পর্যটন ভিসা মালয়েশিয়ায় চাকরির নিশ্চয়তা দেয় না
শরিফুল হাসান
প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো আবারও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনশক্তি রপ্তানিতে জড়িত ব্যক্তিরা। মালয়েশিয়া সরকার তাদের দেশে ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশিদের ভ্রমণের সুযোগ দেওয়ার কারণেই এই আশঙ্কা। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ও সমস্যাটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই সমস্যা সমাধানে অভিবাসন পুলিশকে সতর্ক হতে বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশের পর্যটকদের সে দেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এটি একটি বড় বিষয়। তিনি বলেন, কিন্তু কেউ যেন চাকরি করার কথা ভেবে এই সুযোগ কাজে না লাগান। তাহলে বাংলাদেশকে বিব্রত হতে হবে। একটি লোকও যেন এভাবে মালয়েশিয়া যেতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাতকে হবে।প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার সরকার দেশটিতে পর্যটক সমাগম বাড়ানোর জন্য সব সময়ই আকর্ষণীয় উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ১ জুলাই থেকে ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের মালয়েশিয়া ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। অর্থাৎ এখন থেকে মালয়েশিয়ায় গিয়ে সে দেশে প্রবেশের অনুমতি নেওয়া যাবে। গত সপ্তায় মালয়েশিয়ার পর্যটনবিষয়ক সরকারি কমিটির বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। মালয়েশিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ খবর এসেছে। জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, মালয়েশিয়ার এ ঘোষণা একদিকে যেমন আনন্দের, অন্যদিকে তেমনি উদ্বেগের। এর ফলে কিছু ট্রাভেল এজেন্সি এবং একশ্রেণীর প্রতারক সহজ-সরল লোকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মালয়েশিয়ায় কাজে পাঠাবেন। কিন্তু কিছুদিন পরই এই লোকেরা গ্রেপ্তার হয়ে ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি করবে। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের এই ঘোষণায় প্রতারণার সম্ভাবনা শতভাগ বেড়ে গেল। গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে এখন মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা নেওয়া হবে। এভাবে সর্বস্বান্ত হবে অনেক মানুষ। কিন্তু দোষ এসে পড়বে বায়রার ওপর।সমস্যা সমাধানে কী করা যেতে পারে জানতে চাইলে বায়রার মহাসচিব বলেন, মালয়েশিয়া পর্যটকের দেশ। সেখানে প্রচুর পর্যটক যান। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য নেই, এমন লোকের মালয়েশিয়ায় ঘুরতে যাওয়ার কথা নয়। কাজেই অভিবাসন পুলিশ যদি একটু সতর্ক হয় এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয় তাহলে তাঁরা বুঝতে পারবেন কারা পর্যটক, আর কারা চাকরি নিয়ে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বায়রা প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও সচিবকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অভিবাসন পুলিশ, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সবাই বসে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। এই টাস্কফোর্সের মাঝে মাঝেই মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইটে তল্লাশি চালানো উচিত।বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিমানবন্দরে চেহারা দেখে ও কথা শুনেই অনেকাংশে বোঝার কথা কে ঘুরতে যাচ্ছে, কে চাকরি করতে যাচ্ছে। সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।



