শরিফুল হাসান
অবশেষে পুনরায় উন্মুক্ত হচ্ছে সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই শ্রমবাজারে আড়াই বছর ধরে লোক পাঠানো বন্ধ ছিল। তবে সৌদি আরবের একটি দৈনিক পত্রিকায় গতকাল সোমবার প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, দেশটিতে বাংলাদেশের বাজার পুনরায় চালু হচ্ছে। বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবে লোক নিয়োগের বিষয়টি নির্ধারণ করে সৌদি ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট কমিটির (সানারকম)। গত রোববার সানারকমের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কমিটির চেয়ারম্যান সাদ নাহার আল বাদ্দাহ। সানারকমের সাবেক চেয়ারম্যান ও সৌদি ভিসা কাউন্সিলের সদস্য ওয়ালিদ আল সোয়াইদানও রয়েছেন এই প্রতিনিধিদলে। আট সদস্যের এই প্রতিনিধিদলে সৌদি ব্যবসায়ী সমিতির একজন সদস্যও আছেন। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতি আবুল বাশার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বায়রার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অত্যন্ত হূদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সৌদি প্রতিনিধিদল নিরাপত্তাকর্মী, বাগানশ্রমিক, চালক ও গৃহকর্মী—এই চারটি শ্রেণীতে লোক নিতে চায়। প্রতিনিধিদল শ্রমিক নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছে। আজ মঙ্গলবার এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হওয়ার কথা। কত সংখ্যক লোক সৌদি আরবে যেতে পারবেন, জানতে চাইলে আবুল বাশার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে প্রতি মাসে অন্তত ১০ হাজার লোক নেবে বলে আমরা ধারণা করছি।’ এদিকে সৌদি আরবের জনপ্রিয় দৈনিক দার আল হায়াতও সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগের বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। ওই সংবাদে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন পর সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ফের চালু হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক (বিএমইটি) খোরশেদ আলম চৌধুরী গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার বাজার চালু হবে বলে আমরা আশা করছি।’ তবে এ ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। সৌদি আরবে ২২ লাখের মতো বাংলাদেশি আছেন। বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত কতজন বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছেন, সে হিসাব সংরক্ষিত আছে বিএমইটি এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। ওই তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ২৫ লাখ ৬০ হাজার লোক বিদেশে গেছেন। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের শুরুতেই সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়া বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়া রাতারাতি কমিয়ে দিলেও হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র নেপাল ও ভারত থেকে লোক নিতে থাকে সৌদি আরব। কেবল জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ নয়, সৌদি আরব বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজের অনুমতিপত্রও (আকামা) বদল করতে দিচ্ছিল না। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেখানকার কর্মকর্তাদের। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের এপ্রিলে সৌদি আরব সফর করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশটির বাদশাহসহ ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী কয়েক দফায় বলেন, সৌদি আরবের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেলেও দেশটি বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করছিল না। ফলে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি গত দুই বছর অর্ধেকে নেমে এসেছে। বায়রার সভাপতি আবুল বাশার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সৌদি আরব বাংলাদেশের শ্রমবাজার। এই বাজারটি চালুর জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছি। আশা করছি, বাজারটি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের শ্রমবাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’



