শরিফুল হাসান

‘সকালে কয়েকজন লোক আমাকে ইচ্ছেমতো মারধর করে। সারা দিন কষ্ট, লজ্জায়-অপমানে আমি মাথা তুলতে পারিনি। বিকেলে সাংসদ সেলিম ওসমান এসে কোনো কথা না বলেই আমার দুই গালে দুই হাত দিয়ে পরপর চারটি চড় মারেন। এরপর বলেন, “শালা কান ধর”।’
নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত গতকাল প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
পরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৮ বছর ধরে কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যাণদী গ্রামে অবস্থিত পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকলেও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ চাইছিল না শ্যামল কান্তি আর থাকুন। সে কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শ্যামল কান্তি কথা বলার সময় বারবার চোখ মুছছিলেন। বর্তমানে তিনি ‘সেলিম-আতঙ্কে’ আছেন বলেও জানান। সাংসদ সেলিম ওসমান দাবি করেছেন, ওই শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে শ্যামল কান্তি এটি ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, তিনি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।
সেদিন কী ঘটেছিল জানতে চাইলে এই শিক্ষক বলেন, ‘পুরো ব্যাপারটিই ছিল সাজানো। আমি তিল তিল করে স্কুলটি গড়েছি। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদ চাচ্ছিল আমি যেন আর না থাকি। এ জন্যই ষড়যন্ত্র সাজানো হয়েছিল। আমাকে বলা হয়েছিল সভা আছে। কিন্তু গিয়ে দেখি পরিস্থিতি ভিন্ন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন আমাকে পেটায়। মসজিদে মাইকে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছিল। আমাকে একটা ঘরে নেওয়া হয়। আমার শরীর তখন একেবারেই দুর্বল। বিকেলে সাংসদ এসে আমাকে চড় মারতে থাকেন। এরপর লোকজনের সামনে এনে আমাকে বলেন, “শালা কান ধর। ১০ বার ওঠবস কর।” জীবন বাঁচাতে তা করতে বাধ্য হই।’
ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো কটূক্তি করিনি। পুরোটাই সাজানো। স্কুল থেকে বের করতেই এসব ষড়যন্ত্র।’ সাংসদ তো দাবি করেছেন তিনি আপনার জীবন বাঁচিয়েছেন। আপনার পরিবার লিখিত দিয়েছে। আপনি নাকি ভারতে চলে যেতে চাইছেন। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত বলেন, ‘আমার স্ত্রী হাসপাতালে আছেন। তাঁকে ডাক দেন। এগুলো ভিত্তিহীন কথা।’
সরকারের তদন্ত কমিটি শিক্ষককে স্বপদে বহাল করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ সবাইকে শতকোটি প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানান।