জনশক্তি রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরা এবার মন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলেন
শরিফুল হাসান
জনশক্তি রপ্তানি খাতে ধস এবং অচলাবস্থার জন্য বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীকে দায়ী করে তাঁর পদত্যাগ চাইছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাদের দাবি, একের পর এক বাজার বন্ধ হয়ে গেলেও মন্ত্রী কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। উল্টো বেসরকারি খাতের ব্যবসা বন্ধ করার চেষ্টা করছেন তিনি।ব্যবসায়ীদের মত হচ্ছে, এ অবস্থান থেকে সরে না এলে মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশে লোক পাঠানো বন্ধ ও রাস্তায় নামার হুমকিও দিয়েছেন তাঁরা।তবে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘জনশক্তি রপ্তানি খাত ধ্বংসের জন্য এই ব্যবসায়ীরাই দায়ী। তাঁরা আমাকে কমিশন দিয়ে তাঁদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চান। কিন্তু রাজি না হওয়ায় আমার পদত্যাগ দাবি করছেন।’২০০৭ সালে আট লাখ ৩২ হাজার ৬০৯ জন এবং ২০০৮ সালে আট লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জন বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে গিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে এই সংখ্যা কমে হয় চার লাখ ৭৫ হাজার ২৭৮। জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা ভেবেছিলেন, বিশ্বমন্দা কেটে গেলে এ সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু ২০১০ সালে জনশক্তি রপ্তানি আরও ৮৫ হাজার কমেছে।জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) দাবি, সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা ও যথাসময়ে পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত ও লিবিয়ার বাজার বন্ধ হয়ে আছে। ফলে জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নেমেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অতিরিক্ত অভিবাসন খরচের কারণেই সব সমস্যা। ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ কমাচ্ছেন না। এই খরচের টাকা তুলতে গিয়ে অতিরিক্ত সময় থেকে মালয়েশিয়ায় চার লাখ বাংলাদেশি অবৈধ হয়েছেন।জনশক্তি রপ্তানি খাতের সমস্যাগুলো নিয়ে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে গত বৃহস্পতিবার বৈঠকের আয়োজন করে বায়রা। ওই বৈঠকে উপস্থিত হাজার খানেক ব্যবসায়ী সব সমস্যার জন্য মন্ত্রীকে দায়ী করে তাঁর পদত্যাগের দাবি জানান। তাঁরা আরও বলেন, সরকারিভাবে ব্যবসা চলতে পারে না। এটি শ্রমবাজার ধ্বংসের জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র।বায়রার সভাপতি আবুল বাসার ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে বায়রার সদস্যরা যখন মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছিলেন, তখন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ বারবার তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বায়রার সভাপতি আবুল বাসার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনশক্তি রপ্তানি খাতে এখন চরম অচলাবস্থা। অনেক বাজার বন্ধ। মালয়েশিয়ায় ৫৫ হাজার ভিসা বাতিল হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। তাঁদের রোজগার বন্ধ। কাজেই সরকারিভাবে লোক পাঠানো হবে শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে কেউ কেউ মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করেছেন। কিন্তু আমরা ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষে যেতে পারি না। তাই আমি ও আজাদ ভাই তাঁদের শান্ত করেছি।’অতিরিক্ত অভিবাসন খরচের কারণেই তো সরকার এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বায়রার সভাপতি বলেন, ‘সরকার আমাদের খরচ ঠিক করে দিক। তারা যে খরচ নির্ধারণ করে দেবে, সেটা যদি বায়রার কোনো সদস্য না মানেন, তাহলে তাঁর সদস্যপদ বাতিল করা হবে।’প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৪ হাজার টাকা। কিন্তু বায়রার সদস্যরা দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে লোক পাঠিয়েছেন। খরচের টাকা তুলতে না পেরে সেই লোকজন এখন চরম দুর্ভোগে আছেন। এসব কারণেই এবার সরকারিভাবে লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।এ মুহূর্তে আপনারা কী করবেন, জানতে চাইলে বায়রার সভাপতি বলেন, ‘এই খাতে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা এক হাজার ১০০ রপ্তানিকারক আছেন। সরকার যদি ব্যবসা করে, তাহলে এই ব্যবসায়ীরা কোথায় যাবেন? কাজেই সরকার যদি তার অবস্থান থেকে না সরে, তাহলে আমরা বিদেশে লোক পাঠানো বন্ধ করে দেব।’বায়রার এসব দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে সবকিছু কিনতে চান। তাঁরা আমাকেও কিনতে চান। না পেরে এখন আমার পদত্যাগ চাইছেন। কিন্তু এই খাতকে বাঁচাতে হলে, মানুষকে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে হলে সরকারিভাবে লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া চলবে। তাঁদের কোনো অন্যায় দাবি সরকার মেনে নেবে না।’বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণসচিব জাফর আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বাজার চালুর একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এখন সরকারিভাবে লোক পাঠিয়ে যদি একটি আস্থার সম্পর্ক করা যায়, তাহলে বাজারটা ধরে রাখা যাবে। কজেই সরকার কারও অনৈতিক দাবির মুখে মাথা নত করবে না।



