শরিফুল হাসান
শুরু থেকেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পূর্বাভাস নিয়ে দোলাচলে ছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। কেন এমন হলো, জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘সিত্রাং বেশ অস্বাভাবিক আচরণ করেছে।
বারবার গতিপথ বদলানোর কারণে এটি কোথায় আঘাত করবে, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। আর রাত নয়টায় ভোলায় আঘাত হানার পর আবহাওয়া অধিদপ্তর বুঝতে পারলেও বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত হওয়ায় তা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে তুলতে দেরি হয়ে যায়।’উত্তরটা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না।
আচ্ছা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তার বাসাতেও কী বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট ছিলো না? আপনারা অনেকেই জানেন, ঘুর্নিঝড় সিত্রাংয়ের পূর্বাভাসের গরমিল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক ও স্বাধীন আবহাওয়াবিদ Mostofa Kamal Palash ।
তাঁর সঙ্গে প্রতিধ্বনি করে আমিও জবাব চেয়েছিলাম ফেসবুকে। প্রথম আলো আজ এ নিয়ে সিত্রাংয়ের পূর্বাভাসের গরমিল নিয়ে প্রশ্ন শিরোনামে একটা সংবাদ প্রকাশ করেছে। ওই সংবাদে আবহাওয়া অধিদপ্তরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শুরু থেকেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পূর্বাভাস নিয়ে দোলাচলে ছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কেন এমন হলো? উত্তর তো শুনলেন। সিত্রাং বেশ অস্বাভাবিক আচরণ করেছে। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত। আচ্ছা এসব খোড়া যুক্তি না দিয়ে বললেই হয়, ভবিষ্যতে আমরা সতর্ক থাকবো।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এবং দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে আমি একমত। তিনি বলেছেন, সিত্রাং আঘাত হানার সময় নিয়ে বিভ্রান্তি ও পূর্বাভাস না মেলার বিষয়ে আমি আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম।
তাদের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, আবহাওয়াবিদ্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জনবল কম আছে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে এমন ভুল থেকে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।’আমরাও তাই আশা করি।
আবহাওয়াবিদ্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে তারা আরো জানবেন সেই আশা করি। এই ঘটনায় বিশেষ ধন্যবাদ মোস্তফা কামাল পলাশ ভাইকে। ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের আবহাওয়া দপ্তর, রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি গণমাধ্যমে সিত্রাংয়ের বিষয়টা জোর আলোচনায় এসেছে গত ২-৩ দিন। অথচ মোস্তফা কামাল পলাশ ৮ অক্টোবর থেকে গত দুই সপ্তাহ ধরে অব্যাহতভাবে ঝড়ের বিষয় পর্যবেক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন এবং তাঁর প্রায় সব কথাই পুরোপুরি সঠিক হয়েছে।
আমি নিজে তাঁর লেখাগুলো শেয়ার করেছি। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমার শুধু প্রশ্ন একটাই, একজন ব্যক্তি যদি স্যাটেলাইট আর নানা সূত্র ধরে সব সঠিকভাবে বলতে পারেন আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তর কেন পারবে না? তাই হোক পলাশ ভাই একা একজন মানুষ যেভাবে কাজ করেছেন, যেভাবে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন, দেশবাসীকে যেভাবে অব্যাহতভাবে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছেন সেজন্য এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
দেশের সব ক্ষেত্রে যদি এমন লড়াই অব্যাহত থাকতো! পলাশ ভাই আপনার সাথে পুরোপুরি একমত, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় যত ঘণ্টা আগে পূর্বাভাস দেওয়া যাবে, মানুষ তত বেশি প্রস্তুতি নিতে পারবে। আশা করছি আমাদের নীতি নির্ধারক ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে আরো দায়িত্বশীল হবেন। তাতে আরো বেশি সম্পদ ও প্রাণ বাঁচবে। ওপরওয়ালা আমাদের এই বাংলাদেশকে ভাল রাখুক। ভালো থাকুক প্রতিটা মানুষ।