শরিফুল হাসান
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে আট হাজার স্মার্ট কার্ড ‘হারিয়ে’ গিয়েছিল সপ্তাহ খানেক আগে। সেই কার্ডগুলোই দালালেরা চড়া দামে বিক্রি করছে বলে জানতে পারেন বিএমইটির কর্মকর্তারা। ফাঁদ পেতে ধরার পর জানা গেল, ওই কার্ডগুলো চুরির সঙ্গে ব্যুরোর কিছু কর্মচারী জড়িত রয়েছেন।বছর তিনেক আগে বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য কম্পিউটার ম্যাগনেটিক চিপ-সংবলিত এই স্মার্ট কার্ড চালু করে সরকার। চাকরি নিয়ে বিদেশে যেতে এই কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় তৈরি এই কার্ডে বিদেশগামী শ্রমিকদের জীবনবৃত্তান্ত, কোন দেশে কী কাজে, কোন ভিসায় তাঁরা যাচ্ছেন ইত্যাদি তথ্য থাকত। এই কার্ড বিমানবন্দরের কম্পিউটারে দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একজন কর্মীর ছাড়পত্র বের হয়ে আসে। এর ফলে জাল পাসপোর্ট ও ভিসায় বিদেশে যাওয়া মোটামুটি বন্ধ হয়েছে। বিএমইটির কর্মকর্তারা জানান, কাকরাইলে বিএমইটির দুটি ভবন আছে। এর মধ্যে চারতলা নতুন ভবনে আগে স্মার্ট কার্ড থাকত। কিন্তু ওই ভবনের কল্যাণ শাখাসহ সব দপ্তর গত ২০ ফেব্রুয়ারি ইস্কাটনের প্রবাসীকল্যাণ ভবনে চলে যায়। এরপর স্মার্ট কার্ডগুলো বিএমইটির মূল ভবনের চারতলার স্টোরে আনা হয়। কিন্তু ১৪ মার্চ চাহিদা অনুযায়ী কার্ড আনতে গিয়ে কর্মকর্তারা জানতে পারেন, বিএমইটির ভান্ডারকক্ষ (স্টোর রুম) থেকে আট হাজার স্মার্ট কার্ড চুরি হয়েছে।কর্মকর্তারা জানান, ভান্ডারে মোট ৭৩ প্যাকেট কার্ড ছিল। প্রতি প্যাকেটে ছিল চার হাজার করে কার্ড। এর মধ্যে দুটি প্যাকেট চুরি হয়। সেদিনই এ ব্যাপারে রমনা থানায় মামলা করে বিএমইটি।গত কয়েক দিনে ব্যুরোর কর্মকর্তারা জানতে পারেন, বাজারে দালালেরা স্মার্ট কার্ড বিক্রি করছে। ব্যুরোর কয়েকজন কর্মকর্তা ছদ্মবেশে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন দালালদের সঙ্গে। এর মধ্যে একজন দালাল জানায়, সে কার্ড দিতে পারবে। তবে প্রতিটির জন্য ছয় শ টাকা দিতে হবে। ঠিক হয় বুধবার সকালে হোটেল রাজমণি-ঈশা খাঁর সামনে এসে কার্ড দেবে ওই দালাল।বিএমইটির কর্মকর্তা, গোয়েন্দা পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী যে দালাল কার্ড বিক্রি করতে আসে, তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আটক মোহাম্মদ ইমরান (২৪) জানান, বিএমইটির প্রশিক্ষণ শাখার কর্মচারী ফারুক হোসেন তাঁকে এই কার্ড দিয়েছেন। এরপর ওই কর্মচারীকেও আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক জানান, তাঁর সঙ্গে জড়িত বিএমইটির বহির্গমন শাখার কর্মচারী মনির হোসেন। এরপর বিকেলে তাঁকেও আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। রাতে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।বিএমইটির পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারুক এখানকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের ইলেকট্রিশিয়ান। একই সঙ্গে এমএলএসএসের কাজ করতেন। ফাঁদ পেতে তাঁকে আটক করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের কাছ থেকে আমরা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুরো চক্রকে বের করা হবে।’বিএমইটির কর্মকর্তারা জানান, এর আগেও একবার বিএমইটি থেকে স্মার্ট কার্ড চুরি হয়েছিল। চুরি যাওয়া এসব কার্ডে লেখার জন্য আলাদা করে প্রিন্টার রয়েছে দালালদের। তবে এই স্মার্ট কার্ড বিমানবন্দরের যন্ত্রে পড়া যায় না। এ ক্ষেত্রে দালালেরা পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে কেবল কার্ড দেখিয়ে চলে যায়। কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সিও এর সঙ্গে জড়িত।জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিত্রুদ্ধটিং এজেন্সিসের (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের শাস্তি হোক।’



