শরিফুল হাসান
২৮তম বিসিএসে প্রায় এক হাজার ৩০০টি পদ বাড়ছে। এক হাজার ৭২০টি শূন্য পদের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হলেও এই সংখ্যা এখন তিন হাজার ১৬ হচ্ছে। এর মধ্যে সাধারণ ক্যাডারে পদের সংখ্যা হবে প্রায় সাড়ে সাত শ। আগে এই সংখ্যা ছিল পৌনে ছয় শ।সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) একাধিক কর্মকর্তা পদ বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশের দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আগামী মাসে এই ফল প্রকাশ করা হতে পারে বলে পিএসসি সূত্র জানায়।সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ ক্যাডারের মধ্যে পুলিশের সংখ্যা বাড়ছে। আগে এই সংখ্যা ছিল ১৫০, বেড়ে হচ্ছে ২০০। বাড়ছে শুল্ক ও তথ্য ক্যাডারের পদের সংখ্যা। কারিগরি ক্যাডারের মধ্যে কৃষি ও চিকিত্সায়ও পদসংখ্যা বাড়ছে। তবে প্রশাসন ক্যাডারে আপাতত পদের সংখ্যা বাড়ছে না। ২০০৮ সালের ২২ জানুয়ারি ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার প্রজ্ঞাপন জারি করে পিএসসি। ওই বছরের নভেম্বরে প্রাথমিক বাছাই, ২০০৯ সালের প্রথমার্ধে লিখিত এবং বছরের শেষে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এখনো চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়নি। ফল প্রকাশের দাবিতে চাকরিপ্রার্থীরা প্রতিদিন পিএসসিতে যোগাযোগ করলেও সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর মিলছে না। গতকালও পিএসসির সামনে মানববন্ধন করেছেন তাঁরা। এরই মধ্যে ২৯তম ও ৩০তম বিসিএসের প্রক্রিয়া চলছে। ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণ জানতে গতকাল পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছারউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। ওই বিসিএসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য এহসান শামীমও এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। তবে পিএসসির একজন সদস্য বলেছেন, সরকারের কিছু নির্দেশনা এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় ফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। এর মধ্যে কোটা সংরক্ষণ নিয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটাগুলো খালি রাখা হবে, নাকি মেধা অনুযায়ী পূরণ করা হবে, সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পায়নি পিএসসি। এ ছাড়া চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের কথাবার্তাও চলছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত বিধিমালা পিএসসিতে আসেনি। এসব কারণে ফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। ২০০৮ সালের ২৮ নভেম্বর ২৮তম বিসিএসের প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা হয়। এতে ৯৮ হাজার ৬৫৯ জন অংশ নেন। উত্তীর্ণ হন ১১ হাজার ৭৭৮ জন। আর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন পাঁচ হাজার ৮৮১ জন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে সাধারণ ক্যাডারে দুই হাজার ৪২৬ জন, টেকনিক্যাল ক্যাডারে এক হাজার ৫৯৩ জন এবং সাধারণ ও টেকনিক্যাল উভয় ক্যাডারে এক হাজার ৮৬২ জন নির্বাচিত হন। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর থেকে তিন মাস ধরে তাঁদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। পিএসসির একটি সূত্র জানিয়েছে, পদ বাড়িয়ে তিন হাজার ১৬টি করায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বেশির ভাগেরই এবার চাকরি হবে। এ ছাড়া সরকার বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদগুলোতে নিয়োগের কথা ভাবছে। সেটি হলে ২৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় সব প্রার্থীরই চাকরি হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার বেশির ভাগ কার্যক্রমই জরুরি অবস্থার সময় শেষ হয়েছে। পিএসসি মনে করছে, কোনো রাজনৈতিক তদবির ছাড়া এই পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তাই পিএসসি চাইছে, এই পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ সবাই নিয়োগ পাক। ফল প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন: ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ও পদসংখ্যা আরও বাড়ানোর দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার সকালে পিএসসির সামনে মানববন্ধন করেছেন শতাধিক প্রার্থী। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন চলে। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা প্রথম আলোকে জানান, আড়াই বছর ধরে ২৮তম বিসিএসের প্রক্রিয়া চলছে। পাঁচ মাস আগে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়নি। কবে হবে, সে ব্যাপারেও কিছু বলা হচ্ছে না। তাই তাঁরা মানববন্ধন করেছেন। ২৮তম বিসিএসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য এহসান শামীম এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশের আশ্বাস দেন। পরে কয়েকজন প্রার্থীকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। দুজন প্রার্থী প্রথম আলোকে জানান, মে মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তাঁদের। পদসংখ্যাও বাড়বে বলে তাঁদের জানানো হয়েছে।