বিদ্যা !

Spread the love

শরিফুল হাসান

বিদ্যা মানুষকে বিনয়ী করে, বিনয় দ্বারা জগৎ জয় করা যায়- স্কুলে থাকতে এমন ভাবসম্প্রসারণ হয়তো আমরা অনেকেই পড়েছি। এই যে বিদ্যা বিনয় এই কথাগুলোর মর্মার্থ গভীর। এ প্রসঙ্গে ধর্মতত্ত্ববিদ, বিশেষ করে হাদিস শাস্ত্রের বিশিষ্ট বিদ্বান ইমাম ইমাম ইবনে আল রাজাব রহিমাহুল্লাহর একটা কথা বলতেই হয়।

ইবনে রাজাব বলেছেন, জ্ঞানের প্রথম স্তরে যে প্রবেশ করবে, সে অহংকারী হয়ে উঠবে, যেন সব কিছুই সে জেনে ফেলেছে। দ্বিতীয় স্তরে প্রবেশ করার পর, সে বিনয়ী হবে। আর আর তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করার পর সে নিজের অজ্ঞতা উপলব্ধি করতে পারবে।তৃতীয় স্তর তো পরের কথা, সারাজীবন ধরে একটু আধটু পড়তে গিয়ে, পড়াতে গিয়ে বুঝেছি, আসলে কিছুই জানি না। নিজেকে রোজ মূর্খ লাগে। রোজ নিজের অজ্ঞতা রোজ বুঝতে পারি। মনে হয় কতো কিছু জানি না, অথচ কতো কিছু করার আছে মানুষের জন্য!

অথচ চারপাশে অনেক সময় দেখি শুধু অহঙ্কার আর ক্ষমতার বড়াই। পদে একটু বড় হলে, অর্থ বা অন্য কোন ক্ষমতা থাকলে আমরা নিজেদের অনেক বড় ভাবতে শুরু করি। দিনমজুর, ড্রাইভার বা অনেক সময় এক দপ্তরের লোক আরেক দপ্তরের লোকদের মানুষ মনে করি না। আমাদের নফস আমাদের বড়াই করতে শেখায়। একজনের চেয়ে আরেকজনকে সুপিরিয়র ভাবতে শুরু করি। নিজেকে মনে হয় মহাপন্ডিত। কারণ আমাদের জীবনে একটা দুটো দেশি বিদেশি সনদ আছে। একটা পদ বা ক্ষমতা আছে।

আমরা তাই নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করি। বিনয়ী হওয়ার বদলে আমরা তখন বড়াই করি।উল্টোদিকে সত্যিকারের পন্ডিতরা, সত্যিকারের মানুষেরা হন বিনয়ী। এ প্রসঙ্গে স্যার আইজ্যাক নিউটনের কথা বলতেই হয়। একাধারে তিনি ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রাকৃতিক দর্শনিক এবং আলকেমিস্ট।

অনেকের মতে, নিউটন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী। সেই নিউটন বলেছেন, কতটুকু কি করতে পেরেছি জানি না কিন্তু এই পৃথিবীর বিপুল জ্ঞানভান্ডার জানার ক্ষেত্রে আমি সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিশুর মত, যে শুধু সারাজীবন নুড়িই কুড়িয়ে গেল। সমুদ্রের জলরাশির মত বিশাল এই জ্ঞান আমার অজানাই থেকে গেল।চিন্তা করেন সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের একজন বলছেন তিনি পৃথিবীর বিপুল জ্ঞানভান্ডারের জানার ক্ষেত্রে সারাজীবন নুড়িই কুড়িয়ে গেলেন।

অথচ আমাদের একেকজনের ভাব দেখেন। আমাদের একটা চাকরি, একটু ক্ষমতার বদৌলতে অনেক সময় আশেপাশের মানুষকে মানুষ মনে করি না। এ প্রসঙ্গে আমি সবসময় নিজেকে একটা কথা বলি। আমার চেনা পরিচিতজন বিশেষ করে সহকর্মী ও ছাত্রদের একটা কথা বলি-আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে আকাশ ছোঁয়ার, কিন্তু বিনয়ে চোখ থাকতে হবে মাটিতে। অথচ আমরা করি উল্টো।

চারপাশে তাকিয়ে দেখেন, আমাদের স্বপ্নটা খুব ছোট থাকে, অর্থবহ কাজ করি না বললেই চলে ‌কিন্তু সামান্য অর্জনে অহংকারে পা যেন মাটিতে পড়ে না। সারাক্ষণ আমরা মেতে থাকি অন্যের গীবতে, পরশ্রীকাতরতায়।

খুব করে চাই ওপরওয়ালা আমাদের সত্যিকারের মানুষ করুন। কখনো অহঙ্কার বা ঔদ্ধত্য এলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে যেন বুঝতে পারি যে আমরা ভুল করেছি। আমরা যেন আরও বেশি বিনয়ী হবার চেষ্টা করি। মানুষকে সম্মান করি। শ্রদ্ধা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.