শরিফুল হাসান
ইস্তাম্বুলে বসে বসে ভাবছি আড়াইবছর আগের কথা। ২০২০ সালে যখন করোনা মহামারি সবে শুরু ইউরোপ যাওয়ার পথে ২ মার্চ এখানে ছিলাম। মানুষের মধ্যে তখন একটু একটু আতঙ্ক শুরু হচ্ছে। ইস্তানবুল বিমানবন্দরের স্টারবাকস কফির দোকানে বসে সেই আতঙ্কের গল্প শুনছিলাম ওমর আর এলফের কাছে।
এখন আবার পরিস্থিতি পুরো উল্টো। সেখানে যাওয়ার আগে স্টারবাকসের কথা বলি। সারা পৃথিবীতে নতুন করে কফি সংস্কৃতির পেছনে স্টারবাকসের অবদান অনেক।১৯৭১ সালে সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিন বন্ধু ইংরেজি শিক্ষক জেরি বাল্ডউইন, ইতিহাসের শিক্ষক জিভ সিগল এবং লেখক গর্ডন বোকার এটিশুরু করেন।
কফি রোস্টিং উদ্যোক্তা আলফ্রেড পিট তাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন। কফি বিন থেকে কফি বানানোর আইডিয়া দিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করে। একটা নতুন ভাবনা থেকে স্টারবাকস কর্পোরেশন এখন বিশাল কফিহাউস চেইন।
বিশ্বব্যাপি ৩৩ হাজারেও হাজারেরও বেশি স্থানে এই কফি হাউস আছে।পৃথিবীর প্রায় সব বড় বিমানবন্দরে স্টারবাকসের কফির দোকান আছে। ইউরোপের প্রতিটা ট্রেন স্টেশনে স্টারবাকস দেখেছি। নিজে কখনো হারিয়ে গেলে বা কাউকে কোথাও আসতে বললে চোখ বন্ধ করে স্টারবাকসের সামনে আসতে বলতে পারেন।
আর কফি পছন্দ করলে তো কথাই নেই। টানা দশ ঘন্টার ক্লান্তিকর ভ্রমণ আর ঘুম ভাব কাটাতে সটারবাকসের সামনে গেলাম। ওমর আর এলফকে পেলাম না। করোনা মহামারীতে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে।
ওরা নিশ্চয়ই ভালো আছে। সেবার ওরা জানিয়েছিল, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে লোকজনের আসা যাওয়া কমে গেছে। কফি বিক্রিও কমেছিল। তবে এখনকার ছেলেমেয়েরা জানালো, করোনা আতঙ্ক চলে যাওয়ার পর গত এক বছরে লোকের সমাগম বেড়েছে। বছরে নাকি এখন এক কোটিরও বেশি পযর্টক আসছে তুরুস্কে।
আসলে বিশ্ব পর্যটনে বরাবরই সবার পছন্দের শীর্ষে তুরস্ক। ভৌগোলিকভাবে একই সঙ্গে ইউরোপ ও এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত বলে মানবসভ্যতার ইতিহাস জুড়েই এশিয়া ও ইউরোপের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেছে তুরস্ক ।
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সব যেন এখানে একসঙ্গে মিশে আছে। প্রকৃতি পাহাড়-পর্বত, নদী, সমুদ্র, জলপ্রপাত, কী নেই এই দেশে। ভূমধ্যসাগর এবং কৃষ্ণসাগর ঘিরে রেখেছে ইস্তাম্বুল শহরকে।
ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে ইস্তাম্বুল দারুণ জনপ্রিয়। আমি অবশ্য এখন যাচ্ছি তুরুস্কের রাজধানী আঙ্কারায়। এটি এখানকার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের সমাধি এখানেই। তিনদিন এই শহরে থাকবো অভিবাসন বিষয়ক একটি বৈঠকে। একদিন আমার একটা সেশন আছে। এরপর ফের ইস্তাম্বুলে।
আসলে ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থল হওয়ায় তুরুস্ক অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচারের একটা বড় রূট। বাংলাদেশসহ পৃথিবীল অনেক দেশের অনিয়মত অভিবাসী আসে সেখানে। এ নিয়ে তুরুস্ক এখন বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে কাজ করছে যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
এ বছরের এপ্রিলে তুরুস্কের প্রেসিডেন্সি অব মাইগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট, দেশটির স্বরাষ্ট ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইসিএমপিডিসহ অনেকেই কাজ করছে। এই বছরের এপ্রিলে বিশাল একটা প্রতিনিধিদল ব্র্রাকে এসেছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার আমার আসা।কাজের ফাঁকে সময় পেলে চেষ্টা করবো এখানকার ইতিহাস ঐতিহ্য আর মানুষ নিয়ে লিখতে। বিশেষ করে ইস্তাম্বুল। এখন শুধু একটা কথাই বলি, নেপোলিয়ন বোনাপার্ত একবার বলেছিলেন, পুরো পৃথিবীকে যদি একটি রাজ্য ভাবা হয়, তুরুস্কের ইস্তাম্বুল হবে তার রাজধানী।
সময় সুযোগ পেলে ঘুরে যেতে পারেন এই শহরে যার বুকজুড়ে শুধু ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গন্ধ। ভালো থাকবেন সবাই।