স্বপ্নের পদ্মা সেতু

Spread the love

শরিফুল হাসান

আর দশটা সকালের মতোই প্রকৃতির নিয়মে আজকের দিনটা এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে আজকের দিনটা আলাদা। কারণ আজ এক স্বপ্ন পূরণের দিন।আজ বাংলাদেশের গৌরব আর নিজেদের টাকাতেই স্বপ্নের সেতুর দিন। এ যেন একটি জাতির সাহস আর সংকল্প পূরনের দিন।

এ যেন গৌরব আর আত্মমর্যাদার একটা দিন। এ যেন ঈদের আগে আরেক ঈদ! আপনারা যারা কখনো পদ্মা সেতু এলাকায় যাননি ঘুরতে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে যেতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট, নদীর মাঝখানের সেতু, নদীর ওই পাড়ে মাদারীপুরের শিবচর সেতুর টোলপ্লাজা, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দারুণ সব রাস্তা সব মিলিয়ে এই এলাকায় গেলে মনে হবে এটি অন্য এক বাংলাদেশ! আবার নদী থেকেও সেতুটা দেখতে দারুণ লাগে।

আপনি একবার যান, দেখবার বুকটা আনন্দে ভরে উঠবে। আমার মতো আবেগি মানুষ হলে চোখ ভিজে যেতে পারে আনন্দে।আহা পদ্মা সেতু! কতো কতো ঘটনা এই এক সেতু নিয়ে। কতো কিছুর স্বাক্ষী এই বাংলাদেশ, আমি, আমরা! ২০১১ সালে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে যে সংকট তৈরি হয়েছিল সেটা যেমন দেখেছি তেমনি সাত বছর বছর আগে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন মূল সেতুর কাজের উদ্বোধন করেন সেদিনও ঘটনাস্থলে ছিলাম।

পরদিন ১৩ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় আমার করা মূল নিউজটা ছিল স্বপ্নের সেতু ঘিরে উচ্ছ্বাস। দিনটার কথা আমার বেশ মনে আছে। ঢাকা থেকে আমি আর প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক রাজা ভাই সেদিন গিয়েছিলাম।

চারপাশ থেকেই মানুষ আসছিল পিলপিল করে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের অনেক বিদেশি নাগরিককেও সেদিন উচ্ছাস করতে দেখেছি। সে কারণেই শিরোনাম দিয়েছিলাম স্বপ্নের সেতু ঘিরে উচ্ছ্বাস। পরদিন সেই নিউজ প্রকাশের পর যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। বলেছিলেন নিউজটা খুব ভালো হয়েছে।

আসলে আমি সেদিন যে উচ্ছ্বাস দেখেছিলাম সেটি বলার নয়। অথচ এই উচ্ছ্বাসের আগে পরে ছিল বহু শঙ্কাও! সেতুকে ঘিরে কতো কী কাণ্ড করলো বিশ্বব্যাংক! কিন্তু দমে যাওয়ার বদলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ যেভাবে এই সেতু করার সাহস দেখালো সেটা এক বিরাট শক্তি।

ফেসবুক মনে করিয়ে দিচ্ছে এক দশক আগে লিখেছিলাম, নিজেদের টাকায় এই সেতু করা সম্ভব! পৃথিবীকে দেখিয়ে দেবার এ এক সুযোগও। বাংলাদেশ আসলেই সেটা করিয়ে দেখিয়েছে। আমি মনে করি নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করে আমরা সারা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছি আমরা সবকিছু করার সাহস রাখি।

এ যেন গৌরব আর আত্মমর্যাদার প্রতীক। জানি আজ সেতু উদ্বোধনের পর মানুষের উচ্ছ্বাস ছাড়িয়ে যাবে বহুগুনে।অবশ্য হবেই বা না কেন!নিজের অভিজ্ঞতা বলতে পারি। পদ্মা সেতুটা যেখানে গত ১৪ বছর ধরে প্রতি বছরের ডিসেম্বরে আমি সেখান দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাই।

প্রমত্ত পদ্মায় সেতুর পুরো কাজটাই আমার চোখের সামনে দেখা। সাংবাদিক হিসেবে তো পুরো সেতু এলাকা ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছি বেশ কয়েকবার। সর্বশেষ গিয়েছিলাম কিছুদিন আগে! প্রমত্ত এক নদীর মাঝখানে যেন মাথা উঁচু করে যেন দাঁড়িয়ে আছে সেতুটা। আমি মনে করি এই সেতু পদ্মাপাড়ের মানুষের একটা আবেগ।

এই যে শত শত বছরজুড়ে পদ্মায় পাড়ি দিতে কতো শঙ্কা, ভয়, এতো এতো লঞ্চডুবি, এতো এতো মানুষের দুর্ভোগ; সব এখন গল্প। যে নদী পার হতে ঘন্টার পর ঘন্টা এমনকি দিনও কেটে যেত সেই নদী পার হওয়া যাবে ছয় মিনিটে।

আমি তো মনে করি এই সেতু শুধু দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের জীবনটাই বদলে দেবে তা নয় পুরো দেশের অর্থনীতি বদলে দেবে। আগেই বলেছি, পদ্মা সেতু আমাদের স্বনির্ভরতা, সাহস, দৃঢ়তা, সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।

আমি মনি করি পদ্মা সেতু বা মেগা সব উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি সুশাসন, গণতন্ত্র আর মানবিকতা থাকলে এই বাংলাদেশকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। সেই আশা আর আজকের দিনের ভীষণ উচ্ছ্বাস নিয়ে সবাইকে শুভ সকাল। এই সেতুর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে ভালোবাসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.