মঠবাড়িয়ায় সহিংসতার ঘটনায় ১৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

Spread the love

রাইফেলের ২৯টি গুলি ছোড়া হয়

শরিফুল হাসান 


ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের দিন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাফা ডিগ্রি কলেজের সামনে সাধারণ জনতার ওপর সরাসরি ২৯টি গুলি ছুড়েছিল বিজিবি। এর আগে আর্মড পুলিশের সদস্যরা শটগানের ১০টি এবং থানা-পুলিশের একজন উপপরিদর্শক একটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। তবে কাঁদানে গ্যাসের শেল বা লাঠিপেটা কিংবা অন্য কোনোভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়নি।
সহিংসতার ঘটনায় করা মামলায় গুলির এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বান্দরবান থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে আসা উপপরিদর্শক সানোয়ার আলী খান এ মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। যে ৫২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে, তাঁরা পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের সদস্য। নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা নির্বাহী হাকিম, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদেরও সাক্ষী করা হয়েছে।
এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, তখন রাত ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আর কোনো উপায় ছিল না। বিজিবি গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল। গুলি চালানোর ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে গুলি করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আজিজ আহমেদ। বিজিবির সদস্যদের জন্য মোবাইলভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মঠবাড়িয়ায় মঙ্গলবারের ওই সহিংসতায় নিহত হন ৫ জন। আহত হন ২০ থেকে ২৫ জন। ঘটনা তদন্তে ইতিমধ্যেই পুলিশ ও প্রশাসন দুটি কমিটি গঠন করেছে। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও সাধারণ জনতার দাবি, জনতার ওপর সরাসরি গুলি না করে কাঁদানে গ্যাসের শেল বা অন্য কিছু দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যেত।
মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র রফিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিন জনতার ওপর সরাসরি নৃশংসভাবে গুলি চালানো হয়েছে। এখন উল্টো ১ হাজার ৩০০ লোকের বিরুদ্ধে মামলা হলো। পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, কোনো সাধারণ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন।’
জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হলেও তদন্তে ওই ঘটনায় জড়িতদের নাম বের হয়ে আসবে। কাজেই নিরপরাধ মানুষ বা গ্রামবাসীর আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।’
পুলিশের মামলায় সরকারি কাজে বাধা, সরকারি কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ভাঙচুর, ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২২ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে সাফা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ফল ঘোষণা করে ব্যালট বাক্স নিয়ে বের হওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা আসামিরা রামদাসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ করে নির্বাচনী জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আর্মড পুলিশ ১০টি শটগানের ফাঁকা গুলি করে। পুলিশও একটি গুলি ছোড়ে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে রাত সাড়ে আটটায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী জিয়াউল বাসেত লিখিতভাবে গুলির নির্দেশ দেন। তখন বিজিবির চারজন সদস্য চায়না রাইফেল দিয়ে ২৯টি গুলি ছুড়লে আসামিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নির্বাচনী জিনিসপত্র জমা দিয়ে আসার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে তিনজনের লাশ দেখতে পায়। এ ছাড়া বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুজন মারা যান।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন দিনমজুর বেলাল মোল্লা, কলেজছাত্র সোলায়মান তালুকদার, বেসরকারি চাকরিজীবী সোহেল মাতুব্বর ও শাহাদাত হোসেন এবং অটোরিকশাচালক কামরুল ইসলাম মৃধা। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হাফিজুর, ইয়াছিন, মুসা, রাহাত, সুমন মাতুব্বর, বাদল ও ইমাম বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।
পুলিশের দায়ের করা মামলায় দেশি অস্ত্র, রামদা—এসব নিয়ে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ধানীসাফা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। আমার লোকজন শুধু বাতিল করা ৭৪৬ ভোট বৈধ করার দাবিতে শান্তিপূর্ণ অবরোধ করে। কোথাও জনতা কোনো হামলা চালায়নি। বরং প্রশাসন বাড়াবাড়ি করে জনগণকে গুলি করে এখন তাদেরই আসামি করছে।’
এ ঘটনায় পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু আশ্রাফ বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। তাতে কেন, কীভাবে ঘটনা ঘটল, কার ভূমিকা কী ছিল, সেগুলো উঠে আসবে।’
প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান পিরোজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. মানিকহার রহমান বলেন, ‘২৭ মার্চ আমরা মঠবাড়িয়ায় গিয়ে লোকজনের সাক্ষ্য নেব। যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.