শহীদলিপির নির্মাতাকে শ্রদ্ধা

Spread the love

শরিফুল হাসান

১৯৮৫ সালে এই বাংলার লোকজন কম্পিউটার চিনতেন কী না বা চিনলেও কয়জন চিনতেন, সেটি নিয়ে রীতিমত গবেষণা হতে পারে। অথচ সেই সময়েই কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লেখার সফটওয়্যার ‘শহীদলিপি’ তৈরি করেন এক বাংলাদেশি। ১৯৮৫ সালের ২৫ জানুয়ারি নিজের উদ্ভাবিত সেই বাংলা ফন্ট শহীদলিপি দিয়ে মাকে প্রথম চিঠি লিখেছিলেন মানুষটি।‌ পরে শহীদলিপি ব্যবহার করে তারকালোক এবং দৈনিক আজাদসহ বেশ কিছু পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। শহীদলিপির সেই অসাধারণ নির্মাতা সাইফুদ্দাহার শহীদ ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি, সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর আলবুকার্কে তিনি মারা যান। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।

নিজের নামের সাথে সামঞ্জস্য থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ভাষা শহীদদের সম্মানার্থে কম্পিউটারের প্রথম বাংলা ফন্ট শহীদলিপি নামকরণ করেছিলেন সাইফুদ্দাহার শহীদ। আমরা আজ অনেকেই বিজয়ের কথা জানি। কিন্তু কম্পিউটারে বাংলা লিখতে ‘বিজয়’ কিবোর্ডের আগেই ১৯৮৫ সালে ‘শহীদলিপি’ তৈরি করেছিলেন সাইফুদ্দাহার শহীদ। এটি করা হয়েছিল ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য।

সাইফুদ্দাহার শহীদ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ঢাকায় ন্যাশনাল কম্পিউটার নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। সেখানেই ‘শহীদলিপি’ তৈরি হয়। আগেই বলেছি ওই সময়ের অনেক পত্রিকা প্রকাশ হতো এই শহীদলিপি ব্যবহার করে। আমি জানি না এমন একজন গুণী মানুষ কেন দেশ ছেড়ে প্রবাসের জীবন বেছে নিলেন। ৯০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান সাইফুদ্দাহার শহীদ। সেখানেই মারা গেলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি আলঝেইমার এবং অন্যান্য জটিলতায় ভুগছিলেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।

আফসোস একটাই বেঁচে থাকতে আমরা আমাদের বহু গুণীজনদের সম্মান জানানো তো দূরের কথা তাদের নামটাও জানতে পারি না।‌ জানাতে পারি না। পরে মরণোত্তর কোন পদক দিয়ে তাকে সম্মান দেয়ার চেষ্টা করি। অথচ কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লেখার সফটওয়্যার ‘শহীদলিপি’র নির্মাতা হিসেবে তাকে আমাদের সম্মানিত করা উচিত ছিলো। এই সুযোগে আমি বিজয় কি বোর্ডের প্রতিষ্ঠা মোস্তফা জব্বারকে ধন্যবাদ জানাই। আরো বেশি ধন্যবাদ দেই অভ্র কিবোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা মেহদী হাসান খানকেও। তিনি এই প্রজন্মকে অভ্র চিনিয়েছেন। আমি মনে করি তাকেও আমাদের সম্মানিত করা উচিত।

আসলে একটা জাতি যদি তার গুণীজনদের সম্মান না করে, মর্যাদা না দেয় তাহলে তাদের অনেকেই হয় দেশ ছাড়বেন একদিন ছাড়বেন দুনিয়া। কাজেই চলুন এর আগেই গুণীজনদের সম্মান দেই। দেশে বিদেশে ভালো থাকুন সবাই। ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.