শরিফুল হাসান
বিদেশে কোনো বাংলাদেশি কর্মী মারা গেলে তাঁর লাশ দাফন বাবদ ৩৫ হাজার টাকা করে পান মৃতের স্বজনেরা। কিন্তু একটি মাত্র চেক বইয়ের অভাবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না। ফলে স্বজনহারাদের দুর্ভোগ লাঘব হচ্ছে না। লাশ দেশে আসার পর পরই এই টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তথ্যপ্রমাণসহ নানা জটিলতার কারণে আগে টাকা পেতে অনেকের মাস এমনকি বছরও পেরিয়ে যায়। এই ভোগান্তি দূর করতে গত মাস থেকে বিমানবন্দরে লাশ পৌঁছানোর পর পরই স্বজনদের দাফন বাবদ পাওনা টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়ে চেক বই নিয়ে।জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কর্মকর্তারা বলছেন, বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও সোনালী ব্যাংকের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাখা থেকে এমআইসিআর (মেশিন ইংক কোড রিডেবল) চেক বই ইস্যু করছে না। তাই লাশের স্বজনেরা বিমানবন্দর থেকে টাকা পাচ্ছেন না। আর ব্যাংক বলছে, তাদের চেক বইয়ের সংকট। তাই চেক বই দেওয়া যাচ্ছে না। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কল্যাণ শাখার মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়। এ জন্য মৃতের উত্তরাধিকারীদের ওয়ারিশ সনদ প্রমাণ করতে হয়। এরপর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে (ডিইএমও) আবেদন করতে হতো। এরপর সেই প্রতিবেদন আসত বিমএইটিতে। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে লাশের স্বজনদের দাফনের টাকা পেতে দীর্ঘ সময় লাগত। এ নিয়ে বিমানবন্দর, বিএমইটি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুষ-বাণিজ্যও চলত। এই ভোগান্তি দূর করতেই বিমানবন্দর থেকেই লাশের স্বজনদের দাফনের টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় গত ১১ এপ্রিল। বিএমইটির পরিচালক (কল্যাণ) মোহাম্মদ কাওসার প্রথম আলোকে জানান, সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য সোনালী ব্যাংকের বিমানবন্দর শাখার নির্দিষ্ট হিসেবে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জমা করা হয়। কথা ছিল যখনই লাশ আসবে তখনই লাশের পরিবারকে ওই টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু ব্যাংক বিএমইটিকে এমআইসিআর চেক বই দিতে পারছে না। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও ব্যাংক একটি চেক বই ইস্যু করতে পারছে না। ইতিমধ্যে প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেছে।এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সোনালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আলী মর্তুজা প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকে এমআইসিআর চেক বইয়ের সংকট আছে। প্রধান কার্যালয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কবে নাগাদ চেক বইগুলো পাওয়া যেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেষ্টা চলছে। যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের চেক বই দেওয়া হবে। বিএমইটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে গড়ে দুই শ লাশ আসে। দরিদ্র এসব পরিবারের স্বজনদের অনেক সময়েই দাফন করার মতো কোনো অর্থও থাকে না। তাই টাকা পেতে দেরি হলে তাঁদের অনেক দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিএমইটির মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, চেক বইয়ের অভাবে সরকারের একটি ভালো সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাচ্ছে না। বিষয়টি দুঃখজনক। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এ ব্যাপারে একটু উদ্যোগী হওয়া দরকার।