তথ্য ইউনিট চালু করেনি আড়াই হাজার এনজিও
শরিফুল হাসান
তথ্য অধিকার আইনের জন্য ওরাই আন্দোলন করেছিল। কিন্তু নিজেদের তথ্য দেওয়ার সময় যখন এল, তখন আর নির্দেশনা পালিত হলো না। বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তথ্য কমিশন নিজেই।জানা গেছে, প্রকল্প, উন্নয়নকাজসহ সার্বিক বিষয়ে যেকোনো তথ্য যেন সহজেই পাওয়া যায়, সে জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে (এনজিও) তথ্য প্রদান ইউনিট চালুর নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। কিন্তু দুই দফা নির্দেশনার পরও এনজিও ব্যুরোর অধীন আড়াই হাজার এনজিও তথ্য ইউনিট চালু করেনি। আর এ অবস্থার মধ্য দিয়েই তথ্য অধিকার আইন গেজেট হওয়ার এক বছর পার হলো গতকাল মঙ্গলবার।এনজিওবিষয়ক ব্যুরো সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মাত্র ৩০ থেকে ৩২টি এনজিও তথ্য ইউনিট চালু করেছে। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট বাকি আড়াই হাজার এনজিও তথ্য প্রদান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়নি।অন্যদিকে সরকারি অফিস-আদালতগুলোতে এ পর্যন্ত এক হাজার ৬০০ তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। যদিও তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ৭৯৫ জন কর্মকর্তার নাম পাওয়া যায়।এনজিওবিষয়ক ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ চূড়ান্ত হওয়ার পর আড়াই হাজারেরও বেশি এনজিওকে তথ্য প্রদান ইউনিট খোলার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু বেশির ভাগ এনজিও তাতে সাড়া দেয়নি। এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এনজিওগুলোকে আবার চিঠি দিয়ে দ্রুত তথ্য প্রদান ইউনিট খুলে একজন কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এনজিওগুলোর কাছ থেকে এখনো সেভাবে সাড়া মিলছে না।তথ্য কমিশনের সদস্য সাদেকা হালিম ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, তথ্য অধিকার আইনের জন্য আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল ৮০টি এনজিও। সবার সম্মিলিত চেষ্টাতেই তথ্য অধিকার আইন হয়েছিল। কিন্তু এটি চরম হতাশাজনক যে বেসরকারি সংস্থাগুলোই এখন তথ্য প্রদান ইউনিট খুলছে না। তিনি আরও বলেন, নিয়মিত তারা সভা-সেমিনার করে যাচ্ছে, অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই দিকটিতে নজর দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে কমিশন ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছে।এনজিও ব্যুরোর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, কয়েকটি এনজিও তথ্য প্রদান ইউনিট খুলে কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে ব্যুরোকে জানালেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই তথ্য ইউনিট চালু করেনি এবং ব্যুরোকে জানায়নি। বৃহত্ এনজিওগুলো বাদে বেশির ভাগ এনজিও এখনো তথ্য প্রদান ইউনিট খোলেনি।ব্যুরোর দেওয়া সর্বশেষ চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যুরোর নিবন্ধিত সব বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট সংস্থা তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ অনুযায়ী তথ্য সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষের অন্তর্ভুক্ত। আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী, তথ্যের অবাধ প্রবাহের দায়িত্ব পালন করবেন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একটি তথ্য ইউনিট গঠন করতে এবং একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যাতে বেসরকারি সংস্থাগুলো থেকে জনগণ তথ্য পায়। কাজেই ব্যুরোতে নিবন্ধিত সব এনজিওকে তথ্য প্রদান ইউনিট খুলে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।ব্যুরো সূত্র জানায়, কাগজে-কলমে এনজিওগুলো ১৯৯০-৯১ থেকে ২০০৯-১০ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এ দেশে মোট এক লাখ ৫২ হাজার ৩৬০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যুরোর মাধ্যমে দেশে এসেছে ২৯ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন কতটা হয়েছে, সে হিসাব নেই। এর অন্যতম কারণ এনজিওগুলোর তথ্যের দুষ্প্রাপ্যতা। এ কারণেই সরকার চায়, এনজিওগুলোর তথ্য সহজেই পাওয়া যায় এমন ব্যবস্থার। কিন্তু বেশির ভাগ এনজিও সে তথ্য প্রকাশ করতে চায় না।জানা গেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে নিবন্ধিত অন্যান্য এনজিওর অবস্থাও একই।তথ্য অধিকার আন্দোলনের প্রথম সারির বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সব বেসরকারি সংস্থাতেই তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে, যাতে এনজিওগুলোর ব্যাপারে যেকোনো তথ্য মানুষ জানতে পারে। গত সোমবার তথ্য অধিকার আইনের এক বছর উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এনজিওগুলোর সংগঠন ফেডারেশন অব এনজিও’স ইন বাংলাদেশের (এফএনবি) পরিচালক তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ বড় এনজিও তথ্য ইউনিট খুলেছে। হয়তো সব শাখায় খোলা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ছোট এনজিওগুলো আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তথ্য প্রদান ইউনিট চালু করতে পারেনি। তিনি মনে করেন, সব এনজিওরই তথ্য প্রদান ইউনিট চালু করা উচিত। এতে জনগণের সঙ্গে এনজিওগুলোর যোগাযোগ বাড়বে, স্বচ্ছতা আসবে।