শাখার উপমহাপরিচালক জ্যাক ম্যাককেই বলেন, জোহানেসবার্গের ক্রাউন মাইন এরিয়া থেকে তাঁদের আটক করা হয়। এই পাচারের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের কিছু লোক জড়িত। এঁদের ফেরত পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো, অনুপ্রবেশ মেনে না নেওয়া-সংক্রান্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বার্তাটি সবাইকে জানিয়ে দেওয়া।আটক ব্যক্তিদের একজন চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ধামালুয়া গ্রামের এরশাদ উল্লাহ। এরশাদের ভাই কচুয়া বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় পত্রিকা কচুয়া কণ্ঠ-এর মালিক হাবিব উল্লাহ গতকাল প্রথম আলোকে জানান, কচুয়া পৌরসভা এলাকার দালাল হালিম ভালো কাজের কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা নেন। তাঁর ভাই ছাড়াও কচুয়ার আরও ১২ জন লোক গেছেন। সবাই এখন কারাগারে।হাবিবউল্লাহ জানান, ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর সপ্তাহ দুয়েক আগে সর্বশেষ কথা হয়েছে মোজাম্বিকের পুলিশের মাধ্যমে। বর্তমানে তাঁরা মোজাম্বিকের বোয়ানি ক্যাম্পে আটক আছেন। সেখানে বিভিন্ন দেশের মোট ৯০০ লোক আটক আছেন। এর মধ্যে ৩৫৫ জন বাংলাদেশি। তাঁদের ঠিকমতো খাবার দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে ঘটনার পর থেকে দালাল হালিম আত্মগোপনে রয়েছে। কচুয়ার জাহাঙ্গীর, আবুল খায়ের, সুফিয়ান, মোস্তফার পরিবারও দুশ্চিন্তায় আছে।দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা মোজাম্বিকে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেও আটক এই বাংলাদেশিদের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।তবে জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা জানান, মধ্যপ্রাচ্যে বাজার কমে যাওয়ার পর একশ্রেণীর দালাল অনেক টাকা নিয়ে আফ্রিকায় লোক পাঠানোর চেষ্টা করছে। সম্প্রতি আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়ায় ৩৯ জন এবং বুরুন্ডিতে ২৩ জন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন।



